করোনা ভাইরাস সৃষ্ট কোভিড-১৯ এর সাত সতেরো!!
প্রতিরোধ,প্রতিকার ও চিকিৎসা পদ্ধতি।
তথ্য সংকলনে: কৃষিবিদ ড. মো. আখতারুজ্জামান
(➽প্রিয় সুধী, আমি সবিনয়ে বিনম্র ক্ষমা চেয়ে নিয়ে জানাচ্ছি যে, আমি পেশায় কোন চিৎিসক নই; আমি একজন কৃষিবিদ । বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনা ভাইরাসে গোটা বিশ্ববাসী আজ আতঙ্কিত! আমি নিজেও সেটা থেকে মুক্ত নই; তাই একজন সচেতন মানুষ হিসেবে বিবেকের তাড়নায় অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়াতে ভেসে বেড়ানো অসংখ্য তথ্য থেকে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত কিছু তথ্য সংকলন করেছি মাত্র। ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিলে সেটা পরিবর্তন ,পরিবর্ধন ও সংশোধন করে এখানে প্রকাশ করা হবে। এছাড়া কোভিড-১৯ এর প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্পর্কিত কোন নতুন খবরাখবর পেলে সেটা এখানে তাৎক্ষণিকভাবে সংযুক্ত করা হবে।) ।
পৃথিবীতে মনুষ্য বসতির পর থেকে সময়ে সময়ে দেশ জাতি গোষ্ঠী ভেদে মহামারি তার সর্বশক্তি নিয়ে হানা দিয়েছে মানব জাতির উপরে। স্মরণকালের মধ্যে মানবাতিহাসের সবচে বড় মহামারি ছিল স্পানিশ ফ্লু, যার প্রভাবে এই বিশ্বের এক এক চতুর্থাংশ মানুষ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিল বিশ্বের ৫-১০ কোটি তাজা প্রাণ।
বিশ্ব পরিমণ্ডলে মহামারি ছিল আছে থাকবে। কিন্তু বিজ্ঞানের উল্লম্ফনের ও উৎকর্ষতার এই ক্ষণে মহামারিতে এহেন মৃত্যুর মিছিলকে মেনে নিতে কষ্ট হয়। বিশ্বের মহাশক্তিধর রাষ্ট্র মার্কিনীদেরকে মহা নাকাল করে চলেছে এই নভেল করোনাভাইরাস এবং তদীয় সৃষ্ট কোভিড-১৯ ।
গেল বছরের শেষদিকে চীনের উহান থেকে উৎপত্তি হওয়া করোনা ভাইরাস থেকে সৃষ্ট ঘাতকব্যাধি কোভিড-১৯ থেকে পরিত্রাণের জন্যে এখন পর্যন্ত সঠিক ও সুনির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা পদ্ধতি বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে পারেননি। শুরু থেকেই করোনাভাইরাস নিয়ে নানান ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান এবং এটাকে নিয়ে অবহেলা করবার কারণে শেষতক এটার ভয়াবহতা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে সেটা এখন বেশ করে বুঝতে পারছেন তাবদ বিশ্বের বিবেকবান সব মনুষ্যকুল।
মানুষ মারা যাবে জেনেই তো মানুষ বেঁচে থাকে, সকল কাজ করে যায় সাবলীলভাবে কিন্তু মৃত্যুর এই করুণ আর্তিকে মেনে নেয়া বড্ড কঠিন। ক্ষুদ্র একটা ইলেকট্রন মাইক্রোসকোপিক জীব ও জড়ু বস্তুর মধ্যবর্তী সত্বার কী ভয়ঙ্কর আর দোর্দণ্ড দাপট! যার ছায়া নেই, কায়া নেই সেই অজ্ঞাতকুলশীল মানবের জাতশত্রু এক্কেবারে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রাচ্য থেকে প্রতীচ্য সবখানে! আশরাফ আফতাব, কোন কিছুর বাছ বিছার নেই।
কী অপরিসীম শক্তিমত্তা!
ঢাকা দিল্লি হিল্লির প্রখ্যাত হাসপাতালে কোভিডের কোন চিকিৎসা নেই। ইয়াদ আলী মাস্টারের পাঠশালার শেষ ক্লাস অব্দি না পৌঁছানো, টাকভর্তি কোয়াক সফদার ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্রের সাথে মাউন্ট এলিজাবেথ বা বামরুনগ্রাদ ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালের ব্যবস্থাপত্রের তেমন কোন ইতরবিশেষ নেই।
অতি ক্ষুদ্রাকার মানবশত্রুর সাথে আমাদের এমন আত্মসমর্পণ যেন বাঘের গালে ছাগলের মধু চুম্বনেরই নামান্তর!
তবে করোনা আমাদেরকে এখনো কিছুটা করুণা করে চলেছে। রক্ষে এখন অব্দি করোনা মাত্র শরীরের তিনটা অঙ্গ দিয়ে আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। যদি করোনা বাতাসে ভেসে এসে ত্বক ভেদ করে শরীরে অনুপ্রবেশ করতো, তাহলে কী ভয়ঙ্কর কাণ্ডটাই না ঘটতো!!
পৃথিবীর সবচে শক্তিশালী সায়ানাইড বিষের বিষক্রিয়া একে দমাতে পারছে না কিন্তু এক ফোঁটা ক্ষারীয় বা ব্লিচিং পানি বা এ্যালকোহলের আঘাত সইতে পারেনা বলেই কিঞ্চিৎ রক্ষে, নইলে তো বিপদ আরো ভয়াবহ হতো! সুতরাং এখানেও করোনা আমাদের উপরে করুণা করছে বৈ কী!
করোনার এতটুকু করুণা আমাদের উপরে থাকলেও সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ আমাদেরকে এতটুকু করুণা করছে না। এই দুই পা ওয়ালা সৃষ্টির সেরা জীব যদি নিজেদের সাথে তথাকথিত সেরা জীবের মত ব্যবহার না করতো তাহলে বৈশ্বিক করোনা সংকট এতটা ঘণীভূত হতো না।
আপনাকে করোনায় ধরেছে ভালকথা, আপনার দেহে সেটা ২১ দিনের বেশি বাঁচতে পারবে না, অন্যকে আঘাত হানতে পারবে না, সেটা এমনিতেই নিঃশেষ হয়ে যাবে যদি আপনি ঐ ২১দিন কারুর সংস্পর্শে না আসেন। বলা চলে,এক্ষেত্রেও করোনা আপনাকে আমাকে কিঞ্চিৎ করুনা করেছে কিন্তু আপনি আমি কী করে চলেছি?
কোন কিছুর তোয়াক্কা নেই; যেমন খুশি তেমন করে বেড়াচ্ছি!
তাহলে আমরা, কিসের আশরাফুল মাখলুকাত?!
আমরা তো সৃষ্টির নিকৃষ্ট জীব!!
আমরা সাধারণভাবে ধর্মভীরু মানুষকে নীতি আদর্শের মূর্ত প্রতীক বলে মনে করি, কিন্তু এসব তথাকথিত ধর্মজ্ঞানীদের নিয়ে হয়েছে আরেক মহাবিড়ম্বনা। উনারা সবকিছুকে সৃষ্টিকর্তার উপরে ছেড়ে দিয়ে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে খুব রিলাক্স মুডে আছেন এই ভেবে যতদিন আয়ু আছেন, ততদিনই বাঁচবো; সুতরাং সো হোয়াট, ওসব করোনা ফরোনায় কিছু হবে না।
হ্যাঁ একজন মুসলমান হিসেবে এমন ধর্ম্মকথাকে তো অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু যদি বলি আল্লাহপাক রোগব্যাধি দিয়েছেন আবার সেটার চিকিৎসাও তো তিনিই বাৎলে দিয়েছেন। তা না হলে অতি ধর্মপ্রাণ মানুষ রোগাক্রান্ত হলে কেন ডাক্তারের দারস্থ হন?
আবার এটাও তো ধর্মেরই কথা যে, কর্মগুণে আর কর্মদোষে মানব সন্তানের আয়ু বেশি বা কম হয়ে থাকে।
করোনা এখন জাতীয় নয় বৈশ্বিক মহামারি; কেউ আবার বলছেন অতিমারি। তাই এই মহামারি ও অতিমারিতে কোন ‘মানিক পীরের’ দোহায় সেখানে খাটছে না।
করোনা তো আমাদেরকে আস্ফালন করে বলছে, ‘এসো, আমার সাথে লড়াই করো! একদম বিগ ফাইট! হয় বাঁচবে নইতো মরবে! বেশি নয় সর্বোচ্চ ২১ দিন খেলবো; অতঃপর গেম ফিনিশ। মরলে শহীদ হবে, বাঁচলে গাজী!
তাই বলে কি আপনি করোনার এমন বাগাড়ম্বরে সাড়া দিয়ে ওর গালে চুম্বন দিয়ে নিজের পৌরুষত্বকে প্রমাণ করবেন, নাকি ওর থেকে দূরে থাকবেন?
বিশ্বের সব শক্তি, সব জ্ঞান বিজ্ঞানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে করোনা এগিয়ে চলেছে একই মাত্রায় একই গতিতে!
জানিনে, কলিযুগে এসব কিসের আলামত?
এমন বৈশ্বিক সংকট তবে কি সৃষ্টিকর্তার অসীম শক্তিময়তার সতর্ক বার্তা?
নাকি আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে অন্তসারশূণ্য প্রমাণ করা?
নাকি ভিন্নগ্রহের প্রাণী এলিয়েনের কারসাজির মাধ্যমে আমাদের অসহায়ত্বের কথা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া?
নাকি প্রকৃতির কোন বিশাল প্রতিশোধ আমাদের উপরে?
ইত্যাকার নানান সব প্রেডিকশনের কথা আমাদের মন মাঝে উদিত হতেই পারে, তবে এসবই আমাদের অনুমান নির্ভর ধারণা মাত্র; প্রকৃত সত্যিটা আমাদের সবারই এখন অব্দি অজানা!
ইতিহাসের খেরোখাতা ঘেঁটে আমরা দেখেছি, প্রকৃতির উপর আঘাত হানলে প্রকৃতিও তার স্ব মহিমায় আমাদেরকে পাল্টা প্রতিঘাত করতে এতটুকু ছাড়ে না।
হালে চীনারা প্রামাণ্য দলিল উপস্থাপন করে বলেছেন, উড়ন্ত স্তন্যপায়ী প্রাণী বাদুড় থেকে করোনা মানব দেহে সংক্রমিত হয়েছে। ধরেই নিলাম, এটা সঠিক। প্রশ্ন হলো বাদুড়ের ভাইরাস কেন আমাদের দিকে ধেয়ে আসবে, তবে কি আমরা করোনা ভাইরাসের আবাস বাদুড়ের উপরে কোন আঘাত করেছি। ইকোলজি আমাদেরকে জানান দেয়, কোন প্রাণী বা অনুজীব যখন তার স্বীয় পোষকের স্বল্পতা উপলব্ধি করলে তখন তারা বিকল্প পোষকের সন্ধান করে সেখানেই আঘাত হানে! তবে কি এমন ধারায় করোনাভাইরাস বাদুড় থেকে মানবদেহে সংক্রমিত হয়েছে?
আবার এটা যে বাদুড় থেকেই এসেছে সেটা নিয়েও আবার বিতর্ক শুরু হয়েছে। ওদিকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জনাব ডোনাল্ড ট্রাম্প সাহেব তো বারবার বলে আসছেন এটা করোনা ভাইরাস নয়। এটা চীনা ভাইরাস। চীনারা জীবানু অস্ত্রের গবেষণা করতে গিয়ে এমন ভয়ঙ্কর ভাইরাসের সৃষ্টি করেছেন। যদিও চীনের বড় ভাইরাসের একটা গবেষণাগার চীনের উহানে রয়েছে।সে বিতর্কে আপাতত আমরা নাইবা জড়ালাম।
প্রকৃতি যে আমাদের উপরে প্রতিশোধ নিচ্ছে এমন একটা বার্তা পাওয়া গেল এবারের বিশ্ব ধরিত্রী দিবসে। কোন আন্দোলন, কোন আলোচনা ছাড়াই গেল ২২ এপ্রিল (২০২০ খ্রি.) গোটা বিশ্বে পালিত হলো ৫০তম বিশ্ব ধরিত্রী দিবস। পরিবেশবাদীরা স্বদর্পে জানালেন, এই বৈশ্বিক লক ডাউনের প্রাক্কালে পৃথিবী পার করছে সবচে কম দূষণমুক্ত সময়। করোনা আতঙ্কে বিশ্বজুড়ে বন্ধ কলকারখানা; চলছে না গাড়ী বিমান ও ট্রেন। এ সময় প্রকৃতিতে দেখা মিলছে বিরল প্রজাতির পাখি ও পতঙ্গের; সমুদ্রে আসতে শুরু করেছে অজানা সব জলজ প্রাণীর; কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস সহ বায়ুদূষণের মাত্রা কমেছে পঞ্চাশ শতাংশের মত।
করোনাভাইরাসে যখন বিপর্যস্ত পৃথিবী তখনই যেন প্রকৃতি ফিরতে শুরু করেছে আপন রূপে। সভ্যতা বিনির্মাণের নামে বছরের পর বছর নিষ্পেষণের শিকার পৃথিবী যেন ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে। তবে কি করোনাভাইরাস এমন বার্তাই দিয়ে গেল এবারের বিশ্ব ধরিত্রী দিবসে?!
বড়ই জটিল হিসেব!
পৃথিবীর ইতিহাস ও মানব সভ্যতা আমাদেরকে শিখিয়েছে, বৈশ্বিক মহামারি, মহাদুর্যোগ, মহাবিলুপ্তির একটা নির্দিষ্ট সময় পরে চূড়ান্ত বিচারে মানুষই জিতে যায়। মানুষ কখনোই হেরে যায় না। সুতরাং করোনা ঝড়ও একদিন থেমে যাবে। সে সময় নবরূপে আবার সজ্জিত হবে পৃথিবীর মানুষ্যকূল ও পৃথিবীর পরিবেশ ও প্রতিবেশ। আবার নতুন করে পাখির কুহুতানে ধরণী মুখরিত হবে; মানুষ দেখবে সুন্দর ভোরের সোনালী সূর্যোদয়; সৃষ্টি হতে পারে নতুন কোন সভ্যতার।তবে, ইতিহাসের পাতায় নাম লেখা থাকবে আজকের এই করোনা সংকটের। অনাগত দিনে আজকের ইতিহাস পড়ে সবাই অতীতের করোনা সংকটকে স্মরণ করবে কিন্তু ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে সামনে অগ্রসরমান হবে বলে মনে হয়না; এটাই যে, চিরায়ত সত্যের প্রতিলিপি মাত্র।
এ করোনা কাল থামবেই; কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে উত্তাল করোনার উম্মাতালের আঘাত একে একে সকল বিশ্ব সন্তানের গায়েই লাগবে। কেউ সেটা সহ্য করে টিকে থাকবে আর কেউবা ছিটকে পড়বে গিরিখাদের অতলান্তে। তাই করোনা কালের কবল থেকে কেউ নিষ্কৃত পাবে বলে ভরসা করতে পারছি না; যদি সৃষ্টিকর্তা তাঁর নিজ করুণায় আমাদের হেফাজত না করেন!
প্রথমদিকে করোনা ভাইরাস নিয়ে বিশ্বপরিমণ্ডলে একটু হেলাফেলার পরিণাম কি হয়েছে সেটা এখন বেশ বোঝা যাচ্ছে। বিশ্বের সবচে ক্ষমতাধর দেশ আমেরিকাকে কোভিড সবচে বেশি ধরাশায়ী করেছে। ট্রাম্প সাহেব ফেস মাস্কের বিপরিত অবস্থান থেকে সরে এসে নিজেও মাঝেমধ্যে ফেস মাস্ক পরিধান করছেন।
করোনার শুরুতে গোটা পৃথিবীর সব মানুষকে আতঙ্কিত করে প্রায় ঘরবন্দি করে ফেলেছিল। হোটেল, রেস্তরো, শিল্প প্রতিষ্ঠান, বিপনী বিতান, স্থলযান, উড়োযান, জলযান, অফিস আদালত কার্যত: সবকিছুই স্তব্ধ, স্থবির ছিল! এক দেশের সাথে আরেক দেশের ফিজিক্যাল কমিউনিকেশনও বন্ধ ছিল। করোনা মানুষকে অমানুষে পরিণত করেছে। একজন মানুষ এখন আরেকজন মানুষকে দেখে রীতিমত ভয় পাচ্ছে। সচেতন মানুষ পারতপক্ষে কেউ কারুর কাছে যেতে চাইছে না। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে আত্মীয় পরিজন সুজন বন্ধু বান্ধব গুনাগ্রাহী নিমিষেই দূরে চলে যাচ্ছে। “চাচা আপন প্রাণ বাঁচা” এমন আতঙ্কে করোনা আক্রান্ত হয়ে পরলোকে গমনরত ব্যক্তির শেষকৃত্যে আপনজন হাজির হচ্ছে না। জানাজার নামাজ পড়াতে চাইছেন না অনেক হুজুর। প্রেম পিয়াসী সঙ্গী তার ভালবাসার মানুষকে উষ্ণ আলিঙ্গনে হাগ করতে ও পাপ্পি দিতে ভয় পাচ্ছে! সারাজীবন দামি দামি খাবার খেয়ে, হোটেল রেস্তোরার ফাস্টফুড গ্রহণ করে শরীরে যে ইমিউন সিস্টেম তৈরি হয়েছে, সেটা কোন কাজে আসছে না, বরং সাধারণ খাবার খেয়ে দিনযাপন করা মানুষগুলো অনেকক্ষেত্রে অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। ভোজনরসিক মানুষ এবারে টের পেয়েছেন সাধারণ খাবারের যতসব অসাধারণ ও ভেষজ গুণের কথকতা!
ফাস্টফুড খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মাতোয়ারা না হলে যাদের পেটের ভাত হজম হয় সেইসব মানুষগুলো এখন দিনের পর দিন গৃহে অন্তরীন হয়ে সাধারণ খাবারই পরম পরিতৃপ্তিতে খেতে বাধ্য হয়েছেন। হালে বাস্তবতার নিরিখে মানুষ ঘর থেকে বের হওয়ার কারণে ক্রমাগত করোনায় আক্রান্তের হার বেড়ে যাচ্ছে, বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। সব বয়সী মানুষ মানুষ মারা গেলেও বেশি মারা যাচ্ছে ষাটোর্ধ মানুষ। মহিলা অপেক্ষা পুরুষ মারা যাচ্ছে বেশি করে। শরীরে যাদের কোন বড় ধরনের রোগ আছে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়েছে মূলত তারাই মারা যাচ্ছেন বেশি করে।ইতোমধ্যে আমাদের দেশে বেশ কিছু বরেণ্য মানুষ মারা গিয়েছেন।
অবস্থা যা চলছে তাতে কখনো কিভাবে এই করোনা ভাইরাস নির্মূল হবে সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোন প্রেডিকশন করা যাচ্ছে না। ধরে নিতে হবে একে একে সবাইকে করোনার সাথে যুদ্ধে নামতে হবে। এখন যুদ্ধে করোনাকে পরাস্থ করাটাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিৎ।
তাই আসুন আমরা করোনা ভাইরাস সম্পর্কে একটু জেনে নিই এবং কোভিড-১৯ এর যেন আমাদেরকে আঘাত হানতে না পারে তার জন্যে আমাদের করণীয় নির্ধারণ করি এবং আল্লাহ না করুন যদি করোনার কবলে পড়তেই হয় তাহলে মাথা ঠাণ্ডা রেখে তাকে কিভাবে পরাস্থ করা যায় সেবের কিছু উপায় জেনে নিই।
করোনা ভাইরাস কী?
করোনাভাইরাস এমন একটি সংক্রামক ভাইরাস – যা এর আগে কখনো মানুষের মধ্যে ছড়ায়নি। এই ভাইরাসে বিশ্বব্যাপী প্রাণহানি হচ্ছে লক্ষ লক্ষ মানুষের। ভাইরাসটির আরেক নাম এনসিওভি বা নভেল করোনাভাইরাস। এটি এক ধরণের করোনা ভাইরাস। করোনা ভাইরাসের অনেক রকম প্রজাতি আছে, কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ৬টি প্রজাতি মানুষের দেহে সংক্রমিত হওয়ার পূর্বেকার নজির ছিল; তবে নতুন ধরণের ভাইরাসের কারণে সেই সংখ্যা এখন থেকে এই সংখ্যা হলো ৭টি। ২০০২ সাল থেকে চীনে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া সার্স (সিভিয়ার এ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) নামে যে ভাইরাসের সংক্রমণে পৃথিবীতে ৭৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল আর ৮০৯৮ জন সংক্রমিত হয়েছিল। সেটিও ছিল এক ধরণের করোনাভাইরাস। নতুন এই রোগটিকে প্রথমদিকে নানা নামে ডাকা হচ্ছিল, যেমন: ‘চায়না ভাইরাস’, ‘করোনাভাইরাস’, ‘২০১৯ এনকভ’, ‘নতুন ভাইরাস’, ‘রহস্য ভাইরাস’ ইত্যাদি। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোগটির আনুষ্ঠানিক নাম দেয় কোভিড-১৯ যা ‘করোনাভাইরাস ডিজিজ ২০১৯’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ।
কোভিড-১৯ এর লক্ষণ কী:
রেসপিরেটরি লক্ষণ ছাড়াও জ্বর, কাশি, শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যাই মূলত প্রধান লক্ষণ। এটি ফুসফুসে আক্রমণ করে। সাধারণত শুষ্ক কাশি ও জ্বরের মাধ্যমেই শুরু হয় উপসর্গ, পরে শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত রোগের উপসর্গগুলো প্রকাশ পেতে গড়ে পাঁচ দিন সময় নেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ভাইরাসটির ইনকিউবেশন পিরিয়ড ১৪দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। তবে কিছু কিছু গবেষকের মতে এর স্থায়িত্ব ২৪দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। শুরুর দিকের উপসর্গ সাধারণ সর্দিজ্বর এবং ফ্লু’য়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ায় রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে দ্বিধাগ্রস্থ হওয়া স্বাভাবিক।
কিভাবে করোনা ভাইরাস থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা যায়?
করোনা ভাইরাস থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা বেশ কঠিন তবে অসম্ভব নয়। কিছু নিয়মনীতি কঠোরভাবে মনে চললে নিজেকে এটা থেকে মুক্ত রাখা সম্ভব। কিন্তু হালে এসে উচ্চ শিক্ষিত, অল্প শিক্ষিত, স্বশিক্ষিত, অশিক্ষিত সবার মধ্যেই কেমন যেন একটা ঢিলেঢালা ভাব, সুতরাং এটা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা খুব কঠিন। সাধারণ মানুষ মনে করছেন, এসবে তাদের কিছু হবে না। কেউ বলছেন এটা গরীবের নয়, ধনীদের রোগ; এসব নানান জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই আমাদেরকে চলতে হচ্ছে। যাহোক করোনা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার সম্ভাব্য উপায়গুলো নিচে বর্ণনা করা হলো। সবচে বড় কথা রোগ হলে চিকিৎসা করার থেকে রোগ যেন না হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
➽যতটা সম্ভব ঘরের বাইরে না যাওয়া এবং পরিবারের বয়স্ক ও অপ্রাপ্ত সদস্যদেরকে একটু কষ্ট করে হলেও ঘরবন্দি করে রাখার ব্যবস্থা করা।
➽ ঘরের বাইরে গেলে অপরিচিত মানুষ থেকে কমপক্ষে ৩ ফুট বা ২ হাত দুরত্ব বজায় রাখুন।
➽ সব সময় ফেস মাস্ক ও বাড়তি মেডিকেটেড চশমা ব্যবহার করুন। ফেসমাস্ক কোনটা ভাল কোনটা মন্দ সেটা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক আছে; তবে আমাদের সকলের পক্ষে N95 এর মত ব্যয়বহুল মাস্ক ব্যবহার সম্ভব নয়। তাছাড়া N95 মাস্ক ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্যে উপযোগি। সূতির তৈরি মাস্ক ভাল করে সাবান দিয়ে পরিস্কার করে নিলে বারবার ব্যবহার করা যায়। তবে কোন মাস্ক ৬-৮ ঘন্টার বেশি ব্যবহার করা ঠিক নয়। কমদামের মধ্যে সার্জিকেল মাস্ক ব্যবহার করা ভাল তবে সেটা কখনো ৬ ঘন্টার বেশি মুখ রাখা ঠিক হবে না। হালে চিকিৎসকেরা ডাবল মাস্ক ব্যবহার করতে বলছেন। তবে মাস্ক কখনো শতভাগ সুরক্ষা দিতে পারেনা। মাস্কের সাথে সাথে যদি ফেসশীল্ড ব্যবহার করা যায় তাহলে অনেকটাই ভাল। মাস্ক ব্যবহারের ব্যাপারে বিস্তারিত নিয়মকানুন এই লেখার পরের অংশ দেখুন।
➽অফিস রুমে প্রবেশ করে নিজের চেয়ার টেবিল, ফোন মোবাইল, কম্পিউটারের কীবোর্ড সবকিছুতে স্যনিটাইজার বা এ জাতীয় ডিসইফ্যাট্যান্ট ব্যবহার করুন।এ্যালকোহল প্যাড দিয়ে মুছে নিতে পারেন। মনে রাখবেন, স্যানিটাইজারের বিশুদ্ধতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। তাই স্যানিটাইজারের পরিবর্তে সাবান পানি বা ব্লিচিং পাউডার দেয়া পানি ব্যবহার করাই উত্তম।
➽ হাঁচি ও কাশির শিষ্টাচার মেনে চলুন। হাঁচি আটকাতে রুমাল, টিস্যু ও কনুই ব্যবহার করুন।
➽অপরিস্কার হাত দিয়ে কখনোই মুখমণ্ডল স্পর্শ করবেন না।
➽লিফটের বাটন, লাইট ফ্যানের সুইচ,দরজার হাতল বা লক, সিঁড়ির রেলিং এ হাত দিবেন না। আর হাত দেয়ার প্রয়োজন হলে হাত সাবান দিয়ে ভাল করে ধৌত করে নিন।
➽কলমের মুখ কামড়ানো, থুথু লাগিয়ে নথির কাগজ উল্টানো বা টাকা গোনা যাবে না।
➽বাইরের কোন খাবার না গ্রহণ করাই উত্তম।
➽পারতপক্ষে কাউকে বাসায় আমন্ত্রণ জানাবেন না এবং কারুর বাসায় যাবেন না।
➽ কাজের মানুষের যাতায়াত শীথিল করুন।
➽ এই সময়ে হেয়ার ট্রিমার ব্যবহার করে চুল ছাটানোর কাজ সম্পন্ন করুন। সেলুনে যাওয়া বন্ধ রাখুন।
➽অফিস সহায়ক হতে ব্যক্তিগত সেবা গ্রহণ যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।
➽বারবার সাবান দিয়ে ২০ সেকেণ্ড যাবত হাতের কনুই পর্যন্ত ধৌত করুন।
➽গণ বাথরুম ব্যবহারের ব্যাপারে সাবধান!
➽অকারণে কারুর রুমে যাবেন না।
➽হাতঘড়ি ও প্যান্টের বেল্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
➽পাবলিক পরিবহন যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।
➽বাইরে থেকে আসার পরে পরিধেয় বস্ত্র ভাল করে সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন, নইলে একদিন অব্দি নিরাপদে কোথাও রেখে পরে ব্যবহার করুন।
➽টাকা ধরার পরে হাত ভাল করে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করুন।
➽কোলাকুলি ও হ্যাণ্ডশেক থেকে দূরে থাকুন।
করোনার ড্রপলেট যেভাবে ছড়িয়ে থাকে?
➽করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির সময় তার নাক ও মুখ দিয়ে যে জলীয় কণা বা ড্রপলেট বাতাসে বের হয়ে আসে তার মাধ্যমে কোভিড-১৯ এর জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মাত্র এক বারের কাশি থেকেই বের হতে পারে এরকম ৩,০০০ ড্রপলেট । ড্রপলেটের এই কণা গিয়ে পড়তে পারে আরেকজনের গায়ে, কাপড়ে এবং আশেপাশের জিনিসের উপর। তবে কিছু ক্ষুদ্র কণা থেকে যেতে পারে বাতাসেও।
➽দেখা গেছে এই ভাইরাস মল-মূত্রের মধ্যে আরো বেশি সময় বেঁচে থাকতে পারে। টয়লেট থেকে ফিরে ভাল করে হাত না ধুলে তার হাতের স্পর্শের সাহায্যে আরো অনেক কিছুতেই এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন বলছে, ভাইরাসটি লেগে আছে এরকম কোন বস্তু স্পর্শ করার পর হাত দিয়ে যদি মুখ স্পর্শ করা হয় তাহলে ভাইরাসটি ছড়াতে পারে।
➽ করোনা মূলত শরীরের তিনটে অংশ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে। এগুলো হলো নাক, মুখ ও চোখ। সুতরাং শরীরের এই তিনটি মূল্যবান অংশ সুরক্ষিত রাখা অত্যন্ত জরুরি।
করোনা ভাইরাস কোথায় কতদিন বেঁচে থাকে?
➽কোভিড-১৯ রোগীর হাঁচি, কাশি, কফ থেকেই মূলত ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। কিন্তু প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটি এরপর কোন কোন জায়গায় কতদিন বাঁচে তা আমাদের বেশিরভাগেরই জানা নেই। যেহেতু করোনা থেকে রক্ষা পেতে নানা চেষ্টা করে যাচ্ছি আমরা, তাই এই ভাইরাস কোন কোন বস্তু বা তার উপরিভাগে কতদিন বাঁচে, তা জানতে পারলে আরো বেশি সতর্ক হতে পারবো।
➽বাতাসে করোনাভাইরাস ১০ মিনিট থেকে আধা ঘণ্টা টিকে থাকতে পারে। এ সময় আরেকজন মানুষকে সংক্রমণ করার ক্ষমতা রাখে । তবে পরে দুর্বল হয়ে ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত ভেসে বেড়ায় ভাইরাসটি।
➽ প্লাস্টিকের উপরিভাগে করোনাভাইরাস বাঁচে ৩ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত। আমরা প্রতিদিন যেসব প্লাস্টিকের বস্তু ধরি, সেগুলোর মধ্যে খাবারের প্যাকেট, পানির বোতল ও দুধের প্যাকেট, ক্রেডিট কার্ড, রিমোট কন্ট্রোল ও ভিডিও গেম কন্ট্রোলার, লাইট ও ফ্যানের সুইচ, কম্পিউটার কিবোর্ড ও মাউস, এটিএম বুথের বাটন, লিফট্ বাটন, খেলনা এসব অন্যতম।
➽ গবেষকরা এখন পর্যন্ত গবেষণায় জানতে পেরেছেন স্টেইনলেস স্টিলের ওপর করোনাভাইরাস ৩ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। স্টেইনলেস স্টিলের মধ্যে দরজার হাতল, রেফ্রিজারেটর, চাবি, চামচ, রান্নার পট ও প্যান, কারখানার যন্ত্রপাতি অন্যতম।
➽ অ্যালুমিনিয়ামের উপর ২ থেকে ৮ ঘন্টা টিকে থাকতে পারে। যেমন অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল পেপার, কোমল পানীয়ের ক্যান, অ্যালুমিনিয়ামের পানির বোতল প্রভৃতি পণ্য।
➽ ধাতব বস্তুর ক্ষেত্রে তামার উপরিভাগে সবচেয়ে কম সময় ৪ ঘণ্টা করোনা বাঁচে বলে জানতে পেরেছেন গবেষকরা। কয়েন, রান্নার সরঞ্জাম, জুয়েলারি, ইলেকট্রিকের তার এসব তামা দিয়ে তৈরি হয়।
➽ অনেকের ধারণা ছিল টাকার উপর করোনাভাইরাস বেশিক্ষণ টিকে থাকে না। কিন্তু গবেষকরা বলছেন কাগজের টাকা, স্টেশনারি জিনিসপত্র, খবরের কাগজ, ম্যাগাজিন, টিস্যু, পেপার টাওয়েল, টয়লেট পেপার, এসবের ওপর করোনাভাইরাস কয়েক মিনিট থেকে ৫ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।
➽ জানালার কাঁচ, আয়না, পানি খাওয়ার গ্লাস ও জগ, টিভি, কম্পিউটার ও মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে করোনোভাইরাস তিন দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।
➽ খাবার বা পণ্য সামগ্রী ধারণ করা কার্ডবোর্ডের ওপর করোনা সহ কোনো ভাইরাস ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় বাঁচে না।
➽ কাঠের টেবিল, ফার্নিচার, আসবাবপত্রে করোনাভাইরাসের মতো অন্য সব ভাইরাস টিকে থাকতে পারে ২ দিন।
➽ সিরামিকের তৈরি থালা, মগ বা আসবাবপত্রে ৫ দিন পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে করোনাভাইরাস। বাইরে বা অফিস থেকে ফিরে প্রতিদিন জামা-কাপড় ধোয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আপনি যদি অন্যদের কাছ থেকে অন্তত ৩ ফুট দূরত্বে থাকেন, তাহলে জামা কাপড় না ধুলেও চলবে। তবে আপনার আশেপাশে কেউ যদি হাঁচি-কাশি দেয় তাহলে জামা-কাপড় ধুয়ে ফেলতে হবে। কারণ করোনাভাইরাস জামা-কাপড়ের ওপর ২ দিন টিকে থাকতে পারে।
➽ জুতা, ঘরের ফ্লোর, মানুষের ত্বক ও চুলে করোনাভাইরাস কতদিন টিকে থাকতে পারে, তা এখনো জানা যায়নি।
➽ গবেষকরা বলছেন খাবারের ওপর করোনাভাইরাসের উপস্থিতি খুব কম থাকে। তবে স্বাস্থ্যকর পরিবেশের, নিরাপদ খাবার খেতে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আর খাওয়ার আগে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।
করোনা ঠেকাতে বাজার থেকে ফল, সবজি কিনে যেভাবে পরিস্কার করবেন?
১. আগে নিজের হাত ধুয়ে নিন:
শাকসবজি ধোয়ার আগে অবশ্যই আপনার হাত পরিষ্কার আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। ফল এবং সবজি পরিষ্কারের আগে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ডের জন্য নিজের হাত ধুয়ে ফেলুন। এরপর ফল, সবজি ধুতে থাকুন।
২. জলের নীচে রেখে ধুতে হবে:
বাজার থেকে কেনা সমস্ত ফল এবং শাকসবজি খোলা কলের নীচে ফেলে ধুয়ে পরিষ্কার করুন। হাত দিয়ে ঘষে ঘষে। এতে কোনও জীবাণু সংক্রমণের ভয় থাকে না।
৩. সাবান একেবারেই নয়:
সাবান বা ডিটারজেন্ট নয়, শুধু জল বা ভিনেগার দিয়ে বাজার থেকে আনা জিনিসগুলো ধুয়ে নিন। কোথাও, কোনও পচা বা দাগ ধরে অংশ দেখলে সঙ্গে সঙ্গে সেটি কেটে বাদ দিয়ে দিন।
৪. ব্রাশ বা স্পঞ্জ ব্যবহার চলবে:
আলু বা গাজরের মতো সবজি পরিষ্কারের সময় ময়লা পরিষ্কার করতে ব্রাশ বা স্পঞ্জ ব্যবহার করতে পারেন। এফডিএ-রও এটাই সুপারিশ।
৫. বাড়তি যত্ন নিয়ে ধোবেন কোনগুলো:
আঙুর জাতীয় ফল বা সবজি পরিষ্কারের সময় বাড়তি যত্ন নেওয়া জরুরি। তাই এগুলিকে একটি বাস্কেটে রেখে কলের নীচে রাখুন। আবার লেটুস এবং পাতাযুক্ত শাকগুলি এক বাটি ঠান্ডা জলে রাখতে হবে। এফডিএ পরামর্শ দেয়, বাড়তি পাতা সরিয়ে কাগজের তোয়ালে দিয়ে মুছে রাখলে ভালো থাকে।
আরও কিছু গাইডলাইন রয়েছে। যেমন, লেটুস বা তরমুজের টুকরো প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে ফ্রিজে রাখলে ভালো থাকে। অথবা বরফের ওপরেও রাখতে পারেন।
করোনা থেকে বাঁচতে যেসব খাবার খাওয়া জরুরি:
করোনা থেকে বাঁচতে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। তাই এ সময় খাদ্য তালিকায় এমন খাবার থাকা উচিত যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকলে করোনা আপনাকে কখনো পরাস্থ করতে পারবে না। এই কথাটি মাথায় রেখে আপনাকে খাবার
গ্রহণ করতে হবে । রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে যে খাবার খাবেন:
লেবু জাতীয় ফল: লক্ষ্য করলে দেখবেন ঠাণ্ডা বা হাঁচির সমস্যা হলে অনেকেই টক ফল খেতে বলে। এর কারল হলো- টক জাতীয় ফলগুলোতে ভিটামিন সি এর প্রাচুর্য বেশি থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ভিটামিন সি শ্বেত রক্ত কণিকার উৎপাদন বৃদ্ধি করে, যা ইনফেকশন থেকে দেহকে রক্ষা করতে পারে।
আঙ্গুর, লেবু, আমলকী, কমলা এই জাতীয় ফল। লাল বম্বে মরিচ এ প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ ভিটামিন সি আছে। সাথে রয়েছে বিটা ক্যরোটিন যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি চোখ এবং চামড়ার উপকারে আসে।
মধু: সকালবেলা কুসুম গরম পানির সাথে দুই চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। মধু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষভাবে সহায়তা করে এবং সর্দি কাশি হতে বাঁধা দেয়।
রসুন: মশলা জগতে খুব পরিচিত নাম হচ্ছে রসুন। অনেকে খেতে পছন্দ না করলেও এই রসুনের রয়েছে সালফার কম্পাউন্ড, এন্টিমাইক্রবিয়াল উপাদান এলিসিন যা রক্ত সঞ্চালন এ এবং রক্তে চর্বির পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। এই এলিসিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। প্রতিদিন ৩/৪ কোয়া শরীর খেলে হৃৎপিণ্ড সুস্থ থাকে এবং কলেস্টেরলের মাত্রা কম থাকে।
তুলসী: তুলসী হল ভারতবর্ষে ও শাস্ত্রমতে খুব পবিত্র একটি গাছ এবং এই গাছের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব আয়ুর্বেদ ও নানা চিকিৎসার ক্ষেত্রে ভীষণভাবেই দেখা যায়। তুলসী হল মূলতঃ পুদিনা গাছেরই একটি ধরণ যার আবার নানারকমের ভাগ আছে। যেমন, রাম তুলসী, কৃষ্ণ তুলসী ও বান তুলসী। তুলসী পাতায় রয়েছে এন্টি ইনফ্লেমেটরি ও এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান যা ক্যান্সার, ডায়বেটিস বা হৃদরোগের মত নানা মারাত্মক রোগের বিরুদ্ধে শক্তিশালী রূপে লড়াই করতে পারে। তুলসী পাতায় এতখানি ঔষধিক গুণ রয়েছে যে স্বয়ং এই পাতাকেই একটি ওষুধ বলে গণ্য করা হয়। বেশিরভাগ দেশে তুলসীকে মানসিক চাপ মুক্ত করার একটি অসাধারণ ঔষধি হিসেবে ধরা হয়। এছাড়া এই পাতায় রয়েছে এন্টি ইনফ্লেমেটরি ও রোগ প্রতিরোধ করার উপাদান যা সারাদিনের ক্লান্তি ও চাপ নিমেষের মধ্যে দূর করতে পারে। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে তুলসী পাতায় রয়েছে অসাধারণ রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা যেমন এ্যাজমা, ফুসফুসের সমস্যা, ব্রঙ্কাইটিস, ইত্যাদি। ঠাণ্ডা লাগলে বা সর্দি কাশি হলে বুকে কফ বসে গেলে তুলসী পাতার দ্বারা তা তরল করে খুব সহজে শরীর থেকে দূর করা যায় । এমনকি, জ্বরের সময়ও তুলসী পাতা খুব উপকারী। বর্ষাকালে এই তুলসী পাতা ও এলাচ ভালো করে জলে ফুটিয়ে সেই জল পান করলে খুব সহজেই নানারকমের রোগের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। বিভিন্ন সার্জারির পর বা কোনো ক্ষতস্থানে তুলসী পাতা বেটে লাগালে তা বেশ তাড়াতড়ি শুকিয়ে ওঠে। তুলসী পাতার দ্বারা রক্তে সুগারের মাত্রা ও কোলেস্টরল দুটোই রোধ করা যায় যার ফলে খুব সহজেই আপনি ওজন বৃদ্ধির হাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তুলসী দিয়ে দাঁতের জন্যে নানারকমের টুথপেস্ট ও মাউথ ওয়াশ তৈরী করা যায় কারণ এতে রয়েছে এন্টি ব্যাক্টিরিয়াল উপাদান।বর্তমানে হার্টের সমস্যা ভীষণভাবে বেড়ে গেছে যা মৃত্যুরও বড় কারণ। হার্টের রোগ জন্ম দেয় হাইপারটেনশন, উচ্চ রক্তচাপ বা কোলেস্টরলের। গলা ব্যথা কমাতে তুলসীর জুড়ি মেলা ভার। শ্বাসকষ্টের সমস্যা কমাতেও তুলসী পাতা বেশ উপকারী । একটি তুলসী পাতা দিয়ে ফুটিয়ে রোজ গার্গেল করলে গলা ব্যথা নিমেষে সেরে যায়।ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ করতে তুলসী পাতা দারুণ উপকারী। প্রতিদিন সকালে ৮/১০টি তাজা তুলসির পাতা চিবিয়ে খেয়ে নিন।
আদা: অনেকেই জানেন যে ঠাণ্ডা কাশি হলেই আদা চা পান করার কথা খুব বেশি প্রচলিত আছে আমাদের দেশে। এর পেছনের কারণ হচ্ছে আদায় আছে খুব শক্তিশালী anti-inflammatory and antioxidant effects যা ইমিউনিটি শক্তি বাড়ায় এবং inflammatory ডিজিজগুলোর বিপক্ষে কাজ করে।প্রতিদিন সকালে ১০-১৫ গ্রাম আদা চিবিয়ে খান।
হলুদ: রান্না ঘরের বহুল প্রচলিত হলো হলুদ। এর কড়া হলুদ রঙের জন্য এটি খুব পরিচিত যাতে আছে curcumin। এই হলুদের আছে anti-inflammatory ধর্ম । এই কারকুমিন স্নিজেরাই ফ্রি-রেডিকেলগুলোকে বাঁধা দিতে সক্ষম এবং সেই সাথে দেহের নিজস্ব অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এনজাইমগুলিকে উদ্দীপিত করে যা রোগ প্রতিরোধ করে। পেটের পীড়া নিরাময়ে হলুদ ভাল কাজ করে।প্রতিদিন সকালে ১০-১৫ গ্রাম কাঁচা হলুদ চিবিয়ে খান।
ডিম: ডিমের মধ্যে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, এনজাইম এবং অ্যামাইনো এসিড এমনভাবে বিন্যস্ত যে এটা শরীরের সব ধরণের পুষ্টির অভাব পুরণ করে শরীরের কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে দেয়। একটি ডিমে রয়েছে দৈনিক চাহিদা পূরণের উপযোগী ১৫ শতাংশ ভিটামিন-বি। এটি দৈনিক খেলে দেহের ভিটামিন-বি এর চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখে। ভিটামিন-বি দেহে এনার্জি যোগায়। ডিম হলো ‘পাওয়ার হাউজ অব নিউট্রিশন’ অর্থ পুষ্টির আধার। আবার এ তথ্য বেশির ভাগেরই জানা যে প্রাণিজ প্রোটিনের মধ্যে ডিম অন্যতম। মোটকথা ডিম হচ্ছে আদর্শ প্রোটিন ফ্যাক্টরি। শুধু তাই নয় ডিমে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা হূদরোগসহ অনেক রোগের বিরুদ্ধে বেশ কার্যকরী। অনান্য আমিষ জাতীয় খাবার কম খেলে প্রতিদিন যেকোন বয়সের মানুষ ২টি অনায়াসে খেতে পারেন বলে জানাচ্ছেন প্রাণিবিদগণ। ডিম আমাদের মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে থাকে। তাছাড়া ডিমের কুসুমে আছে ফলেট উপাদান যা আমাদের মস্তিষ্কের ভিতরে স্নায়ু কোষের রক্ষণাবেক্ষণ করে।ডিমের ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের উপস্থিতি অস্টিওপরোসিস বন্ধ রাখে এবং দেহের হাড় মজবুত হতে সাহায্য করে। আমাদের দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে ডিমের উপকারিতা অনেক। গবেষণার পরামর্শ অনুযায়ী বলা হয়েছে যে প্রতি সপ্তাহে ৬ টি করে ডিম খেলে স্তনে ক্যানসার হওয়ার সম্ভবনা ৪০% কমে । ডিম খুব দ্রুত হজম হয়ে যায় আমাদের দেহে। ডিম আপনি যেভাবেই খান না কেন এটি আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
দুধ: দুধ একটা আদর্শ খাদ্য। তাই পেটে যদি কোন সমস্যা না হয় তাহলে প্রতিদিন এক গ্লাস করে দুধ খেতে পারেন।
কালোজিরা: কালোজিরার গুণের কোন শেষ নেই। এটাকে সকল রোগের মহৌষধ বলে। তাই প্রতিদিন এক চিমটা কালোজিরা চিবিয়ে খেয়ে নিবেন। কালোজিরাকে বলা হয় সর্বরোগহর!
দই: দই একটি উপাদেয় খাবার, কারণ এতে আছে pro-biotic ( live microorganism ) যার অনেক বেশি স্বাস্থ্য উপকারী। যাদের বদহজম বা পেটের কোনো সমস্যা আছে, তাদের জন্য দই একটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার। এছাড়াও দই ক্যলসিয়াম এবং ভিটামিন ডি’র খুব ভালো সোর্স। আর ভিটামিন ডি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
গ্রীণ টি: গ্রীন টি তে flavonoids হলো এক ধরনের antioxidant যা গ্রীন টি তে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান থাকে।
পেঁপে: খুব পরিচিত অনেক সহজলভ্য একটি ফল হলো পেঁপে। পেঁপেতে আছে প্রচুর ভিটামিন সি। প্রতিটি পেঁপে তে প্রায় ২২৫ গ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায়। পেঁপেতে আছে পাপাইন, যা খাবার হজমকারি এনজাইম এবং এর আছে anti-inflammatory effects.
এছাড়া সকল ধরনের মৌসুমি ফলমূল ও শাক সবজি শরীরের রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে শরীরের ইমিউনিটি বাড়ায়: ফলে এগুলো নিয়মিত খেতে হবে।
করোনায় আক্রান্ত হলে কি করবেন?
➽ করোনা সন্দেহ হলে প্রথমেই টেস্টে পাঠানোর জন্যে স্যাম্পল দিতে হবে; যদিও টেস্ট নিয়ে জনমনে কিছুটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে, তবুও টেস্টের কোন বিকল্প নেই।
➽ প্রথমে ঘরের চিকিৎসা নিতে হবে এবং সবার থেকে আইসোলেশন অবস্থায় সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।
➽ মনোবল শক্ত রাখাটা জরুরি। আপনি মনে জোর রাখবেন যে, করোনা আপনাকে কাহিল করতে পারবে না বরং করোনা নিজেই কাহিল হয়ে পালাই পালাই করবে।
➽কোনভাবেই আতঙ্কিত হওয়া যাবে না।আতঙ্কিত হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারেই কমে যাবে।
➽করোনার কোন ডেফিনিট কোন ঔষুধ আজ অব্দি তৈরি হয়নি। কিছু কিছু সাধারণ ঔষুধ ব্যবহার করা হলেও সবচে জরুরি কিছু স্বাস্থ্যচার মেনে চলা।
➽ আমাদের দেশে যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছে তাদের মধ্যে মৃত্যুর হার গড়পড়তা ১.৪% এর নিচে। অর্থাৎ ১০০ জন মানুষের করোনা আক্রান্ত হলে মারা যাচ্ছে একজন থেকে একটু বেশি; সুতরাং এটা নিয়ে এতটা আতঙ্কিত হওয়ার কিচ্ছু নেই। মনের জোর আর কিছু স্বাস্থ্যচার মেনে চললে করোনা ঠিক পালাবে। বাদবাকি সবাই সুস্থ হয়ে থাকেন। তাই স্বাস্থ্যচার মেনে চলাটা জরুরি।
➽করোনার আরেক বড় শত্রু হলো গরম, সুতরাং করোনায় আক্রান্ত হলে শরীর এবং বসবাসের পরিবেশ সব সময় গরম রাখতে হবে। ঘরের এসি একেবারে বন্ধ রাখতে হবে।
➽ভাইরোলজিস্ট ড. বিজন কুমার শীল বলেন, করোনাকে অঙ্কুরে বিনাশ করার একটি হচ্ছে, ভিটামিন সি জাতীয় খাবার যেমন পেয়ারা, লেবু, আমলকি অথবা ভিটামিন সি ট্যাবলেট খাওয়া। এর সঙ্গে সম্ভব হলে প্রতিদিন রাতে একটি জিঙ্ক ট্যাবলেট খাবেন। ভিটামিন সি এবং জিংক শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সতেজ, সজীব রাখে এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
➽আরেকটি উপায় হচ্ছে কেউ যদি আক্রান্ত হন, যেমন গলাব্যথা, শুকনো কফ ছাড়া কাশি, কাশি হবে কিন্তু কফ বের হবে না। এটা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রথম লক্ষণ। অন্য ইনফ্লুয়েঞ্জাতে আক্রান্তদের হাঁচি, সর্দি ও নাক দিয়ে পানি পড়ে। তবে করোনা ভাইরাস শুকনো কাশি দিয়ে শুরু হয়।এক্ষেত্রে সহজ পদ্ধতি হচ্ছে বেশি কড়া না হালকা রং চা বারবার খাওয়া, গরম পানি দিয়ে গারগেল করা।
➽ এর চেয়ে আরো ভালো উপায় হচ্ছে আদা, লবঙ্গ ও একটা গোলমরিচ পানি মিশিয়ে গরম করলে কালো মতো একটা রং হবে। এর সঙ্গে সামান্য মধু বা চিনি দিয়ে চায়ের সঙ্গে খেলে অথবা এই পানি দিয়ে গারগেল করতে হবে। এর ফলে গলায় যে ভাইরাসগুলো থাকে সেগুলো মারা যায়। এছাড়াও গলায় গরম লাগার ফলে রক্তপ্রবাহ বেড়ে যায়। ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে। রং চায়ের এন্টিসেপ্টিক গুণও রয়েছে। আবার গারগেলের সাথে সাথে এই গরম পানির ভাপ নিতে হবে। গরম ভাপ নেয়ার জন্য ইলেকট্রিক কেটলি বা ফেসিয়াল স্ট্রিমার ব্যবহার করা যেতে পারে।
➽বারবার শুকনো কাশির ফলে গলার টিস্যু ফেটে যেতে পারে। চা এই ইনফেকশন রোধ করে।
➽আপনার জ্বর হোক বা না হোক, এই মুহূর্তে আমাদের সবার উচিত সকালে ঘুম থেকে উঠে, দুপুরে এবং সন্ধ্যায় গারগেল করা। এর ফলে শরীরে যদি ভাইরাস ঢোকেও তাহলে সেটা আর বাড়তে পারবে না। এটা শুধু করোনা ভাইরাস না আরও অনেক ইনফেকশনকে রোধ করতে পারে। কেউ যদি এটা প্রতিদিন করতে পারে, তাহলে তার আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা খুবই কম।
➽করোনা ভাইরাসের কারণে যদি কখনও কারও পেটের সমস্যা দেখা দেয় তাহলে নিমপাতা বেটে সবুজ রসের সঙ্গে এক চামচ হলুদের গুঁড়া পানির সঙ্গে মিশিয়ে সকালে এবং রাতে খেলে তার পেটের ইনফেকশন কমে যাবে।
➽ এ সময় এমন রোগীকে এন্টিবায়োটিক খাওয়ালে অনেক সমস্যা হতে পারে।
➽ করোনা ভাইরাস শরীরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই সেটা আক্রমণ করে না। সময় নিয়ে আস্তে আস্তে শরীরের মধ্যে বাড়তে থাকে। তাই বাসায় ফিরে গরম পানি পান করা, এক কাপ হালকা রং চা খাওয়া, নাক ও মুখ দিয়ে গরম পানির ভাপ নেয়া, পানির মধ্যে এক ফোঁটা মেন্থল বা খানিকটা ভিক্সল মিশিয়ে দিলে আরও ভালো হয়। তাহলে নাকটা আরও ভালোমতো পরিষ্কার হয়ে যাবে, ফলে ভাইরাস ঢুকলেও শরীরের মধ্যে বাড়তে এবং সুবিধা করতে পারবে না।
➽ নরমাল স্যালাইন নাক দিয়ে টানুন। এক নাক দিয়ে টেনে অন্য নাক দিয়ে বা মুখ দিয়ে বের করে দিলে আপনার শ্বাসকষ্ট অনেকটা দূর হবে।
➽ নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম ফুসফুসকে সুস্থ রাখে। বিশেষত হাঁপানি বা ক্রনিক ব্রংকাইটিসের রোগীদের ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়াতে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম উপকারী। এ ছাড়া এতে শিথিলায়ন হয় বা মানসিক চাপ কমে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বা না হলেও ফুসফুসকে ঠিক রাখার জন্যে নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করে যেতে পারে। এ রকম কয়েকটি ব্যায়াম সম্পর্কে জেনে নিন:
➽৪-৭-৮ রিলাক্সিং ব্রিদিং: পিঠ সোজা রেখে আরাম করে বসুন। ‘হুস’ আওয়াজ করে মুখ দিয়ে ফুসফুসের সবটুকু বাতাস বের করে দিন। এবার চোখ বন্ধ করে নিঃশব্দে নাক দিয়ে ১ থেকে ৪ পর্যন্ত গুনতে গুনতে গভীর শ্বাস নিন। সেটা ভেতরে আটকে রাখুন, মনে মনে ৭ পর্যন্ত গুনুন। এবার ঠোঁট গোল করে আবার ‘হুস’ করে পুরোটা বাতাস বের করে দিন ৮ পর্যন্ত গুনতে গুনতে। কয়েক সেকেন্ড বিশ্রাম নিয়ে পর পর চারবার এভাবে শ্বাস নিন। এই ব্যায়াম দিনে দু’বার করা ভালো। এতে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মানসিক চাপ কমে। ঘুমও ভালো হয়।
➽শ্বাস গোনার ব্যায়াম:এই ব্যায়ামে ক্রমান্বয়ে প্রশ্বাসের সময় ধীর করে আনতে হয়। মেরুদণ্ড সোজা করে বসুন। চোখ বন্ধ করে পর পর কয়েকবার গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। ধীরে ধীরে এর গতি কমে আসবে। প্রথমে প্রশ্বাস ছাড়ার সময় এক গুনবেন, তার পরের বার দুই, এভাবে পাঁচ পর্যন্ত। তারপর আবার নতুন করে এক দিয়ে শুরু করুন। এই ব্যায়ামটি দিনে ১০ মিনিট করবেন। এটি এক ধরনের মেডিটেশন বা ধ্যান। এটি মস্তিষ্ককে সজাগ করে ও মনঃসংযোগ বাড়ায়; মানসিক চাপ কমায়।
➽বেলো ব্রিদিং: মুখ বন্ধ করে চটপট নাক দিয়ে ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার ব্যায়াম এটি। প্রতি সেকেন্ডে তিনবার শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার চেষ্টা করুন। শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার সময়টি সমান থাকবে। এতে বুকের ও বক্ষচ্ছদার মাংসপেশির দ্রুত ব্যায়াম হবে। তারপর কিছুক্ষণ স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিন তবে ১৫ সেকেন্ডের বেশি নয়। এটি যোগব্যায়ামের একটি কৌশল। এতে ক্লান্তি ঝরে যায় এবং কর্মস্পৃহা ও উদ্যম বাড়ে।
➽পানির ভাপ নেয়া, বারবার চা বা গরম পানি খেলে শ্বাসকষ্ট হওয়ার কথা নয়। এরপরও যদি শ্বাসকষ্ট হয় তাহলে হাসপাতালে যেতে হবে নয়তো বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করতে হবে। এখন বড় বড় প্রায় সব শহরগুলোতে অক্সিজেন সিলিন্ডার ভাড়া পাওয়া যায়।
➽বাসায় শরীরের তাপমাত্রা বা জ্বর মাপার জন্যে বা থার্মাল স্ক্যানার বা একটা ভাল মানের থার্মোমিটার রাখুন।
➽খুব বেশি দাম নয়, একটা পালস অক্সিমিটার রাখুন। অক্সিজেন লেভেল ৯০ এর নিচে নেমে গেলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে বা অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হবে।
পালস অক্সিমিটার ছাড়াও আপনি যেভাবে আপনার শরীরের অক্সিজেন লেভেল জেনে নিতে পারেন:
সুস্থ মানুষের অক্সিজেনের মাত্রা ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশের মধ্যে থাকে। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী বাড়িতে থাকুক বা হাসপাতালে, এ সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তাকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা। তার রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বা ঘনত্ব কমে যাচ্ছে কি না, খেয়াল করা। সুস্থ মানুষের অক্সিজেনের মাত্রা ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশের মধ্যে থাকে। রক্তে অক্সিজেনের ঘনত্ব আর হৃদ্স্পন্দনের গতি পরিমাপ করা যায় যে যন্ত্রের মাধ্যমে, তার নাম পালস অক্সিমিটার। এই যন্ত্র না থাকলেও একটা ছোট পরীক্ষার মাধ্যমে ফুসফুসের অবস্থা বুঝে নেওয়া যায়।
➽ রোগীকে প্রথমে মুখ দিয়ে সজোরে বুকের ভেতরে থাকা বাতাস ছাড়তে হবে। তারপর ধীরে ধীরে গভীরভাবে নাক দিয়ে বাতাস টেনে শ্বাস ধরে রাখতে হবে। যদি ৭ সেকেন্ড এভাবে শ্বাস ধরে রাখতে সমস্যা হয়, তাহলে বুঝতে হবে অক্সিজেনের মাত্রা ৯৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। আর যদি ৫ সেকেন্ড পর্যন্ত শ্বাস ধরে রাখতে সমস্যা হয়, তাহলে বুঝতে হবে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ৯০ শতাংশের নিচে।
➽ করোনায় সংক্রমিত রোগীর জন্য দ্বিতীয় সপ্তাহটা গুরুত্বপূর্ণ। অনেকের এ সময় নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। কাশির পাশাপাশি শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়। গভীর বা লম্বা শ্বাস নেওয়ার সময়ে বুকে ব্যথা বা চাপ অনুভূত হতে পারে। এগুলো ফুসফুসে সংক্রমণজনিত প্রদাহের লক্ষণ।
➽ অনেক সময় শুরুতে অক্সিজেনের ঘাটতি রোগী বুঝতে পারে না। দিব্যি সুস্থ–স্বাভাবিক মনে হয়। একে বলে ‘নীরব হাইপোক্সিয়া’।
➽ রক্তে অক্সিজেন কমে গেলে শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি বেড়ে যায় (প্রতি মিনিটে ২৪-এর বেশি)। হৃদ্স্পন্দনের গতি (প্রতি মিনিটে ১০০-এর বেশি) বেড়ে যায়, বুকে ব্যথা হয় ও নিশ্বাসে সমস্যা হয়। ফলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গে, স্নায়ুতন্ত্র, এমনকি মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। এ সময় মাথা ঝিমঝিম করা, প্রচণ্ড দুর্বল লাগা, একটু পরিশ্রম বা হাঁটাহাটিতে সমস্যা হয়। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার লক্ষণ এগুলোই।
➽ অক্সিজেনের মাত্রা খুব বেশি কমে গেলে রোগীর ঠোঁট ও ত্বক নীল হয়ে যায়। এ সময় রোগীকে উপুড় করে শুইয়ে দিয়ে জোরে জোরে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে বলতে হবে। এতে কিছুটা উপকার পাওয়া যায়। কারণ, এর ফলে ফুসফুসের একটা বড় অংশে সহজে বাতাস যায় এবং রক্ত সহজে অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে। দ্রুত হাসপাতালে বা চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
➽ফুসফুসের বায়ুনালীগুলো পিঠের দিকে থাকে তাই, পেটের নিচে বালিশ দিয়ে উপুড় হলে শুয়ে থাকলে শ্বাসকষ্ট দ্রুত প্রশমন হয়।
➽ বেলুন ফোলানো: এই সংকটে আপনি বাজার থেকে কতগুলো জন্মদিনের বেলুন কিনে এনে ঘরে রাখুন। ফুঁ দিয়ে সজোরে বেলুন ফুলান। এভাবে একটা বেলুন ফেটে না যাওয়া অব্দি তিনবার ফুলাতে থাকুন। দেখবেন আপনার শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা দ্রুত বেড়ে গিয়েছে। এভাবে দিনে কয়েকবার করুন। আপনার শ্বাসকষ্ট কমবেই।
➽ বোতলের পানিতে বুদবুদ উঠান: ড্রিঙ্কস খাওয়ার স্ট্র বাজার থেকে কিনে আনুন। এরপর একটা মগের মধ্যে পানি রেখে সেই পানিতে স্ট্র দিয়ে ফুঁ দিয়ে অনবরত বুদবুদ উঠাতে থাকুন। এভাবে কিছুক্ষণ করলে আপনার শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা বেড়ে যাবে।
➽সবচে জরুরি হলো ৮ ঘন্টা রিলাক্স মুডে টানা ঘুম দেয়া।
➽ আরো বড় ধরনের অসুস্থতা হলে ভাল কোন হাসপাতালে যেতে হবে ; প্রয়োজনে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা বা আইসিইউ সাপোর্ট বা ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
➽ টেলিমেডিসিনের নম্বরগুলো কাছে রেখে সেখানে ফোন দিয়ে ব্যবস্থা নিন। এ ব্যাপারে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বা আইইডিসিআর এর হেল্প লাইন থেকেও ভাল পরামর্শ পাওয়া যাবে। এসব জরুরি ফোন নম্বরের মধ্যে অন্যতম হলো:
➽স্বাস্থ্য বাতায়ন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর: ১৬২৬৩
➽রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর): ১০৬৫৫;
+৮৮০ ১৯৪৪৩৩৩২২২; +৮৮০ ১৯৩৭০০০০১১; +৮৮০ ১৯৩৭১১০০১১; +৮৮০ ১৯২৭৭১১৭৮৪; +৮৮০ ১৯২৭৭১১৭৮৫
➽বিশেষজ্ঞ হেলথ্ লাইন: ০৯৬১১৬৭৭৭৭৭
➽বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা:০৯৬১১৬ ৭৭৭৭৭
➽এছাড়া বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ও জেলা উপজেলা হাসপাতালের কোথাও কোথাও জরুরি স্বাস্থ্যসেবার হটলাইন নম্বর চালু আছে। সেগুলো জেনে নিতে পারেন।
করোনা চিকিৎসায় মেডিসিনের ব্যবহার:
করোনা সৃষ্ট কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় এখন অব্দি কোন ঔষুধ বা ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি। সবাই বলছেন ২০২১ সালের আগে কোন ঔষুধ বা ভ্যাকসিন বাজারে আসবার কোন সম্ভবনা নেই। তবে হালে রাশিয়া দাবী করেছে তারা আগামী ১০ আগস্ট (২০২০ খ্রি.) থেকেই এটার ভ্যাকসিন বাজারজাত করতে সক্ষম হবে। করোনার শুরু কিছু কিছু ঔষুধ কোভিড চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্যে সামনে চলে আসে। এসবরে মধ্যে অন্যতম হলো:
(১) ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন: ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) গত মার্চে (২০২০ খ্রি. করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসায় হাসপাতালে জরুরি প্রয়োজনে ম্যালেরিয়ার দুই ওষুধ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন এবং ক্লোরোকুইন ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল ৷ দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এই ওষুধের পক্ষে ব্যাপক প্রচার চালান৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের প্রাণঘাতী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে সর্তক করলেও ট্রাম্প সাহেব তা কানে না তুলে উল্টো বলেন, গত মে (২০২০ খ্রি.) মাসে হোয়াইট হাউজের দুই কর্মীর করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তের পর প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে তিনি নিজে দুই সপ্তাহ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন সেবন করেছেন এবং তার শরীরে কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয়নি৷ যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাস সংক্রমণে চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্রে এই দুই ওষুধের ব্যবহারও বেড়ে গিয়েছিল ৷ কিন্তু এখন এফডিএ বলেছে, নানা পরীক্ষায় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহারে কোভিড রোগীদের কোনো উন্নতি না হওয়ার অনেক প্রমাণ তারা পেয়েছেন; বরং এই ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় রোগীর জীবন ঝুঁকিতে পড়ে যায় ৷
হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহারে হৃদযন্ত্রের গতি দ্রুত এবং অনিয়মিত হয়ে পড়ে ৷ ফলে যারা আগে থেকেই উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগে ভুগছেন তাদের প্রাণহানি হতে পারে ৷
এ বিষয়ে এফডিএ বলে, অন্যরোগের চিকিৎসায় কয়েক দশক ধরে ব্যবহৃত এ ওষুধের কার্যকর প্রভাব কোভিড রোগীদের ক্ষেত্রে প্রমাণিত নয়৷
‘‘যে ওষুধের কার্যকারিতা এখনও প্রমাণিত নয় কিন্তু ঝুঁকি নিশ্চিত৷ আমরা জেনে-বুঝে সেটা ব্যবহার করতে পারি না৷’’ এফডিএ-র এ সিদ্ধান্তের অর্থ, করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের আমদানি করা হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন বিতরণ বন্ধ থাকবে ৷
অথচ যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পরপরই ট্রাম্প এ ওষুধের পক্ষে জোর প্রচার চালান৷ এমনকি তিনি চাপ দিয়ে ভারত থেকে ওষুধ আমদানির ব্যবস্থাও করেন৷ ট্রাম্প প্রশাসনের দেখাদেখি অন্যান্য দেশও হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহার শুরু করে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও প্রথমে এ ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন দিয়ে পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়৷
সুতরাং ম্যালেরিয়ার দুই ঔষুধ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন এবং ক্লোরোকুইন এর ব্যবহার আপাতত: বন্ধ।
(২) রেমডিসিভির: বিশ্বে প্রথম জেনেরিক রেমডেসিভির। করোনার চিকিৎসায় দেশে প্রথম রেমডেসিভির উৎপাদন করল বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান এসকেএফ । করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর ওষুধ রেমডেসিভির উৎপাদন সম্পন্ন করেছে দেশের খ্যাতনামা ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। উৎপাদনের সব প্রক্রিয়া শেষ করেছে এ বছর (২০২০ খ্রি.) মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে। স্বাভাবিকভাবে প্রাথমিক পরীক্ষায় উৎসাহব্যঞ্জক ফল পাওয়ায় করোনা রোগীদের চিকিৎসায় মার্কিন প্রতিষ্ঠান গিলিয়েড সায়েন্সেস কোম্পানির তৈরি এই ওষুধ সারা বিশ্বে সাড়া ফেলে। যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) করোনার ওষুধ হিসেবে রেমডেসিভিরকে ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। জাপানের ওষুধ প্রশাসন ৭মে থেকে ওষুধটি করোনা রোগীদের ওপর প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে। তবে কবে নাগাদ জাপান এর উৎপাদনে যাবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। মার্কিন প্রতিষ্ঠান গিলিয়েড সায়েন্সেস ওষুধটি উৎপাদনের জন্য ভারত ও পাকিস্তানের বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছে বলেও খবরে জানা গেছে।
এ অবস্থায় এসকেএফ-ই বিশ্বে প্রথম ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, যারা জেনেরিক (মূল বা গোত্র) রেমডেসিভির উৎপাদন করতে সক্ষম হলো। এসকেএফের উৎপাদন করা রেমডেসিভিরের বাণিজ্যিক নাম ‘রেমিভির’। দুই মাস ধরে এসকেএফ-কর্মীদের নিরলস পরিশ্রমের ফলেই এত কম সময়ে এটা উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। ওষুধের মূল উপাদান সরবরাহকারীদের সঙ্গে চুক্তি করে পর্যাপ্ত কাঁচামাল প্রাপ্যতা নিশ্চিত করে এসকেএফ। করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ রোগের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি কার্যকারিতা দেখিয়েছে রেমডেসিভির। গিলিয়েডের নিজস্ব পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই ওষুধ ব্যবহারে রোগীদের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। মানুষের শিরায় ইনজেকশন হিসেবে এই ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়। রোগের তীব্রতার ওপর এর ডোজ নির্ভর করে। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য ৫ অথবা ১০ দিনের ডোজ প্রয়োজন হতে পারে।ওষুধটি নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য ভালো ফল দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। যদিও এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস প্রতিরোধী কোনো ওষুধ শতভাগ কার্যকর, এমনটা বলা যাচ্ছে না। তবে রেমডেসিভির ভালো কাজ করেছে। রেমডেসিভির উৎপাদনের একচেটিয়া স্বত্ব রয়েছে গিলিয়েডের। তবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইন অনুযায়ী, জাতিসংঘ স্বীকৃত বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশগুলো এসব পেটেন্ট বা স্বত্ব অগ্রাহ্য করতে পারে। ফলে এসব দেশ সহনীয় মূল্যে ওষুধ উৎপাদন করতে পারে। তবে এই ওষুধটি বর্তমানে খোলাবাজারে দেওয়া হবে না। এটা দেওয়া হবে করোনা চিকিৎসার জন্য সরকার অনুমোদিত হাসপাতাল বা ক্লিনিককে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সীতেশ চন্দ্র বাছাড় এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, রেমডেসিভির ওষুধটি ইবোলা ভাইরাসের বিরুদ্ধে দারুণ কার্যকর ছিল। সার্স ও মার্স ভাইরাসের বিরুদ্ধেও এটি ব্যবহৃত হয়েছে। মূলত শ্বাসনালিতে সংক্রমিত ভাইরাসের বিরুদ্ধে ওষুধটি তার কার্যকারিতা দেখিয়েছে। এই ধারণা সামনে রেখেই এটি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ব্যবহারে অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান। বাংলাদেশেও এটি ব্যবহারে বাধা নেই। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস শ্বাসনালিতে সংক্রমিত হয়। সেই কারণে রেমডেসিভির ব্যবহারে যে পরীক্ষাগুলো চালানো হয়েছে, তার ফলাফল আশাব্যঞ্জক। তবে এটি এখনো ‘পর্যবেক্ষণ’ ও ‘পরীক্ষামূলক’ পর্যায়ে আছে। তারপরও দেখা গেছে, এই ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে এমন রোগীরা অন্য রোগীর তুলনায় অন্তত ৪ থেকে ৫ দিন আগে সুস্থ হয়েছেন। এটি একটি বড় ব্যাপার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, এসকেএফ সহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে এই ওষুধ তৈরি করছে। এসকেএফ তৈরি করে ফেলেছে। অন্যরা করছে। এটা ভালো খবর। করোনাভাইরাসের যেখানে কোনো চিকিৎসা নেই, সেখানে এই ওষুধ বাংলাদেশে চলে আসায় খানিকটা আশাবাদী হওয়া যায়।
উল্লেখ্য, শিল্পপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন ট্রান্সকম গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠান এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ৩০ বছর ধরে ওষুধ উৎপাদন করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি দেশের বাইরে ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের ৩০টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করে আসছে।
দামটা একটু বেশি: ‘রেমডেসিভির’ ইনজেকশন আইটেম, এটা ব্যবহার করা হবে কেবলমাত্র হাসপাতালে জটিল রোগীদের চিকিৎসায়। ‘রেমডেসিভির’ ইনজেকশন হিসেবে ৫ থেকে ১০ দিনের মেয়াদে দেওয়ার প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশে উৎপাদিত এই ওষুধের প্রতি ডোজ ইনজেকশনের গড়পড়তা দাম পড়ে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা ।
(৩) করোনার চিকিৎসায় স্টেরয়েড ‘ডেক্সামেথাসোন’ (Dexamethasone):
মাঝারি এবং গুরুতর অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসায় গত জুন (২০২০খ্রি) মাসের শেষেরে দিকে স্বল্প মাত্রার স্টেরয়েড ওষুধ ডেক্সামেথাসোন ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে ভারত। বিগত ১৬ জুন ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা পরীক্ষার অংশ হিসেবে হাসপাতালের প্রায় ২ হাজার করোনা রোগীকে ডেক্সামেথাসোন প্রয়োগ করেন এবং পরে ৪ হাজারের বেশি রোগী যাদের এই ওষুধটি দেয়া হয়নি; তাদের সঙ্গে তুলনা করে দেখেন।
অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা ডেক্সামেথাসোনকে করোনায় প্রথম জীবন রক্ষাকারী ওষুধ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ভেন্টিলেটরে থাকা রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি ৪০ থেকে ২৮ শতাংশে কমিয়ে আনে ডেক্সামেথাসোন। এছাড়া যেসব রোগীর অক্সিজেন দরকার হয়, তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি কমায় ২৫ থেকে ২০ শতাংশ।
গবেষকদের ধারণা, ব্রিটেনে করোনাভাইরাস মহামারির শুরুর দিকে যদি ওষুধটি পাওয়া যেত, তাহলে দেশটিতে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের জীবন বাঁচানো যেত। কারণ এটা অনেক শস্তা। কোভিড-১৯ এর প্রচুর রোগী নিয়ে লড়াইরত বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর জন্যও বিশাল উপকারে আসতে পারতো ওষুধটি। ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের এই গবেষণার ফল প্রকাশের পর ওষুধটির উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধির আহ্বান জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
গবেষকরা বলছেন, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যখন অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখায় তখন এর কিছু ক্ষতি ঠেকাতে সহায়তা করে ডেক্সামেথাসোন। শরীরের প্রদাহ কমিয়ে আনতে এই ওষুধটি ব্যবহার করা হয়। ১৯৬০ সালের গোড়ার দিক থেকেই বাত, হাঁপানি ও প্রদাহের চিকিৎসায় ডেক্সামেথাসোন ওষুধটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জোর দিয়ে বলেছে, এই ওষুধটি শুধুমাত্র চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে গুরুতর এবং আশঙ্কাজনক রোগীদের প্রয়োগ করা যেতে পারে।
প্রতিষেধক হাতে আসার আগেই করোনার চিকিৎসায় সস্তার ‘জীবনদায়ী’ ওষুধের খোঁজ দিয়েছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। করোনার চিকিৎসায় বহুল প্রচলিত স্টেরয়েড ‘ডেক্সামেথাসোন’ (Dexamethasone)-এর ‘জীবনদায়ী’ প্রভাবের প্রমাণ দিয়েছেন ব্রিটিশ গবেষকরা। কিন্তু করোনার চিকিৎসায় স্টেরয়েড প্রয়োগের ‘সুফল’ সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত ছিলেন ভারতীয় চিকিৎসক-বিজ্ঞানীরা। করোনার চিকিৎসায় আংশিক ভাবে প্রয়োগও করা হচ্ছিল স্টেরয়েড, এমনটাই দাবি করলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক (চেস্ট স্পেশালিস্ট) ডঃ অনির্বাণ সরকার।
ডঃ সরকার জানান, ডেক্সামেথাসোন একটি অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি স্টেরয়েড। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখেছেন এবং জানিয়েছেন, এই স্টেরয়েড প্রয়োগ করে ভেন্টিলেশনে থাকা রোগীদের মৃত্যুর হার কমানো গিয়েছে প্রায় ৪১ শতাংশ। এই ওষুধের প্রয়োগে অক্সিজেনের সাহায্য নেওয়া গুরুতর অসুস্থ করোনা আক্রান্তদের মৃত্যুর হার কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ এবং স্থিতিশীল করোনা রোগীদের মৃত্যুর হার প্রায় ১৩ শতাংশ কমেছে। ভারতীয় চিকিৎসকদের কাছে এর সংখ্যাগত হিসাব বা পরিসংখ্যান না থাকলেও এই ভাইরাসের চিকিৎসায় স্টেরয়েড প্রয়োগের কার্যকারিতা সম্পর্কে যথেষ্ট অবগত ছিলেন তাঁরা। করোনার চিকিৎসায় আংশিক ভাবে প্রয়োগও করা হচ্ছিল ডেক্সামেথাসোনের সমতুল্য স্টেরয়েড।ভারতের আরেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডঃ অনির্বাণ সরকার জানান, ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ’-এর (ICMR) গাইডলাইনেও করোনার চিকিৎসায় ‘মেথিল প্রেডনিসলোন’ (Methylprednisolone) নামের একটি স্টেরয়েড প্রয়োগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল ডেক্সামেথাসোনের কার্যকারিতা সম্পর্কে অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীদের বলার আগে থেকেই। ডঃ সরকার আরো জানান, ৮ মিলিগ্রাম ‘মেথিল প্রেডনিসলোন’ (Methylprednisolone) ১.৫ মিলিগ্রাম ডেক্সামেথাসোনের সমান কার্যকরী। ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ’-এর গাইডলাইনে নির্দিষ্ট ভাবে করোনা আক্রান্তদের প্রতিদিন ১ থেকে ২ মিলিগ্রাম করে মেথিল প্রেডনিসলোন পর পর ৩ থেকে ৫ দিন প্রয়োগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।সুতরাং, করোনার চিকিৎসায় স্টেরয়েড প্রয়োগের কার্যকারিতা বা সুফল সম্পর্কে অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীদের জানানোর আগে থেকেই অবগত ছিলেন ভারতীয় চিকিৎসক, বিজ্ঞানীরা। তবে অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীদের এই গবেষণালব্ধ পরিসংখ্যান ভারতীয় চিকিৎসকদের পাশাপাশি বিশ্বের লক্ষ লক্ষ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত গবেষক ও কর্মীদের অনেকটাই আশ্বস্ত করেছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই, মত ডঃ অনির্বাণ সরকারের।
কিন্তু কতটা নিরাপদ এই ওষুধ? এই স্টেরয়েডের সুফল সামনে এলেও এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সতর্ক করে দিলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক (মেডিসিন) ডঃ অরিন্দম বিশ্বাস এবং হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ অরিন্দম পাণ্ডে।
এ বিষয়ে ডঃ বিশ্বাস জানান, রোগীকে স্টেরয়েড দেওয়ার ক্ষেত্রে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার একটা ঝুঁকি থাকেই। বিশেষ করে যে কোনও স্টেরয়েডই বড়জোড় ২১ দিন প্রয়োগ করা যেতে পারে। তার বেশি প্রয়োগের ক্ষেত্রে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে। এই ২১ দিনের মধ্যে রোগীর শারীরিক পরিস্থিতি বুঝে স্টেরয়েডের ডোজ ক্রমশ কমিয়ে এনে ধরে ধীরে বন্ধ করতে হয়।
ডঃ বিশ্বাস বলেন, “স্টেরয়েডের একটি অত্যন্ত সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হল, এটি শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। ফলে ভবিষ্যতে খুব সাধারণ ব্যাক্টিরিয়া বা ভাইরাসের আক্রমণ প্রতিহত করার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলে শরীর। ‘ডেক্সামেথাসোন’ (Dexamethasone) প্রয়োগের ক্ষেত্রেও এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাছাড়া, যাঁদের কিডনির সমস্যা রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এই স্টেরয়েডের প্রয়োগ বিপজ্জনক হতে পারে! তবে মরনাপন্ন করোনা রোগীর জীবন বাঁচাতে এই ওষুধ সত্যিই অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে, যা এই পরিস্থিতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
সুতরাং করোনা চিকিৎসায় শস্তা দামের এই ঔষুধটি কিছুটা কাজ করলে এটা ব্যবহারে মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। তাই এটা নিয়ে খুব বেশি আশাবাদি হওয়ার কিছু নেই।
(৪) করোনা চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি:
চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হলে রক্তে প্রাকৃতিক নিয়মেই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। প্লাজমার মাধ্যমে অ্যান্টিবডি যখন আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে দেয়া হবে তখন ওই ব্যক্তির শরীরের করোনা ভাইরাস ছাড়ানোর প্রক্রিয়া বন্ধ করে নিস্ক্রিয় করে ফেলবে। এখন আর সেটা হলফ করে বলা যাচ্ছে না। কারণ একাধিকবার করোনা আক্রান্ত হওয়ার নজরে পাওয়া যাচ্ছে। প্রথমবারের থেকে দ্বিতীয়বার করোনা আক্রান্ত হলে জটিলতা বেশি হতে দেখা যাচ্ছে। করোনামুক্ত রোগীর শরীরে তৈরি অ্যান্টিবডি আক্রান্তের শরীরে প্রবেশ করালে জব্দ হতে পারে করোনা। এই প্রক্রিয়াই প্লাজমা থেরাপি। করোনা মুক্ত ব্যক্তির শরীর থেকে গড়ে ৪১০ মিলি প্লাজমা সংগ্রহ যায় যা দিয়ে ২ জনের শরীরে প্লাজমা প্রয়োগ সম্ভব। তবে প্লাজমা থেরাপি দেয়ার আগে নিশ্চিত হওয়া দরকার প্লাজমা সংগ্রহ করা ব্যক্তির শরীরে পর্যাপ্ত পরিমান আন্টিবডি তৈরি হয়েছে কিনা? নইলে এই থেরাপি কোন কাজে আসবে না। এই অ্যান্টিবডি আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসকে মোকাবেলা করে। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ভাইরাসকে অকেজো করতে সাহায্য করে।। অবশ্য সব রোগীদের শরীরে কাজ করার ব্যাপারে সন্দেহাতীত প্রমাণ না থাকায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটাকে শুধুমাত্র পরীক্ষামূলক পর্যায়ে । ১৯১৮ সালে স্প্যানিশ ফ্লুর মহামারি এবং ১৯৩০ এর দশকে হামের চিকিৎসায় এই পদ্ধতি কাজে লাগানো হয়েছিল। একেবারে সাম্প্রতিক সময়ে ইবোলা, সার্স এবং ’এইচ-ওয়ান-এন-ওয়ান’ এর মতো রোগের চিকিৎসায়ও এটি ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলাদেশে আপাতত: এই চিকিৎসার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বা পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হচ্ছে। সফলতা পাওয়া গেলে করোনাভাইরাস রোগীদের চিকিৎসায় এটি পুরোদমে শুরু করা হবে তিনি জানান। তবে এ যাবত খুব বেশি সফলতার খবর পাওয়া যায়নি।
প্লাজমা চিকিৎসা কিভাবে দেওয়া হয়?
প্লাজমা দেওয়া বা নেওয়া রক্তদানের মতই সহজ একটি ব্যপার। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে বা বহির্বিভাগে বসেও এটি সম্ভব। এর জন্য অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ারও প্রয়োজন হবে না। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থেকে বা বসেও প্লাজমা ট্রান্সফার সম্ভব। একটি সুঁই আপনার হাতের শিরা বা আপনার বাহুর ভাজের শিরায় প্রবেশ করানো হবে তার সাথে যুক্ত থাকবে পাতলা প্লাস্টিকের নল। ওই নল দিয়ে আপনার রক্ত এমন একটি মেশিনে প্রবেশ করবে যেখানে আপনার রক্তকণিকা থেকে রক্তরস বা প্লাজমাকে আলাদা করা হবে। তারপর রক্তের কোষগুলো তাজা প্লাজমার সাথে মিশে যাবে এবং ওই নতুন মিশ্রণটি অন্য একটি নল দিয়ে আপনার শরীরে আবার প্রবেশ করবে। যদি আপনার শিরা ছোট হয়, বাহুর ভাজ বা কব্জির পরিবর্তে ঘাঁড়ের শিরায় সুঁই বসানো হবে।
ঢাকায় করোনা থেকে জয়ী হয়ে প্লাজমা দেওয়া সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. দিলদার হোসেন বলেছেন, ‘আমি একজন নিয়মিত রক্তদাতা। এ পর্যন্ত ২৫ বারের মত রক্ত দিয়েছি। এটা রক্তদানের চেয়েও সহজ। ৩০-৩৫ মিনিট লেগেছে আমার। যারা করোনা পজিটিভ হওয়ার পর সুস্থ হয়েছেন তারা যদি প্লাজমা দেয়ার ব্যাপারে এগিয়ে আসেন তাহলে অনেকের জীবন বাঁচবে।’
প্লাজমাফেরেসিস কী?
প্লাজমা পরিবর্তনকে প্লাজমাফেরেসিসও বলা হয়। এটি আপনার রক্তকে ‘পরিষ্কার’ করার একটি উপায়ও বলা চলে। এটি কিডনি ডায়ালাইসিসের মতেই কাজ করে। চিকিৎসার সময় রক্তরস আপনার রক্তের তরল হলুদ অংশটি বদলে রক্তদাতার কাছ থেকে আসা প্লাজমাটি প্রতিস্থাপিত হয়।
প্লাজমা চিকিৎসা নিতে কত সময় লাগে?
এটি নির্ভর করছে আপনার শরীরে ধরন ও কী পরিমাণ প্লাজমা নিচ্ছেন তার ওপর। প্লাজমা ট্রান্সফারের সময় হতে পারে ২ থেকে ৪ ঘণ্টা। এরকম চিকিৎসা আপনাকে সপ্তাহে একবার বা দুবার নিতে হতে পারে।
এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অন্য কোন ঝুঁকি আছে নাকি?
বড় কোন ঝুঁকি নেই। তবে প্লাজমা ট্রান্সফারের সময় আপনার রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাবে। এটি আপনাকে তুলনামূলক দুর্বল, তন্দ্রাচ্ছন্ন বা ঘুমঘুম ভাব ও বমিভাব অনুভব করাতে পারে। প্লাজমা থেরাপি নেওয়ার আগে আপনাকে হাইড্রেটেড হতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পানি খেলে এ লক্ষণগুলো কমে যাবে।
প্লাজমা ট্রান্সফারে ক্ষতিকারক কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কি আছে?
কিছু ক্ষেত্রে প্লাজমা ট্রান্সফার ক্ষতিকারক হতে পারে। প্লাজমা গ্রহণকারীর রক্তপাত হতে পারে বা প্লাজমা দানকারীর শরীরে থাকা অন্য কোন অসুখের কারণে অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে। অথবা ওই প্লাজমায় যদি যথেষ্ট এন্টিবডি না থাকে আপনার সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে। খুব বিরল ক্ষেত্রে প্লাজমা মেশিনে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে।
প্লাজমা চিকিৎসার পর কি স্বাভাবিক কাজ করা যায়?
প্লাজমা দেওয়া বা গ্রহণের পর আপনি একটু ক্লান্ত বোধ করবেন। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, সাথে সাথে উঠে দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক কাজ করতে পুরোপুরি সক্ষম ছিলেন।
(৫) করোনা চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি:
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে হোমিওপ্যাথি ও ইউনানি ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে ভারতের ‘আয়ুস মন্ত্রণালয়’। আয়ুর্বেদ, ইউনানি, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিষয়ক মন্ত্রণালয়টি তাদের সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের উপায় সংক্রান্ত নানা তথ্য প্রকাশ করেছে। খবর হিন্দুস্তান টাইমস এ খবরে জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০ (Arsenicum album 30) কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। একটানা তিনদিন খালি পেটে এই ওষুধ সেবন করতে হবে। সেবনের পর যদি ওই এলাকায় ভাইরাসটি মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে ওষুধটি একমাস পর আবার আগের নিয়মে খেতে হবে। এই ওষুধটি ইনফ্লুয়েঞ্জা জাতীয় রোগের ক্ষেত্রেও কার্যকর বলে উল্লেখ করে আয়ুস মন্ত্রণালয়। আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০ (Arsenicum album 30) বাংলাদেশে পুলিশ হাসপাতালের অনেক সদস্যদের খাওয়ানো হয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়া আরো কিছু হোমিও ঔষুধ ট্রায়াল পর্যায়ে রয়েছে।
(৬) জনপ্রিয় কিছু ঔষুধ: নিচের কিছু তেমন কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন ঔষুধ অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় মাতোয়ারা করে ফেলেছে। এ বিষয়ে এখন আপনাদেরকে কিছুটা জনিয়ে দিচ্ছি:
কোভিড সনাক্ত হওয়ার সাথে সাথে দেরি না করে যেসব ঔষুধ নিয়মিত সেবন করবেন:
➽Tab:Scabo 6mg: প্রথম দিন একসাথে ২টি ট্যাবলেট খাওয়ার পরে আর খাওয়ার দরার নেই। Tab Ivermactin/Scabo 6 mg/ Ivera 6 mg), ওজন ৬০ কেজির বেশি হলে ৩টি আর কম হলে ২টি ঔষধ শুধুমাত্র ১ বার খাবেন। তবে প্রতিটি ঔষধ চিকিৎসকের পরামর্শে খাবেন। যেমন যারা Tab Warfarin খান তারা Tab Ivermactin খাবেন না। কারণ রক্তক্ষরণ হতে পারে।
➽ Cap. Doxicap 100 mg or Tab. Azithromycin 500 mg: Cap. Doxicap 100 mg খেলে প্রতিদিন ১২ ঘন্টা পর পর মোট ৭ দনে ১৪টি ট্যাবলেট খেতে হবে। আর Tab. Azithromycin 500 mg প্রতিদিন একটা করে মোট ৭ দিনে ৭টা।
➽Tab. Deslor: সর্দি-কাশিতে এই অ্যান্টি হিস্টামিনটি প্রতিদিন একটা বা ২টি খাওয়া যেতে পারে। আরা যারা স্থায়ী শ্বাকষ্টের জন্যে মন্টেলিউকাস্ট জাতীয় যে ঔষুধ খাচ্ছেন সেটা চালিয়ে যাবেন। ডায়াবেটিসের ঔষুধ খান বা ইনসুলিন নেন, সেসব অব্যাহত রাখবেন।
➽Tab. Napa Extend 665mg: জ্বর থাকলে প্রতিদিন খাওয়ার পরে ৮ ঘন্টা পরপর ১টি করে দিনে মোট ৩টা টেবলেট খাওয়া যেতে পারে। জ্বর না থাকলে খাওয়ার দরকার নেই।
➽Tab. Nid 20mg: খাওয়ার পরে সকালে ১টা ও রাতে ১টা করে একমাস বা ৩০ দিন খেতে হবে।
➽Tab. Ceevit 250mg: সকালে ১টা ও রাতে ১টা করে ১৫ দিন খেতে হবে।
➽Cap. D-Rise 40000 Units: প্রতি সপ্তাহে ১টা করে মোট ৮ সপ্তাহ।
➽Steam Inhalation: প্রতিদিন ৩/৪ বার নাক ও মুখ দিয়ে গরম পানির বাষ্প নিবেন। লবণ পানি দিয়ে গারগেল করবেন। এ ব্যাপারে আগে আরো বিস্তারিত বলা হয়েছে।
এখন জেনে নিইএসব ঔষুধগুলোর কি ধরনের কাজ করে বা এদের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে কিনা?
Tab:Scabo 6mg: এটি মূলত আইভারমেকটিন ( Ivermectin) গোত্রের ঔষুধ। ওষুধটি বিভিন্ন ধরনের পরজীবী সংক্রমণের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মাথার উকুন, স্কেবিজ বা চুলকানি। ইভারমেকটিন মূলত পরজীবীর নার্ভ ও অন্যান্য কোষে আক্রমণ করে একে পরাস্ত করে। এটা খেলে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে যেমন: চোখ লাল হওয়া, ত্বকের শুষ্কতা, ত্বক জ্বালাপোড়া করা।আইভারমেকটিন আবিষ্কার হয় ১৯৭৫ সালে এবং চিকিৎসায় ব্যবহার শুরু হয় ১৯৮১ সাল থেকে। এটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি তালিকাভুক্ত ওষুধ।
Cap. Doxicap 100 mg or Tab. Azithromycin 500 mg: এটা সাধারণ এন্টিবায়োটিক এটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খেলে কোন অসুবিধে নেই।
Tab. Deslor: সর্দি কাশির জন্যে আমরা হামেশাই খেয়ে থাকি কোন সমস্যা নেই।
Tab. Napa Extend 665mg: জ্বর বা শরীর ব্যাথা হলে আমরা এটা মুড়ি মুড়কির মত খাই; সুতরাং এটা তেমন কোন ক্ষতিকর কিছু নয়।
Tab. Nid 20mg: এটি জিংক জাতীয় ট্যাবলেট। জিংক শরীরের জন্য খুব প্রয়োজনীয় একটি মিনারেল। এটি মানব শরীরের কার্যক্রম ঠিক রাখার জন্য জরুরি উপাদান। এটি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। লাল মাংস, গম, ওট ইত্যাদি খাবারে জিংক পাওয়া যায়। শরীরে জিংকের অভাব হলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। যেমন : একজিমা, র্যাশ ইত্যাদি।
Tab. Ceevit 250mg: ভিটামিন সি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
Cap. D-Rise 40000 Units: এটি ভিটামিন ডি জাতীয় ক্যাপসুল। এটি শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণ করে ক্যালসিয়াম এর অভাব পূরণ করতে সাহায্য করে।
করোনো রোগির খাবার:(খবারের অংশটুকুর লেখক: শামসুন্নাহার নাহিদ, প্রধান পুষ্টিবিদি ও বিভাগীয় প্রধান, বারডেম হাসপাতাল): শুধু করোনা রোগীরই নয়। করোনা মূলত শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের কম তাদের ক্ষেত্রে বেশি সমস্যার সৃষ্টি করে। তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখার জন্যে এ সময়ে খাবার গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। এ ব্যাপারে আগেও বিস্তারিত বলা হয়েছে।
উদ্ভিজ্জ খাবার হলো অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের সবচেয়ে ভালো উৎস: বিশেষ করে বেগুনি, নীল, কমলা ও হলুদ রংয়ের শাকসবজি ও ফল। ছবি: রজত কান্তি রায়করোনাভাইরাস মোকাবিলার প্রস্তুতি চলছে পুরো পৃথিবীতে। আমরাও চেষ্টা করছি। এর প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে আমরা প্রচুর খাবারদাবার কিনে রাখছি ঘরে। কিন্তু একবারও কি ভেবে দেখেছি, ঘরে জমা করে রাখার ফলে খাবারগুলোর গুণগত মান আদৌ বজায় থাকবে কি না? যে খাবার আমরা কিনে ঘরে জমা করেছি, সেগুলো আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা শক্তিশালী করার পক্ষে যথেষ্ট কি না? কারণ, করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো। পাশাপাশি যথাযথ কর্তৃপক্ষের দেওয়া স্বাস্থ্যসংক্রান্ত নির্দেশাবলি সঠিকভাবে পালন করা।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধের প্রথম ধাপ হলো ব্যক্তিগত সচেতনতা গড়ে তোলা এবং প্রত্যেকের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্থাৎ ইমিউন সিস্টেম বাড়িয়ে তোলা। এর ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের যে মারাত্মক লক্ষ্মণ অর্থাৎ শ্বাসযন্ত্র এবং পরিপাকতন্ত্রের সংক্রমণ, সেগুলো সহজে প্রতিরোধ করা সম্ভব। সহজভাবে বললে, যেকোনো ভাইরাস হলো প্রোটিন যুক্ত অণুজীব, যার কারণে মানুষ জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট এমনকি মারাত্মক নিউমোনিয়ায় (নতুনভাবে) আক্রান্ত হতে পারে। তা ছাড়া এই ভাইরাস ভয়ংকর প্রাণঘাতী রোগ তৈরি করতে পারে খুব সহজে। তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেশি পরিমাণে অ্যান্টি–অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে প্রতিদিন।
অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট হলো কিছু ভিটামিন, মিনারেল ও এনজাইম, যা শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকেলের (দেহের কোষ, প্রোটিন ও DNA ক্ষতি করে এমন কিছু) বিরুদ্ধে লড়াই করে, শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচিয়ে শরীরে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। প্রধান অ্যান্টি–অক্সিডেন্টগুলো হলো বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, সি, ই, লাইকোপেন, লুটেইন সেলেনিয়াম ইত্যাদি।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে অ্যান্টি–অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ যে খাবারগুলো বেশি করে খেতে হবে, সেগুলো হলো:
বিটা ক্যারোটিন: উজ্জ্বল রংয়ের ফল, সবজি। যেমন গাজর, পালংশাক, আম, ডাল ইত্যাদি।
ভিটামিন এ: গাজর, পালংশাক, মিষ্টি আলু, মিষ্টিকুমড়া, জাম্বুরা, ডিম, কলিজা, দুধজাতীয় খাবার।
ভিটামিন ই: কাঠবাদাম, চিনাবাদাম, পেস্তাবাদাম, বাদাম তেল, বিচিজাতীয় ও ভেজিটেবল অয়েল, জলপাইয়ের আচার, সবুজ শাকসবজি ইত্যাদি।
ভিটামিন সি: আমলকী, লেবু, কমলা, সবুজ মরিচ, করলা ইত্যাদি।
পেঁপেতে প্রচুর পেপেন এনজাইম আছে, যা মানুষের পাকস্থলীতে আমিষ হজমে সাহায্য করে। আরও আছে পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ভিটামিন সি। ছবি: রজত কান্তি রায়এ ছাড়া যে খাবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, সেগুলোর একটি তালিকা দেওয়া হলো। এ খাবারগুলো আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে তো বাড়িয়ে তুলবেই, সেই সঙ্গে আরও বিভিন্নভাবে আপনার শরীরকে সুস্থ থাকতে সহায়তা করবে।
সামগ্রিকভাবে উদ্ভিজ্জ খাবারই হলো অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের সবচেয়ে ভালো উৎস, বিশেষ করে বেগুনি, নীল, কমলা ও হলুদ রংয়ের শাকসবজি ও ফল। যে ধরনের খাবারগুলো আপনার প্রয়োজন, সেগুলোর তালিকা দেওয়া হলো।
১. সবজি: করলা (বিটা ক্যারোটিনসমৃদ্ধ), পারপেল/লাল পাতা কপি, বিট, ব্রোকলি, গাজর, টমেটো, মিষ্টি আলু, ক্যাপসিকাম, ফুলকপি।
২. শাক: যেকোনো ধরনের ও রঙের শাক।
৩. ফল: কমলালেবু, পেঁপে, আঙুর, আম, কিউই, আনার, তরমুজ, বেরি, জলপাই, আনারস ইত্যাদি।
৪. মসলা: আদা, রসুন, হলুদ, দারুচিনি, গোলমরিচ।
৫. অন্যান্য: শিম বিচি, মটরশুঁটি, বিচিজাতীয় খাবার, বার্লি, ওটস, লাল চাল ও আটা, বাদাম।
৬. টক দই: এটি প্রোবায়োটিকস, যা শ্বাসযন্ত্র ও পরিপাকতন্ত্র সংক্রমণের ঝুঁকি প্রতিরোধ করে। অন্যদিকে শাকসবজি, ফল, বাদামজাতীয় খাবার শরীরে নিউটোভ্যাক্স ভ্যাকসিনের অ্যান্টিবডি প্রক্রিয়াকে উন্নত করে, যা স্টেপটোকোক্কাস নিউমোনিয়া প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা রাখে।
৭. চা: গ্রিন টি, লাল চায়ে এল-থেনিন এবং ইজিসিজি নামক অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকে, যা আমাদের শরীরে জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অনেক যৌগ তৈরি করে শরীরে রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে।
৮. এ ছাড়া ভিটামিন বি-৬, জিংক–জাতীয় খাবার (বিচিজাতীয়, বাদাম, সামুদ্রিক খাবার, দুধ ইত্যাদি) শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির কোষ বৃদ্ধি করে। তাই এ ধরনের খাবার বেশি খেতে হবে।
৯. উচ্চ মানের আমিষজাতীয় খাবার (ডিম, মুরগির মাংস ইত্যাদি) বেশি করে খেতে হবে।
১০. অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের খুব ভালো কাজ পেতে হলে খাবার রান্নার সময় অতিরিক্ত তাপে বা দীর্ঘ সময় রান্না না করে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রায় রান্না করতে হবে।
লেবুতে আছে ভিটামিন সি। এ ভিটামিন জারণজনিত পীড়ন (oxidative stress) রোধে একটি অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। ওপরের খাবারগুলো ছাড়াও নিউমোনিয়া প্রতিরোধে উচ্চ আমিষযুক্ত খাবার বেশি করে খেতে হবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত কোষ ও টিস্যু দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে এবং পাশাপাশি নতুন টিস্যু তৈরি হবে। এর সঙ্গে দরকার পর্যাপ্ত ঘুম। অপর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম শরীরে কর্টিসল হরমোনের চাপ বাড়িয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, তাই পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।
যে খাবার বাদ দিতে হবে:
সব ধরনের কার্বনেটেড ড্রিংকস, বিড়ি, সিগারেট, জর্দা, তামাক, সাদাপাতা, খয়ের ইত্যাদি। এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় বাধা দিয়ে ফুসফুসে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়, ঠান্ডা খাবার, আইসক্রিম, চিনি ও চিনির তৈরি খাবার ; যা ভাইরাসের সংক্রমণে সহায়তা করে।
এ লেখার উদ্দেশ্য সঠিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে প্রত্যেকের শরীরে রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা উন্নত করতে সহায়তা করা, যাতে শুধু করোনাভাইরাস নয়, সব ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় আপনি শারীরিকভাবে সক্ষম থাকতে পারেন।
অলসতা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়:
করোনা ভাইরাস শরীরে কত সহজে থাবা বসাবে তা নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর। নিষ্ক্রিয় শরীর, সঙ্গে অবসাদ-উদ্বেগ: এই দুইয়ের যোগফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বিশ্ব বিখ্যাত ফিটনেস গুরু পল চেক দিচ্ছেন
‘ফোর ডক্টর থিয়োরি’
(১) ডক্টর মুভমেন্ট: এককথায়, শরীরচর্চা করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিশ্চিত ভাবে বাড়ে। আমাদের লিম্ফোটিক সিস্টেম হল জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মূল সৈনিক। এই সিস্টেমের অংশ অ্যান্টিবডি অতন্দ্র প্রহরীর মতো শরীরে ঘুরে বেড়ায় জীবাণুর খোঁজে। শরীর যত কার্যক্ষম হবে অ্যান্টিবডির প্রহরা ততই তীক্ষ্ণ হবে।
(২) ডক্টর হ্যাপিনেস: মনে আনন্দ থাকলে লিম্ফোটিক সিস্টেম ভাল কাজ করে। ২০ মিনিট এক্সারসাইজ করার পর মস্তিষ্কের ফিল গুড হরমোন এন্ডরফিনের ক্ষরণ শুরু হয়। বাড়ে অবসাদ কমানোর হরমোন সেরোটোনিন। গান শোনা, বই পড়া, এ সব তো আমরা জানিই। সঙ্গে ব্যায়ামটা জুড়ে নিন।
(৩) ডক্টর কোয়ায়েট: রাতে ভাল ঘুম। ঘুম ভাল হলে উদ্বেগ কমে। ইমিউন সিস্টেম ভাল কাজ করে। ধ্যান, ব্রিদিং ভাল ঘুমে সাহায্য করে।
(৪) ডক্টর ডায়েট: পালংশাক, ব্রকোলি, অ্যাভোগাডো, সবুজ সব্জি, টক দই, আমন্ড, আখরোট, কড লিভার তেল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সুতরাং সঠিক খাবার খেতে হবে।
করোনা রোধে সঠিক নিয়মে মাস্ক পরিধান করা:
এ বছরের (২০২০ খ্রি.) মার্চ মাসে যখন কোভিড–১৯–কে প্রথম মহামারি হিসাবে ঘোষণা করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, তখন তিনটে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ যা বিশ্ববাসীকে মেনে চলতে হবে, তার মধ্যে অন্যতম হল মাস্ক পরা। অন্য দু’টি হল সামাজিক দুরত্ব ও যথাযথভাবে হাত ধোওয়া। ল্যানসেটের করা সম্প্রতি এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে যে মাস্ক পরা, চোখকে সুরক্ষা দেওয়া ও ঠিকঠাকভাবে শারীরিক দুরত্ব বজায় রাখতে পারলে মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে কোভিড–১৯ সংক্রমণ হওয়ার হার হ্রাস পেতে পারে।
➽সব মাস্ক একরকম হয় না:
আপনি হয়ত এখন বাইরে পা দেওয়ার আগে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য মাস্ক পরেই বের হন। তবে আপনাকে এটা মাথায় রাখতে হবে যেন আপনার মাস্কটি তিনটি স্তরযুক্ত হয়, যেমনটা হু (WHO) সুপারিশ করেছে। মেডরেক্সিভ সম্প্রতি এক সমীক্ষায় জানিয়েছে যে, কটন ফেব্রিক মাস্ক কোভিড-১৯ প্রতিরোধে কার্যকর, তাই আপনি কটন মাস্ক ব্যবহার করছেন কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হন। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ আপনার মাস্ক যেন আপনার মুখে সঠিকভাবে বসে বসে যায়। যাতে আপনার মুখ ও নাক, মুখের কিছুটা অংশ ও চোয়ালের নীচটা ঢাকা পড়ে যায়। ঢিলেঢালা মাস্ক ভাইরাসের ঝুঁকি বাড়ায় আবার খুব আঁটসাঁট মাস্কেও শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, তাই এই দুই মাস্কের মধ্যে কোনওটাই যেন আপনার না হয়।
একবার আপনার হাতে সঠিক মাস্কটি এসে গেলে তা আপনাকে পরতে হবে, ব্যবহার করতে হবে এবং সঠিক পদ্ধতিতে পরিস্কারও করতে হবে। তার জন্য নিচের নিয়মগুলো মেনে চলুন:
➽ মাস্ক ছোঁয়া: মাস্কটাকে ঠিকঠাক করে পরার জন্য যদি এটাকে ছুঁতে হয়, তবে সার্স-কোভ-২ সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। মুখে হাত দেওয়ার অভ্যাস সচেতনভাবে এড়িয়ে চলতে হবে।
➽একই মাস্ক দীর্ঘসময় ধরে পরে থাকা: কোভিডের ড্রপলেটগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত তলদেশে জমা হতে থাকে এবং আপনার মাস্কও ব্যতিক্রম নয়। যদি আপনি একই মাস্ক সারাদিন ধরে পরে থাকেন তবে কোভিড-১৯ শুধু নয় অন্য সংক্রমণের ঝুঁকিও থেকে যায়।
➽ ভেজা মাস্ক পরা: আমাদের দেশে গ্রীষ্ণকালে আদ্রতা ও তাপমাত্রা এতটাই বেশি যে আপনি মাস্ক পরার কিছুক্ষণের মধ্যে ঘেমে যেতে বাধ্য হবেন। তাই অনেকেই মাস্ক ভিজিয়ে পরেন। তবে ভেজা মাস্ক পরলে তা দমবন্ধের পাশাপাশি ভাইরাসের ক্ষেত্রেও কম কার্যকর। তাই খুব সাবধানের সঙ্গে ভেজা মাস্ক খুলুন, ফেলে দিন অথবা আলাদা করে রাখুন এবং যখন আপনার প্রয়োজন নতুন একটি মাস্ক নিন।
➽ আপনার নাক উন্মোচন করা: মাস্ক আপনার নাককেও যথাযথভাবে ঢেকে রাখে, তাই নাক থেকে এটাকে খুলে রাখা মহামারির সময় কোনও বিকল্প নয়। যদিও মাস্কের ওপর থেকে নিঃশ্বাস নিতে গেলে কষ্ট হয় তাই কটন ফেব্রিক্স মাস্ক ব্যবহার করুন। মাস্কের ভেতর থেকে শ্বাস নেওয়া প্রয়োজন, নাক বের করে নয়।
➽ মাস্ক খুলে কথা বলা: মাস্ক খুলে কথা বলার অর্থ হল আপনি শুধু মাস্কটাকেই ছুঁলেন না তার সঙ্গে সঙ্গে সার্স-কোভ-২-এর ভাইরাসও ফোঁটার মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করে দিলেন।
➽ মাস্ক সঠিকভাবে খোলা হয় না: এই ছোট একটি ভুলও করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই মাস্ক খোলার সময় কানের পাশে থাকা স্ট্র্যাপ আগে খুলুন বা মাথার ওপর দিয়ে খুলে ফেলুন মাস্কটিকে না ছুঁয়ে। মাস্ক খোলার পর তাকে সঙ্গে সঙ্গে জীবাণুমুক্ত করতে হবে অথবা এটাকে সবকিছুর থেকে আলাদা রেখে দিন, যতক্ষণ না জীবাণুমুক্ত করছেন।
➽ যথাযথভাবে মাস্ক জীবাণুমুক্ত করা হয় না: যথাযথ জীবাণুমুক্ত না করে পুনরায় সেই মাস্ক ব্যবহার করা ঠিক নয়। প্রথমে মাস্কটিকে গরম জল ও সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে এরপর তা সূর্যের আলোয় পাঁচ ঘণ্টা শোকানোর জন্য রাখতে হবে অথবা পাঁচ মিনিট পর্যন্ত সেটিকে ইস্ত্রিও করতে পারেন, এগুলি স্বাভাবিক উপায়ে জীবাণুমুক্ত করা।
➽সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহারের নিয়ম: আমরা মূলত যেভাবে মাস্ক ব্যবহার করছি সেটা আসলে সঠিক নিয়ম না। কারণ যেকোনো ভাইরাস যেনো না ছড়ায় মূলত সে কারণেই আমরা এই মাস্ক ব্যবহার করি। এই মাস্কের নাম সার্জিক্যাল মাস্ক। সাধারণত যে মাস্ক প্রতিনিয়ত সবাই ব্যবহার করছেন সেটি সার্জিক্যাল মাস্ক। এই মাস্ক সুস্থ মানুষ আর অসুস্থ রোগির ক্ষেত্রে ব্যবহারবিধি ভিন্ন। সার্জিক্যাল মাস্ক এর সামনে নীল আর পেছনে সাদা রংয়ের থাকে। সুস্থ থাকলে শুধু দূষণ থেকে রক্ষার জন্য মাস্কটির সাদা রংয়ের অংশটি সামনে রেখে পরতে হবে এবং অসুস্থ হলে মানে জ্বর, ঠান্ডা, কাশি হলে নীল রংয়ের অংশটি সামনে রেখে মাস্ক পরতে হবে। বাজারে এই মাস্কগুলো সস্তায় পাওয়া যায়। নিয়ম অনুযায়ী একটি মাস্ক ৬ ঘণ্টার চেয়ে বেশি পড়ে রাখা যায় না।
কোভিড নিয়ন্ত্রণে সরকারি উদ্যোগ:
বিশ্বের বড় বড় উন্নত দেশ যেখানে কোভিড নিয়ন্ত্রণে হিমশিত খেয়েছে; সেই তুলনায় বাংলাদেশের সরকারি উদ্যোগ অনেক ভাল । সেই ২৫ মার্চ থেকে টানা ৬৬ দিন নির্বাহী আদেশে সরকারি অফিস আদালত ও পাবলিক পরিবহন বাস ট্রেন বন্ধ ছিল। তাতেও তেমন কোন লাভ হয়নি কারণ মানুষকে ঘরবদ্ধ করে রাখা যায়নি। সরকারিভাবে ত্র্রাণ সহায়তাও একেবারে কম দেয়া হয়নি। লকডাউন ভেদ করে উন্নত বিশ্বের হাজার হাজার মানুষ যেমন ঘর ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছিল, বাংলাদেশে কিন্তু তেমন অবস্থার সৃষ্টি হয়নি। সেদিক থেকে আমাদের সরকার সফল বলতেই হবে। ক্ষতি করেছে ডা. সাবরিনা ও শাহেদের মত জ্ঞান পাপী যারা বিনা করোনা টেস্টে ভুঁয়া রিপোর্ট দিয়ে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন; নষ্ট করেছেন দেশের ভাবমূর্তি । ওদিকে ত্রাণ সামগ্রী চুরির নামে সরকার দলের নাম ভাঙিয়ে কিছু ব্যক্তি দেশের ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে। মানুষের জীবনের হুমকি সৃষ্টি করেছে নকল মাস্ক সরবরাহ করে। কিন্তু এতদসত্বেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার কোন কমতি নেই। স্বাস্থ্যখাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। সরকার কৃষি উৎপাদনের ধারা সচল রাখতে বহুমুখি উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। সরকারের কৃষি সেক্টরের একটা গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত থেকে সেটা বেশ করে বুঝতে পারছি। অত্যন্ত প্রজ্ঞা ও প্রতুৎপন্নমতিতার সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঠাণ্ডা মাথায় সবকছিু নিয়ন্ত্রণ করে চলেছেন।
সাধারণ ভুলগুলো আমাদেরকে কোভিড আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে:
আমার নিজের নিবিড় পর্যবেক্ষণ থেকে দেখেছি, শিক্ষিত অশিক্ষিত সবাই আমরা কিছু সাধারণ ভুল করে চলেছি, তাতে করে আমাদের কোভিড আক্রান্তের ঝুঁকি ক্রমাগত বেড়েই চলেছে:
➽আমরা একটা মাস্ক পরে ঘর থেকে বেরুলেই ধরে নিই আমরা শতভাগ সুরক্ষিত। ব্যাপারটি মোটেও তা নয়!
➽কেউ আবার বারবার মাস্ক হাত দিয়ে ধরে নাকের উপরে প্লেসমেন্ট ঠিক করেন; তাতে করে হাতের সাথে থাকা জীবাণু মাস্কের উপরে লেগে গিয়ে অনয়াসে আমার নাক দিয়ে শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
➽কেউ আবার দিনের পর দিন সার্জিক্যাল মাস্ক পরে থাকে, কেউ আবার এটা ধুয়ে ব্যবহার করেন। এর কোনটাই সঠিক নয়। একটা সার্জিক্যাল মাস্ক ৬ ঘন্টার বেশি পরা ঠিক না।
কোন মাস্কই করোনা ভাইরাস রোধের জন্যে শতভাগ কার্যকরি নয়; তবু দু’টো মাস্ক পরলে কিছুটা নিরাপদ। তবে বাসায় আার পরে অথবা নিজের ব্যকক্তিগত পরিবহনে গেলে মাস্ক না পরাই ভাল কারণ দীর্ঘক্ষণ মাস্ক পরলে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়ে অন্য জটিলতা তৈরি করতে পারে।
➽ ইদানীং থুতনি মাস্ক পরার একটা হিড়িক পড়ে গেছে। অসংখ্য মানুষ এখন মাস্ক মুখে একবার পরে সেটা থুতনির উপরে ঘিন্টার পর ঘন্টা রেখে দেয়। এমন থুতনি মাস্ক পরা তো মাস্ক না পরারই নামান্তর।
➽কেউ আবার ওয়ান টাইম পিপিই বারবার ব্যবহার করছেন এটাও সঠিক নয়। অনেকবার ব্যবহার করা যায় এমন পিপিই প্রতিদিন ধুয়ে ব্যবহার করাটা ভাল।
➽হেড মাস্ক পরা জরুরি নয়; তবে এটা পরলে মাথায় উপরে কোন করোনা ড্রপলেট পড়লে সেটা হেডমাস্ক ফেলে দেয়ার সাথে সাথে সেটা নিরাপদে চলে যাবে।
➽হ্যাণ্ড স্যানিটাইজারের উপরে একেবারেই ভরসা করা যাবে না; কারণ এটা ভাল না মন্দ এটা যাচাই করার কোন উপায় নেই। সবচে ভাল সাবান পানি ব্যবহার করা।
➽কেউ কেউ আবার ভাইরাস মুক্ত করতে ডেটল বা স্যাভলন ব্যবহার করছেন। কিন্তু কোনভাবেই ডেটল বা স্যাভলন ভাইরাসকে ধ্বংস করতে পারেনা। ডেটল বা স্যাভলনে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক মারা যেতে পারে কিন্তু ভাইরাস নয়। ফলে বিভিন্ন বিপনি বিতানে সমানতালে ভাইরাস ধ্বংস করতে ডেটল বা স্যাভলন ব্যবহার করা হচ্ছে। এমন মিথ্যাচার বেড়াজালে পড়ে আমরা নিজেদেরকে বড় ধরনের ক্ষতি করে চলেছি।
➽তাছাড়া হাতে বারবার স্যানিটাইজার ব্যবহারে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে, তাই হ্যাণ্ডগ্লাভস ব্যবহার করা উত্তম।
➽অবচেতন মনে মানুষের হাত ঘন্টায় ২৩ বার মুখের উপরে চলে যায়, তাই হ্যাণ্ড গ্লাভস ও ফেসশীল্ড আপনার হাত যেন মুখে না যায় সে ব্যাপারে সতর্ক সংকেত জানাবে।
➽ একটা পরিস্কা কলম পকেটে রাখুন। মুখ বা নাক চুলকানোর দরকার হলে হাতের পরিবর্তে সেটা ব্যবহার করুন।
➽যানবাহনে চলার সময় বড় চশমা ও ফেসশীল্ড ব্যবহার করুন।কে কি বললো সেদিকে নজর দেয়ার দরকার নেই।
➽হাটে বাজারে মানুষের সমাগম দেখে কোনভাবেই মনে হয়না, মানুষের মধ্যে এই রোগ নিয়ে কোন প্রকার ভীতি আছে। পারলে একজন আরেকজনের উপরে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। সুতরাং কাকে কি বলবো? আইন করে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না, যদি মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি না হয়।
এত কিছুর পরেও চারিদিকে যেভাবে করোনা ছড়িয়ে পড়ছে সেখান থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া বড়ই কষ্ট। আল্লাহপাক তাঁর নিজ করুণায় আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন, এই দোয়া করি।
প্রকাশকাল: ০১ আগস্ট; ২০২০খ্রি.; ১৭ শ্রাবণ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলহজ ১৪৪১ হিজরী (ঈদুল আজহা।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: আমার এই সংকলিত লেখার ব্যাপারে আপনাদের যেকোন মতামত পরামর্শ জানালে খুশি হবো। সংযোজন, বিয়োজন, পরিবর্তন ও পরিমার্জন করে প্রকাশ করা হবে। আপনার মতামত জানান:
akhtar62bd@gmail.com নম্বরে ই-মেইলে অথবা
https://m.me/md.akhtaruzzaman.7 মেসেঞ্জারে।
Cell no: +8801711884191 ফোন করতে পারেন।