তরুণ তরুণীদের সেবায়

  • বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ছোট গল্প ছুটিতে লিখেছিলেন,“বার চোদ্দ বছরের ছেলের মত বালাই আর পৃথিীতে নাই”। আসলে টিনএজ(Thirteen to Nineteen) বয়সটা খুব খারাপ। এই সময়ে ছেলে মেয়েরা বড্ড বেশি অসহায় থাকে, কখনো বাবা মা বা অভিভাবকদের সাথে ঠিকমত মিশতে পারে না, পারেনা নিজের ভাব কারুর সাথে প্রকাশ করতে। এ বয়সে প্রেম ভালবাসা বা নৈতিকতা বিরোধী বিভিন্ন কাজে জড়িয়ে পড়ে নিজেকে অন্ধকারের জগতের দিকে নিয়ে যায়, ফলে এই বয়সী ছেলে মেয়েদের সাহায্যের বেশ দরকার হয়ে পড়ে। আমার ওয়েবসাইটের এই অংশে আমি সে ধরনের কিছু প্রতিবেদন আপনাদের জন্যে তুলে ধরতে চেষ্টা করছি। আশা করছি আমার এই লেখা তরুণ তরুণী ও তাদের অভিভাবকদের জন্যে শিক্ষণীয় এবং মূল্যবান সুখপাঠ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।আপনাদের সদয় জ্ঞাতার্থে আরো জানাচ্ছি যে, এ ব্যাপারে আপনাদের আরো কিছু জানার থাকলে আমাকে ইমেইল করে আপনার কথা লিখে জানান। আমার পক্ষ থেকে আপনাকে সকল প্রকার সহায়তা দিতে চেষ্টা করবো।আমাকে drakhtaruzzaman1962bd@gmail.com নম্বরে ইমেইল করুন।
  • এখানে যেসব বিষয়গুলোর সংযোজন করা হলো সে সবের শিরোনাম নিচে দেয়া হলো:
  • (১) তরুণ তরুণী ও তাদের অভিভাবকবৃন্দ প্লিজ লক্ষ্য করুন।
  • (২) প্রিয় তরুণ তরুণী বন্ধুগণ একটু মন দিয়ে নিচের লেখাটুকু পড়ে দেখ, ভাল লাগবে !
  • (৩) সুপ্রিয় অভিভাবকবৃন্দ, আপনার যুব কিশোর সন্তানদের সুপথে পরিচালনা করতে লক্ষ্য করুন!
  • (৪) প্রেম ভালবাসার ক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক হতে হবে:
  • (৫)  বিয়ের আগের অত্যাবশ্যকীয় ভাবনা:
  • (৬) বিয়ে পরবর্তী দাম্পত্য সম্প্রীতি রক্ষায় করণীয়:
  • (৭) ধুমপানের  ভয়াবহতা ও সেটার প্রতিকার:
  • (৮) মাদকাসক্তির ভয়াবহতা ও সেটার প্রতিকার:
  • (৯) আদর্শবান ছাত্র ছাত্রীই পারে পরিশীলিত দেশ জাতি ও সমাজ সমাজ গঠন করতে:
  • (১০) প্রকৃত শিক্ষালাভে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ছাত্র ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে কতিপয় গঠনমূলক পরামর্শ:
  • ==============================================
  • উপরের শিরোনামের বিষয়গুলোর ধারাবাহিক বিস্তারিত বিবরণ নিচে দেখুন!
  • (১) তরুণ তরুণী ও তাদের অভিভাবকবৃন্দ প্লিজ লক্ষ্য করুন: তরুণ তরুণী বলতে মূলত: আমি টিনএজার ছেলে মেয়েদের কথা বলছি, যাদের বয়স ১৩ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে। এই বয়সী ছেলে মেয়েদেরকে শিশু কিশোর বা যুবক হিসেবে অভিহিত করা যায়; কারণ জাতিসংঘ ঘোষিত শিশু অধিকার সনদে শিশুর বয়স ১৮ বছর ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে ১৬ বছরের নিচে ছেলে-মেয়েদেরকে শিশু ধরা হয়েছে কিন্তু ২০১১ সালের জাতীয় শিশু নীতি অনুযায়ী ১৮ বছরের নিচে কিশোর-কিশোরীকে শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়। বাংলাদেশের কারখানা আইনে শিশুর বয়স ১৬ বছর এবং দোকান ও প্রতিষ্ঠান আইনে ১২ বছর ধরা হয়েছে। খনি আইনে ১৫ বছরের নিচে, চুক্তি আইনে ১৮ বছরের নিচে এবং শিশু (শ্রম নিবন্ধক) আইনে ১৫ বছরের কম বয়সের মানবসন্তানকে বোঝানো হয়েছে। মুসলিম বিবাহ আইনে ১৮ বছরের কম বয়সের ছেলেমেয়েকে শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়। খ্রিস্টানদের তালাক আইনে ছেলের বয়স ১৬ এবং মেয়ের বয়স ১৩ বছর পর্যন্ত শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়। শিশু কিশোর কিশোরী আর যুবক যুবতীদের বয়স যা কিছুই হোক না কেন, সেটা এক্ষেত্রে তেমন কোন বিবেচ্য বিষয় নয়! বস্তুত: মানব সন্তানদের জন্যে বয়ঃসন্ধিকাল সময়টা ভারি ভয়ঙ্কর! এটা আমাদের দেশের মত তৃতীয় বিশ্বের মুসলিম দেশের নর নারীদের জন্যে আরো ভয়ঙ্কর কারণ বয়ঃসন্ধিকালের কতক অত্যবশ্যকীয় পরিবর্তন নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করার একটা সীমাবদ্ধ আবরণে মোড়কায়িত রয়েছে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা। অন্যদিকে পাশ্চত্য সংস্কৃতি আর কল্পিত বিশ্বের ডামাডোলে পড়ে নাকাল হচ্ছে আমাদের তরুণ তরুণীরা, বিভিষীকাময় হচ্ছে তাদের জীবনের সূচনা পর্ব। তাই এ ব্যাপারে তরুণ তরুণীদের যেমন তাদের জীবন বোধ সম্পর্কে সত্য আর সঠিক বিষয়গুলো জানা দরকার, তেমনি আমাদের মত যারা বয়োজ্যেষ্ঠ রয়েছে তাদের দায়িত্ব হলো  সামাজিক আবহনের মধ্যে থেকে যুব কিশোরদেরকে সঠিক পথের নিশানা দেখিয়ে দেয়া।
    কার্যত: অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে আমরা এমন একটা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি যখন চারদিকে সহজলভ্য নগ্নতার ছড়াছড়ি। এখন  কিশোর কিশোরীদের প্রায় সবার হাতে হাতে রয়েছে স্মার্ট মোবাইল ফোন। আপনার আমার কিশোর কিশোরী ছেলেমেয়ের মধ্যে হয়ত আপাত: কোন সমস্যা দেখতে পাচ্ছি না, সব ঠিক আছে। কিন্তু হঠাৎ দেখা গেল আপনার আমার কিশোর বয়সী ছেলে বা মেয়ের মোবাইলের মধ্যে কেউ যৌনতা সম্পর্কিত কিছু নগ্ন ছবি পাঠিয়ে দিয়েছে । ব্যাস শুরু হলো সমস্যা। আবার মনে করুন আপনার কিশোর কিশোরী ছেলেমেয়েরা কোন তথ্য খোঁজার জন্যে সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে অথবা আপনার নিজের বাড়িতেই ইন্টারনেট সংযোগ আছে; এই ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগে বন্ধু বান্ধবদের পাল্লায় পড়ে আপনার কিশোর ছেলে মেয়েটি কখন যে কোন নগ্ন উত্তেজক সাইটে ঢুকে গেছে ,আপনি নিজে সেটা ঘূর্ণাক্ষরেও বুঝতে পারবেন না; অথচ আপনার আমার ছেলে মেয়ে সেটার ব্যাপারে কৌতূহলী হয়ে সে লাইনে ঢুকে পড়ে নিজেকে অধ:পতনের অতল গহবরে নিয়ে যেতে শুরু করেছে। এ তো গেল এক ধরনের সমস্যা। বন্ধু বান্ধবদের পাল্লায় পড়ে ধূমপান সহ মাদকদ্রব্যে নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়াটাও অসম্ভব নয়! একবার যদি নেশাসক্ত হয়ে পড়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসা আপাত:দৃষ্টে অনেকটাই অসম্ভব। শুরুতেই একবার যদি জীবনের টার্নিং পয়েন্টে এসে সেটার গতিপথ অন্ধকারের গলিপথের দিকে ধাবিত হয়, তাহলে অন্ধকারের অতল গহবরে হারিয়ে যেতে পারে তরুন তরুণীদের অনাগত ভবিষ্যৎ জীবন। ছোট্ট এই জীবনের প্রতিটি দিন ক্ষণ একবার চলে গেলে সেটা আর ফিরে আসে না। ফলে শিশু কিশোরদের সঠিক পথে পরিচালনা করা আপনার আমার গুরু দায়িত্বের পর্যায়ভূক্ত, কোন সন্দেহ নেই।তাই শিশু কিশোর কিশোরী সহ তাদের অভিভাবকদের সঠিক পথে পরিচালনার লক্ষ্যে আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। সবচে বড় কথা অভিজ্ঞতা আর অভিজ্ঞতার সাথে কঠিনভাবে সম্পৃক্ত দৃষ্টিভঙ্গির মিথস্ক্রিয়াটা বড়ই জটিল। বয়স বাড়ার সাথে সাথে “অভিজ্ঞতা” আর “দৃষ্টিভঙ্গি”’র সতত: পরিবর্তন হতে থাকে। এই পরিবর্তন বয়সের সাথে ভীষণভাবে সম্পর্কিত; সুতরাং এ ব্যাপারে বয়ষ্কদের শিক্ষাই অন্যতম শিক্ষা। আর “অভিজ্ঞতা” ও “দৃষ্টিভঙ্গি”’র প্রকৃত শিক্ষাটা তরুন তরুণীদেরকে সঠিকভাবে দিতে হবে, তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে, জীবন এবং জীবনবোধ সম্পর্কে সম্যক ধারনা দিতে হবে যেন তারা সঠিকভাবে জীবনের সঠিক নিশানা খুঁজে পেতে পারে। আমার এই অংশের লেখার মধ্যে নিজের বয়সগত বাস্তব অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে সে ধরনের একটা সাদামাটা  প্রয়াস রেখেছি মাত্র। আশা করছি আমার এ লেখনী তরুণ তরুণী ও তাদের অভিভাবকদের জন্যে একটা সঠিক পথ নির্দেশক হিসেবে কিছুটা হলেও কাজ করবে।
  • =================================================
  • (২) প্রিয় তরুণ তরুণী বন্ধুগণ একটু মন দিয়ে নিচের লেখাটুকু পড়ে দেখ, ভাল লাগবে !
  • প্রিয় বন্ধুগণ,
  • তোমরা শৈশব ছাড়িয়ে জীবনের একটা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করতে যাচ্ছ। তোমাদের এই বয়সটা ভারি জটিল এবং কঠিন একটা সময়। জীবন গঠনের এই টার্নিং পয়েন্টে যদি একবার স্লিপ খেয়ে পড়ে যাও তাহলে তোমাদের অনাগত জীবনের দিনগুলো তমসাচ্ছন্ন হতে পারে আর যদি এই বয়সটাকে সেটার আপন গতিধারায় ঠিকঠাক পার করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পার, তাহলে সামনে তোমাদের জন্যে সুদিন অপেক্ষমান থাকবেই থাকবে। আর ইতোমধ্যে যদি তোমরা কেউ কোনভাবে বিপথগামী হয়ে থাক, তাহলে প্লিজ, এখনো সময় আছে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসো, আর যারা এখনো ভাল আছো তাদেরকে আরো ভালভাবে থাকার জন্যে আমার অভিজ্ঞতালব্ধ কিছু পারামর্শ তোমাদেরকে জানিয়ে দেব।আশা করছি এগুলো অনুসরণ করলে সেটা তোমাদের ভীষণ কাজে আসবে।
  • # এ সময়ে এই বয়সে প্রাকৃতিকভাবে তোমরা বেশ কিছু সমস্যার সন্মুখীন হবে, এসব সমস্যার কিছু শারীরিক কিছু মানসিক; এটাকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে পারলেই তোমরা সফলতা পাবে, নইলে একেবারে তলিয়ে যেতে পারো, যখন থেকে উঠে আসা অনেকটাই অসম্ভব।মনে রেখ অভিজ্ঞতার বড্ড দাম, যেটা বয়স থেকে অর্জন করতে হয়। তাই আমার সব কথা, সব আলোচনা, আমার অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকে, তাই তোমরা এটা বিশ্বাস করলে ঠকবে না, এটা তোমাদেরকে গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি। তোমাদের মধ্যে যারা মুরুব্বীদের কথা শুনে এবং মেনে চলে, তারা সেটার সুফল পায় হাতে হাতে। আর যারা আজকে আমার এই বাস্তব উপদেশ না শুনে নিজের স্বাধীন মত চলবে, একদিন বিপথগামী হয়ে মনে পড়বে এই অধম কতটা সঠিক কথা বলেছিল। তোমরা এখন এমন একটা সময়ের মধ্যে বসবাস করছো, এখন তোমাদের সামনের সকল জানালা দরজা খোলা আছে, সবকিছু সামনে তাকালেই দেখতে পাবে। তোমাদের কাজ হলো দেখার মত করে দেখা এবং সেসব মেনে চলা।আমার বিশ্বাস তোমরা সেটা করবে। সত্যিই বলতে আজকে তোমাদেরকে অনলাইনে উপদেশ দিচ্ছি, অথচ আমাদের ছেলে বেলা, আমরা এমন উপদেশ দেয়ার মত কোন মানুষকে কাছে পাইনি, কাছে তেমন কাউকে কাছে পেলে আমাদের অনেকের জীবনটা আরো সুন্দর হতে পারতো।ফলে আমরা অনেক কঠিন সময় পার করে আজকে এ অব্দি এসেছি। এবার তাহলে বন্ধুরা একটু মন দিয়ে লক্ষ্য করো:
  • # এসময় তোমাদের শরীরের কিছু পরিবর্তন তোমাদেরকে তোমাদের শরীরের ব্যাপারে কৌতূহলী করে তুলবে।এসব পরিবর্তনকে খুব স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে মনে করে খুব স্বাভাবিক থাকবে। যদি নিজেদের কোন শারীরিক সমস্যা বা পরিবর্তন তোমাদের কাছে বিশেষ কোন সমস্যা বা জটিলতা মনে হয় তাহলে নিরবতা ভেঙে সেটা নিজের আপন কোন আত্মীয় স্বজনদের সাথে  শেয়ার করবে; তবে কোনভাবেই কোন দুর সম্পর্কের কারুর সাথে এটা শেয়ার করবে না। এ সময়ে তোমার বখাটে কোন ছেলে বা মেয়ে বা বয়স্ক কারুর দ্বারা নিগৃহীত হতেই পারো, তাই এ ব্যাপারে মানুষ বুঝে সব সময় একটা সতর্ক দুরত্ব বজায় রেখে চলার চেষ্টা করবে।
  • তোমাদের নিজের শরীর নিয়ে কখনো তোমাদের মধ্যে খারাপ লাগতে পারে। এই বয়সে এটা কখনো কখনো হয়ে থাকে। দেখবে তোমাদের বয়সী একজন ছেলে বা মেয়ে আলাদা ধরনের শারীরিক গঠন নিয়ে বড় হচ্ছে। বেঁটে, লম্বা, কালো, ফর্সা , সুদর্শন, কদাকার নানান ধরনের বন্ধুদের দেখা মিলবে, এজন্যে মন খারাপ না করে এটাকেও স্বাভাবিক মনে করবে। বস্তুত: কার শরীরের গঠন কেমন হবে, এটার উপরে মানুষের কোন হাত নেই। বরং তোমাদের শারীরিক গঠন নয়, নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারলে নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতার কাছে সব কিছু ম্লান হয়ে যাবে। আর যারা সুন্দরী বা সুদর্শন, তোমাদের আশে পাশের মানুষ তোমাদেরকে সব সময় বাহবা দেবে, তোমাদের শারীরিক গঠন ও  বাহ্যিক সৌন্দর্যের গুণগান করবে। এটা নিয়ে আত্মতুষ্টির কোন সুযোগ নেই। মনে রেখ, কোয়ালিটি যদি না থাকে তাহলে বাইরের ঐ রূপ যৌবনের কোন দাম নেই। মানুষ গুণকে বেশী সমাদর করে, রূপকে নয়! অনেক সুন্দরী মেয়েদের পড়ালেখা হয়না, কারণ পারিপার্শ্বিক অবস্থা তাদেরকে মহা মূল্যাবান করে তোলে, ফলে তারা মনে করে, আরে কি হবে পড়ালেখা করে, আমি তো ভাল একটা ঘর বর পাবোই। এ ধারণাও আজকাল ফিকে হতে চলেছে।রূপ বেশিক্ষণ চলে না, যদি গুণ না থাকে। রূপ সাময়িক কিন্তু গুণ চিরস্থায়ী। মৃত্যুর পরে মানুষ অপর মানুষের গুণের কদর করে। তবে যাদের রূপ আছে তারা যদি সেটার সাথে গুণকে লালন করতে পারে তাহলে তারা হয় বিশেষভাবে স্মরণীয় ও বরণীয়।আশা করি তোমরা আমার এই উপদেশ মেনে চলবে।
  • # তোমাদের মানসিক পরিবর্তন এ সময় তোমাদেরকে অনেক বিষয়ে কৌতূহলী করে তোলে। দেহ মনে একটু প্রেমজ ভাব জাগ্রত হবে, ছেলেরা মেয়েদের প্রতি এবং মেয়েরা ছেলেদের প্রতি কৌতূহলী হয়ে ওঠে। তবে এ ব্যাপারেও তোমাদের মনকে সংযত করতে হবে। শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের এই সময়টাতে দেহ মনে প্রেমজ ভাব জাগ্রত হলেও এটাকে আমলে নেয়া যাবে না, তাহলে বিপথগামী হওয়ার সম্ভাবনা তোমাদেরকে গ্রাস করবে। এখানে প্রকৃতির কাছে মানুষ বড্ড অসহায়। তোমার মধ্যে প্রেম আছে ভালবাসা আছে, কিন্তু মনে রেখে সেটা পরিপূর্ণ নয়, কেবল সেটার শুরু, তাই সেটাকে সযতনে তুলে রেখো ভবিষ্যতের তরে, যখন ঠিক সময়টা আসবে, তখন সেটা ব্যবহার করো, বা করতে পারবে। আর যদি বখাটেদের প্রলোভনে পড়ে এই শিশু সুলভ ভালবাসাকে ব্যবহার করতে চাও, তাহলে পড়বে মহা সংকটে; এটা বাস্তবের প্রকৃত শিক্ষা যা আমরা আমাদের জীবদ্দশায় দেখেছি। অতএব খুদে বন্ধুরা সাবধান।আবার কেউ সিনেমা নাটক টিভি সিরিয়াল দেখে কিশোর বয়সে প্রেমের ফাঁদে পড়ে, যেটাও সঠিক নয়। সিনেমা নাটক আর বাস্ত চিত্রের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য বিরাজমান। এটা ভুলে যাবে না।
  • # এ সময় তোমার আশপাশের কিছু সম বয়সী বা ইঁচড়ে পাকা বন্ধুরা তোমাদেরকে খারাপ কোন ছবি বা ভিডিও দেখিয়ে তোমাদেরকে বিপথগামী করতে চেষ্টা করবে। দোহায় তোমাদের কখনো এ ধরনের প্রলোভনের পথে এগুবে না। কারণ এ পথে একবার প্রবশে করলে সেখান থেকে ফিরে আসা খুব কঠিন। বন্ধু বা বয়স্ক যেই হোক না কেন মানুষটা কেমন তাদের সম্পর্কে ভালমত না জেনে, না বুঝে তাদের কাছোকাছি হবে না; তাদের থেকে একটু দুরে থাকবে। কারুর আচরণ যদি স্বাভাবিক থেকে একটু অস্বাভাবিক মনে হয় তাহলে তাকে বা তাদেরকে কৌশলে এড়িয়ে চলবে।
  • # আরেক শ্রেণির বন্ধুরা তোমাদেরকে সিগারেট টানতে বা নেশাগ্রস্থ করতে চেষ্টা করবে। তোমাদেরকে এমনভাবে মগজ ধোলাই করতে চেষ্টা করবে, যে একবার এটার একটু স্বাদ নেয়াতে কোন সমস্যা নেই। মনে রেখ, ঐ নিষিদ্ধ জগৎটা এতটাই খারাপ যে, একবার সেটার স্বাদ গ্রহণ করতে গেলে সেখান থেকে সুস্থভাবে ফিরে আসা একেবারেই অসম্ভব। সব সময় লক্ষ্য রাখবে সিগারেট টানা বা নেশার স্বাদ নেয়া ভাল কিছু নয়, সুতরাং যারা তোমাকে এই অন্ধকারে পথের দিকে প্রলুব্ধ করবে তারা কখনো তোমার ভাল বন্ধু বা শুভাকাঙ্খী হতে পারে না।আসলে কেউ কোন বিপথে গেলে সে বা তারা চেষ্টা করে তার দল ভারি করতে। একথাটি তোমাদের ভুল করলে চলবে না।
  • # এ সময় নিজেদের কাছে নিজেদেরকে একটু মুরুব্বী মনে হতে পারে, তাই কখনো  বাবা মা বা অভিভাবকদের অনুশাসন মেনে চলতে কষ্ট হয়, তাদের কিছু কথা শুনে মেজাজ খারাপ হয়; এটা তোমাদের দোষ নয় এটা হলো ঐ বয়সের ধর্ম, তাই এ সব সমস্যাকে ধৈর্য্য সহকারে মোকাবেলা করতে হবে।  তোমরা বড় হয়ে যখন বাবা মা হবে তখন এটা বুঝতে পারবে; কিন্তু সমস্যা হলো বয়স তোমাকে বারবার অশান্ত করতে চাইবে, আর তোমার কাজ হবে সে পথ থেকে ফিরে নিজেকে শান্ত রাখা। তাই যতটা সম্ভব ধীর স্থির ও স্বভাবিক থাকতে চেষ্টা করবে। সব সময় মনে রাখবে অভিজ্ঞতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি বয়সের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। তাই তোমরা কোনমত করে স্বাভাবিক থেকে এই ক্রান্তিকালটা অতিক্রম করতে পারলে যখন আরেকটু বয়স হবে, বিশ্ববিদ্যালয়  স্তরে পড়াশুনা শুরু করবে তখন নিজেরা অনেক কিছু বুঝতে শিখবে; সে সময় জীবনটাকে তোমাদের নিজের মত করে সাজিয়েও নিতে পারবে।
  • # যতটা সম্ভব মনের গোলামী পরিহার করবে। মন বড় জটিল সত্বা, এটা খারাপের দিকে বেশি ধাবিত হতে চায়, আর তোমাদের কাজ হবে সেটাকে সেখান থেকে ফিরিয়ে এনে ভালোর পথে আলোর দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া।স্মরণে রেখ, পরিচ্ছন্ন স্বাভাবিক জীবনের মধ্যে আলাদা একটা শান্তি ও মজা আছে।
  • # এটা ঠিক যে সবার সব বাবা মার মন মানসিকতা এক রকমের নয়, তাই সংগত কারণে তোমাদের কারুর বাবা মা হয়ত তোমাদের সাথে একটু খারাপ আচরণ করতেই পারে, কিন্তু এ বয়সে তোমরা প্রতিবাদ করলেও সেটা ধোপে টিকবে না, বরং নিকটজন পাড়া প্রতিবেশিদের কাছে তোমরা বেয়াদব হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে। তাই এসব চিন্তা করে একটু cool down করতে হবে নিজের মেজাজকে। এরপর দেখবে বয়স কিছুটা বাড়ার সাথে সাথে উল্টো তোমার বাবা মা-ই তখন তোমার কথা শুনবে, তোমাকে আর তাদের সব কথা শোনা লাগবে না;  কোন বিষয়ে বাবা মাকে  বোঝালে তারাই তোমার কথা শুনবে, এটাই হলো বাস্তবের ধর্ম। সুতরাং কিছু সময় তোমরা যদি ধৈর্য্য ধরে থাকতে পার, তাহলে সামনে আর কোন অসুবিধা হবে না। আগেই বলেছি , এটা ইতিহাসের অমোঘ সত্য, কোন ভুল নেই, লক্ষ কোটি বছর ধরে এসব সত্য বলে প্রমাণিত হয়ে আসছে এবং ভবিষ্যতে সেটা একই ধারায় বহমান থাকবে।
  • # তোমরা এ বয়সে তোমাদের বাবা মা যত জ্ঞানী গুণীই হোক না কেন  তোমরা কিন্তু তাদের কোন কথা অনেক সময় শুনতে চাও না বা তাদের মূল্যায়ন করতে চাওনা । অথচ তোমার বাবা মাদের রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। সুতরাং বাবা মাকে বা তাদের জ্ঞান গরিমা অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতাকে কখনো ছোট করে দেখবে না। এটাও তোমাদের এই বয়সের একটা সহজাত প্রবৃত্তি । তাই তোমরা কখনো এটা করো না। এমন কেন হয় জানো? ছোটবেলা থেকে দেখতে দেখতে আর আদর পেতে পেতে নিজের বাবাকে তখন তোমাদের কাছে তোমাদের মতই অতি সাধারণ মানুষ বলে মনে হয়, সেই কারণে তোমাদের কাছে তোমার বাবা মা বা নিকাটাত্মীদের তেমন কোন গুরুত্ব থাকে না।
  • # তোমাদের কাজের স্বার্থে ইন্টারনেট ব্যবহার করার প্রয়োজন হতেই পারে কিন্তু সেখান থেকে কৌতূহলবশত: কোন খারাপ সাইটে ঢুকবে না। কৌতূহলকে নিবৃত্ করতে হবে কারণ কৌতূহলের পরিণাম এক্ষেত্রে ভয়ঙ্কর হতে পারে। মনে রেখ, সময়ের জিনিস সময়ে করতে হয়; ছোটকে ছোটর মত থাকতে হয় , কিশোরকে কিশোরের মত। খারাপ তো খারাপই। চোখ কান খোলা রেখে চলতে হবে ।স্মরণে রেখ তোমাদের চারপাশে ভাল মন্দ দুইই আছে।সুতরাং তোমাদের চেষ্টা থাকবে ভালকে ভালভাবে লালন করা এবং খারাপ কে বর্জন করে সেটা থেকে দুরে অবস্থান করা।
  • # মুরুব্বী বা বয়োজোষ্ঠদের  “দৃষ্টিভঙ্গি”“অভিজ্ঞতা” কে সম্মান করবে, কারণ তোমরা অনেক কিছু বুঝলেও “দৃষ্টিভঙ্গি”“অভিজ্ঞতা”কে ঠিকমত বুঝতে পারবে না কারণ এটার সম্পর্ক বয়স বৃদ্ধির সাথে ভীষণভাবে সম্পর্কিত।
  • # এই প্রজন্মের তোমাদের মধ্যে একটা বিষয় লক্ষ্য করা যায়, তাহলে ঘরে দরজা বন্ধ করে পড়ালেখা করা এবং গভীর রাত জেগে থাকা এবং দিনের বেলা ঘুমিয়ে থাকা। এটা কোন ভাল বিষয় নয়; গভীর রাতে একাকী জেগে থাকলে তোমাদের মনের মধ্যে খারাপ চিন্তু আসতে পারে; বস্তুত: এটা হলো অস্বাভাবিক জীবন যাত্রা। দিনের বেলা কাজের জন্যে ঘুমের জন্যে নয়।Early to bed, early to rise েএটা মেনে চলতে চেষ্টা করো।
  • =================================================
  • (৩) সুপ্রিয় অভিভাবকবৃন্দ, আপনার যুব কিশোর সন্তানদের সুপথে পরিচালনা করতে লক্ষ্য করুন!
  • # আপনার কিশোর বা যুবক বয়সী ছেলে বা মেয়ে বিপথগামী হচেছ কিনা, সে ব্যাপারে আপনাদেরকে সতর্ক থাকুন।
  • # আপনারা আপনাদের কিশোর কিশোরী ছেলে মেয়েদের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখুন। লক্ষ্য রাখুন তাদের বন্ধু বান্ধবের স্বরূপ এবং বন্ধুদের সাথে আপনার সন্তান কিভাবে মেলোমেশা করছে, কখন কোথায় যাচ্ছে সেটার উপরে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিন;
  • # বাসায় ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে সেটা কখন কিভাবে ব্যবহার করছে, কোন্ সাইটে কখন প্রবশে করছে, সেটা লক্ষ্য রাখুন;
  • # এই প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের সবচে বড় অসুবিধা হলো এরা সকল কাজ করে ঘরের দরজা বন্ধ করে ,এবং গভীর রাত জেগে পড়ালেখা করে আর দিনের বেলা ঘুমিয়ে থাকে; এই অবস্থা থেকে যেন স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে সে ব্যাপারে তাদেরকে উৎসাহিত করতে হবে। Early to Bed, early to rise এটার উপকারিতা সন্মন্ধে তাদেরকে সচেতন করে তুলতে হবে;
  • # সকল অবস্থায় ছেলে মেয়েদের মন মানসিকতা কে বুঝে তাদের সাথে ফ্রেণ্ডলি ব্যবহার করতে হবে। ছেলে মেয়েদের সাথে দুরত্ব বেড়ে গেলে সেখান থেকে বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে;
  • # অহেতুক বোকাঝকা করলে টিনএজার ছেলে মেয়েদের মনের উপরে সেটার তীব্র প্রতিক্রিয়া হতে পারে, সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। কখনো বকাবকির পরিণামে কিশোর মনে তীব্র মন:কষ্ট থেকে তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা জাগ্রত হতে পারে, সে বিষয়ে আপনকেই সতর্ক থাকতে হবে;
  • # লক্ষ্য করবেন কখনো আপনার ছেলে বা মেয়ে আপনার কথা শোনেনা কিন্তু আপনার কোন নিকটজনকে বেশ মান্য করে। এমন ক্ষেত্রে আপনার সন্তানের মটিভেশনের দায়িত্ব সেই বিশেষ ব্যক্তির উপরে ন্যস্ত করতে পারেন।
               আমার মনে হয়, উপরের বিষয়গুলোর উপরে যদি অভিবাবকেরা একটু গুরুত্বারোপ করেন তাহলে আমাদের যুব কিশোরদেরেক বিপথগামী হওয়া থেকে অনেকটাই পরিত্রাণ করানো সম্ভব।
  • =================================================
  • (৪) প্রেম ভালবাসার ক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক হতে হবে:
  • “প্রেম” এবং “ভালবাসা”, দুটো পৃথক কিন্তু কাছাকাছি শব্দ। আমরা কখনো এই দুটো শব্দকে একসাথে গুলিয়ে ফেলি; কিন্তু এই শব্দদ্বয়ের মধ্যে একটু মৌলিক ও গুণগত পার্থক্য আছে। শব্দ দুটো ভীষণ কাছাকাছি, কিন্তু তবুও একটা পার্থক্য তো আছেই। সাধারণভাবে বলতে গেলে  ভালোবাসাটা মানুষের আবেগ অনুভূতির একটা স্বাভাবিক রূপ। মানুষের প্রতি মানুষের ভালোলাগা, শ্রদ্ধাবোধ থেকেই মূলত ভালোবাসার উৎপত্তি।  ভালোবাসার সংজ্ঞাটা আরো ব্যাপক, এটা যে কোন ঘটনা, ব্যক্তি, প্রাণী, স্মৃতি, বিষয় ইত্যাদির ব্যাপারেও হতে পারে। বিশেষ কোন “সাবজেক্ট”-এর ব্যাপারে মানুষের বিশেষ অনুভূতির নামই ভালোবাসা। সবচেয়ে বড় যে পার্থক্য সেটা হলো, ভালোবাসা সাধারণত এক-তরফা হয়, বা  দু’তরফাও হতে পারে। যেমন ধরুন আপনি আকাশ ভালোবাসেন, কিন্তু আকাশ তো আপনাকে ভালোবাসতে পারেনা, পারলেও শুধু আপনাকে নির্দেশ করে সে (আকাশ) তার অনুভূতিকে প্রকাশ করতে পারছেনা বা পারেনা।প্রেমটা অবশ্যই দু’পক্ষের হতে হবে। শুধু এক পক্ষ থেকে প্রেম হয়না। প্রেমের গভীরতা / আবেদন ভালোবাসা থেকেও অনেক বেশী। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া একজন মানুষের প্রতি আপনার ভালোবাসা থাকতে পারে, তবে সেটাকে প্রেম বলা যাবে না। প্রেমটা তখনই হবে যখন বিষয়টা দু’দিক থেকেই হবে। তবে অবশ্যই সেটা ভালোবাসা থেকেও অনেক গভীর হতে হবে।বিজ্ঞানের ভাষায়, প্রেম বা ভালবাসা হলো আমাদের মস্তিষ্কের থ্যালামাসের এক ধরনের রাসায়নিক অবস্থা | যার জন্য একাধারে দায়ী আমাদের জিন। প্রেমের প্রথমদিকে হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, গাল – কান লাল হয়ে যাওয়া, হাতের তালু ঘেমে যাওয়ার উপসর্গ গুলো দেখা যায়; বিজ্ঞানীদের মতে সেসবের পেছনে দায়ী হলো ডোপামিন, নরেপিনেফ্রিন হরমোন।মাঝে মাঝে দেখা যায় কারো কারো প্রেমের আবেগ কমে যায়। তার কারণ মস্তিষ্ক থেকে ওই হরমোনগুলো নিঃসৃত হয় না। আবার এটাও দেখা গেছে যে কোনো মানুষের শরীরে কৃত্রিমভাবে এই হরমোন রসায়ন প্রয়োগ করা হলে তাদের মাঝে সেই প্রেমের অনুভূতি হয়।দুই প্রেমিক প্রেমিকার সদা ঘোর লাগা অবস্থার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কি? এ নিয়ে রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ববিদ হেলেন ফিশার এবং স্নায়ু চিকিৎসক লুসি ব্রাউন, আর্থার অ্যারোন প্রমুখ বিজ্ঞানীরা প্রায় ৪০ জন প্রেমে পড়া ছাত্র-ছাত্রীদের উপর এক গবেষণা চালান। তাদের গবেষণার ধরনটি ছিল এরকমের। প্রেমিক-প্রেমিকাদের সামনে তাদের ভালবাসার মানুষটির ছবি রাখা হল, এবং তাদের মস্তিষ্কের ফাংশনাল এমআরআই (fMRI) করা হলো।  দেখা গেলো, এ সময় তাদের মস্তিষ্কের ভেন্ট্রাল এবং কডেট অংশ উদ্দিপ্ত হচ্ছে, আর সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণে ডোপামিন নামক এক রাসয়ায়নিক পদার্থের নিঃসরণ ঘটছে। অবশ্য কারো দেহে ডোপামিন বেশি পাওয়া গেলেই যে সে প্রেমে পড়েছে তা নাও হতে পারে। আসলে নন-রোমান্টিক অন্যান্য কারণেও কিন্তু ডোপামিনের নিঃসরণ বাড়তে পারে।  যেমন, গাঁজা কিংবা কোকেইন সেবন করলে। সেজন্যই আমরা অনেক সময়ই দেখি ভালবাসায় আক্রান্ত মানুষদের আচরণও অনেকটা কোকেইন সেবী ঘোরলাগা অবস্থার মতোই টালমাটাল হয় অনেক সময়ই।
  • তবে ভালবাসার এই রসায়নে কেবল ডোপামিনই নয় সেই সাথে জড়িত থাকে অক্সিটাইসিন, ভেসোপ্রেসিনসহ নানা ধরনের বিতিকিচ্ছিরি নামের কিছু হরমোন। বিজ্ঞানীরা বলেন, এই হরমোনগুলো নাকি ‘ভালবাসা টিকিয়ে রাখতে’ মানে প্রেমিক প্রেমিকার বন্ধন দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করে। এমনকি বিজ্ঞানীরা এটাও বলেন কেউ মনোগামী হবে না বহুগামী হবে – তা অনেকটাই কিন্তু নির্ভর করছে এই হরমোন গুলোর তারতম্যের উপর। দেখা গেছে রিসেপটর বা গ্রাহক জিনে ভেসোপ্রেসিন হরমোনের আধিক্য থাকলে তা পুরুষের একগামী মনোবৃত্তিকে ত্বরান্বিত করে। বিজ্ঞানীরা প্রেইরি ভোলস আর মোন্টেইন ভোলস নামক দুই ধরনের ইঁদুরের উপর গবেষণা চালিয়ে তারা দেখেছেন, একগামিতা এবং বহুগামিতার মত ব্যাপারগুলো অনেকাংশেই হরমোনের ক্রিয়াশীলতার উপর নির্ভরশীল। এমনকি বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম উপায়ে ভেসোপ্রেসিনের প্রবাহকে আটকে দিয়ে একগামী ইদুঁরকে বহুগামী, কিংবা অতিরিক্ত ভেসোপ্রেসিন প্রবেশ করিয়ে বহুগামী ইঁদুরকে একগামী করে ফেলতে সমর্থ হয়েছেন।  বস্তুত: প্রেম ভালবাসার রসায়নটা সত্যিই একটু জটিল বিষয়।শিশু কিশোর থেকে এটার প্রভাব শুরু হয়, চলতে থাকে জীবনের শেষ প্রান্ত অব্দি।প্রেমটা মূলত ছেলে বা মেয়ের মধ্যে হয়ে থাকে কখনো আবার সমকামি প্রেমের প্রভাবও দেখা যায়। হাল আমলের গবেষণা বলছে সমকামি প্রেম নাকি জিন দ্বার নিয়ন্ত্রিত। প্রেমের স্বরূপ এবং রকমফের যা কিছুই হোক না কেন এটার প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়, যৌবনকালে।প্রেম নিয়ে কাব্য কথা সাহিত্য আর আপ্তবাক্যের ছড়াছড়ি, বিশ্বের তাবদ ভাষায়।প্রেমের মহাত্ম বর্ণনা করা হয়েছে নানাভাবে। প্রেমের প্রকাশ করা হয়েছে চমৎকার সব লেখনির মাধ্যমে। ছেলে মেয়েদের প্রেমের শেষ পরণতি বা পরিসমাপ্তি ঘটে বিয়ের মাধ্যমে।কেউ বলেন, বিয়ে নাকি প্রেমের সমাধি।বিয়ে যদি প্রেমের সমাধি হয় তাহলে প্রেমের সার্থকতা কোথায়।চটজলদি এখানে বাংলা ভাষার প্রেমিক প্রেমিকারা উত্তর দিয়ে বসেন, সমাধিতেও প্রেমের সার্থকতা আসতে পারে যদি সে সমাধি হয় তাজমহলের মত।     প্রেমের বসায়ন যা কিছুই হোক না আর প্রেমে শরীর ও মনে যে ধরনের জৈব রাসায়নিক পরিবর্তনেই হোক না কেন প্রেমের ক্ষেত্রে মানব মনের আবেগ কাজ করে ভীষণভাবে, আর এই আবেগ যার মধ্যে যতটা প্রখর প্রেমের ক্ষেত্রে তারা ততটা অস্থির হয়ে পড়ে, ঘটিয়ে ফেলে ঘটন অঘটন অনেক কিছু; কেউ প্রেমে ব্যর্থ হয়ে মূল্যবান জীবনের কাছে নিজেকে আত্ম সমর্পণ করতে কুন্ঠাবোধ করে না।যাদের মধ্যে আবেগের মাত্র বেশি এদের মধ্য থেকে আবার আবেগ অতি দ্রুতই তিরোহিত হতে থাকে, ফলে প্রেম উত্তর বৈবাহিক জীবনে দ্রুত নানান দাম্পত্য সম্পর্কের সৃষ্টি হয় এবং একটা পর্যায়ে প্রেমজ বিয়েটা ভেঙে যায়।এটা যে চিরন্তর সত্য সেটা হলফ করে বলা যাবে না; তবে এমন উদাহরণ কিন্তু কম নয়।সবচে বড় কথা প্রেমের বাজারে আর ভবের হাটে আবেগের প্রভাবটা বেশি থাকে এবং কিশোর বয়সের প্রেমটা ভয়াবহতায় রূপলাভ করে।     সাধারণভাবে একজন নর নারীর মধ্যে প্রেমের চূড়ান্ত রূপায়ন হলো বিয়ে। সুতরাং খুব সাদামাটা ভাবে যদি আমরা প্রেমটাকে এভাবে ব্যখ্যা করি যে, বিয়ের আগে ছেলে মেয়ের মধ্যে একটু আধটু প্রেমজ ভাব তৈরি হলে একে অন্যকে জানতে চিনতে ও বুঝতে পারে, কিভাবে সংসার পরবর্তী সংসার জীবনে নিজেরা নিজেদেরকে একে অন্যের সাথে এ্যাডজাস্ট করে নেবে, বিবাহ পূর্ব এ ধরনের প্রেমটা খুব খারাপ না। বাস্তবে সেটা সব সময় হয়ে ওঠে না।বিশেষ করে কিশোর বা যৌবনের প্রথম প্রহরের প্রেমে এতটা আবেগ কাজ করে যে,প্রেমিক যুগলের একে অন্যের কাছে তাদের কোন দোষত্রুটি ধরা পড়ে না।একে অন্যের প্রেমে মশগুল হওয়ার কারণে কারুর দোষত্রুটি বা কোন দুর্বলতাকে কেউ কোন ধরনের পাত্তা দেয় না, বা দিতে চায় না।কিন্তু প্রকৃতিগত কারণে বিয়ের পরে এই আবেগ ধীরে ধীরে জানালা দিয়ে পালাতে থাকে; একজনের কাছে আরেকজনের প্রকৃত স্বরূপ দৃশ্যমান হয়ে দাম্পত্য সংকটের সৃষ্টি হয়। এই ভুলটা কিশোর কিশোরীদের প্রেমের ক্ষেত্রে খুব বেশি হয়ে থাকে।কারণ বয়সগত কারণে এবং বাস্তবতার বাস্তব অভিজ্ঞতা আর দৃষ্টিভঙ্গির অপরিপক্কতার কারণে এই সংকট মহা সংকটে রূপান্তরিত হয়। সেজন্যে কিশোর বা প্রথম যৌবনের অপরিণত বয়সের প্রেমকে সব সময় মুরুববীরা খারাপ দৃষ্টিতে দেখে থাকেন।চলচিত্র এবং নাটকের বিভিন্ন কাহিনী ও উপাখ্যান সব সময় প্রেমের ব্যাপারে আমাদের নতুন প্রজন্মকে ইতিবাচক বার্তা দিয়ে এক ধরনের পরোক্ষ ক্ষতিই করে যাচ্ছে। এই অমোঘ সত্যটা আমাদের নব প্রজন্মকে বুঝতে হবে এবং আমাদের উচিৎ হবে তাদেরকে প্রেম ভালবাসার ক্ষেত্রে প্রকৃত সত্যটা সামনে তুলে ধরা। চলচিত্র ও নাটকের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রেমিক যুগলের এমন মোলায়েম চরিত্রের অধিকারী  দেখানো হয় যা বাস্তবের সাথে খুব কমই সংগতিপূর্ণ, ফলে সেটা দেখার পরে নব প্রজন্মের কিশোর কিশোরীরা এটাতে উদ্দীপ্ত হয়ে একটা ভুল পথে পা বাড়ায়। আবার এসব কল্প কাহিনীতে নায়ক নায়িকার যে ভাবে সামাজিক প্রতিষ্ঠার কাহিনী চিত্রায়ন করা হয়, আদতে সেটা সেভাবে ঘটে কি? খুব কমই ঘটে।এই নিরেট সত্যটা যেমন কিশোর কিশোরীদের বুঝতে হবে তেমনি তাদেরকে বোঝানোর গুরুভার পালন করতে হবে আমাদেরকেই। এটা ঠিক যে, পরিণত বয়সে বিয়ের আগে যদি ছেলে ,মেয়েদের মধ্যে প্রেমজ ভাব গড়ে ওঠে  এবং একে অন্যকে সত্যিকার ভাবে জানতে বা বুঝতে চেষ্টা করে বা বুঝে থাকে তাহলে সেটা ভাল ফল দিতে পারে।কিন্তু বালক বালিকাদের প্রেমে এমনটি হওয়ার সুযোগ খুব কম।     আমরা এখন যে সময় পরিবেশ প্রতিবেশে বসবাস করছি, তাতে করে ভাল সাবজেক্টে পড়ালেখা করার পরেও যে একটা ভাল চাকুরি জুটবে সেটার নিশ্চয়তা নেই বললেই চলে।তাই বেকার ছেলে মেয়েদের এ সময়ে প্রেম ভালবাসায় জড়িয়ে পড়ে বিয়ে করা মানে একটা নিশ্চিত বিপদ ডেকে আনা; এই পথ থেকে নব প্রজন্মকে ফিরিয়ে আনার সব রকম দাওয়াই দিতে হবে।নইলে তাদের কাছে একটা দায় আমাদের থাকবেই। আমাদের সমাজে বিশেষ করে মুসলমানদের মধ্যে চাচাত মামাত খালাত ফুপাত ভাই বোনদের মধ্যে প্রেম করার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। কাছাকাছি বা পাশাপাশি অবস্থানের কারণে এমনটি ঘটে থাকে।বিজ্ঞান কোনভাবেই এটাকে অনুমোদন করে না লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে এসব নিকটাত্মীয়দের মধ্যে যারা বিয়ে করেছেন তাদের সন্তান সন্ততিদের মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোন না কোন জটিলতা দেখা যায়। কেন হয় সেটার একটা ভাল বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে, সেটা না হয় অন্য কোথাও বিস্তারিত লেখা যাবে। মোদ্দাকথা আমাদের সকল সন্তান সন্ততিরা যেন এই অবস্থা থেকে নিজেদেরকে মুক্ত রাখে, সে ব্যাপারে তাদেরকে একটা সম্যক ধারনা দিতে হবে।এখন যা দিনকাল ও সময় পড়েছে তাতে করে বেকার অবস্থায় কোন ধরনের প্রেমের ঝুকি নেয় সমীচীন হবে।

প্রেমভালোবাসার সাথে সম্পর্কিত কতক মজাদার তথ্যমালা:-

# রিসংখ্যানে দেখা গেছে যে , প্রত্যেক ছেলে মানুষ বিয়ের আগে ৭ বার প্রেমে পড়ে

#“love” শব্দটি এসেছে সংস্কৃত lubhyati থেকে যার মানে ইচ্ছা ।

# বিয়ের আংটি সব সময় অনামিকা আঙ্গুলে পড়ানো হয়। কারণ সেই আঙ্গুলের সাথে হৃৎপিণ্ডের  সংযোগ আছে বলে ধরা হয়।

# গোলাপ ভালোবাসার প্রতীক এবং এর বিভিন্ন কালার ভালোবাসার বিভিন্ন অর্থ বহন করে। লাল গোলাপ- প্রকৃত ভালোবাসা, লাইট পিংক গোলাপ-ইচ্ছা; আকাঙ্খা, হলুদ গোলাপ-বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের জন্য।

# যে স্বামী তার স্ত্রীকে প্রতিদিন সকালে কিস করে সে অন্যদের চেয়ে পাচঁ বছর বেশি বাচেঁ।

# যারা নতুন নতুন প্রেমে পড়ে তাদের দেহে সেরেটোনিন নামক এক প্রকার হরমোন উৎপন্ন হওয়া কমে যায়। যার ফলে মন কিছুটা উদাস থাকে বা বিষণ্ণতায় ভুগে।

# প্রেমের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ ব্রেক-আপ হয়ে থাকে রিলেশনের ৫-৬ মাসের মাথায়।

# প্রেম হওয়ার একটি প্রধান ফ্যাক্টর হচ্ছে সবসময় সন্নিকটে বা কাছাকাছি থাকা। যার কারণে কলেজ বা ভার্সিটিতে প্রেম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

# পরিসংখ্যানে দেখা গেছে প্রকৃত প্রেমিকরা কিস করার সময় ডান গাল থেকে শুরু করে ।

# পৃথিবীতে  ৪০-৭০% নারীহত্যা সংঘটিত হয় তাদের প্রেমিক বা স্বামী দ্বারা।

# অনেক সংস্কৃতিতে চিরায়ত ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে সূতা বা দড়ি ব্যবহার করে যার মানে ভালোবাসার কোনো শুরুও নাই শেষ ও নাই।

# প্রেম ভালোবাসায় সুখের অনুভূতিগুলো ১ বছরের বেশি স্থায়ী হয়না কারণ মানুষের মস্তিষ্ক এই সুখের অনুভূতিগুলোর পুনরায় আসা অসম্ভব।

# কিছু কিছু দেশে ভালোবাসার ড্রেস কোড নামক কোড আছে যার ফলে আপনি বুঝতে পারবেন একটা মানুষ ভালোবাসার কোন পর্যায়ে আছে।

লাল ড্রেস: কারো সাথে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ।

গোলাপি ড্রেস: এখনো ফ্রি এবং সিঙ্গেল আছে।

কমলা ড্রেস: কারো জন্য অপেক্ষা করছে।

হলুদ ড্রেস: বন্ধুত্ব করার জন্য প্রস্তুত।

নীল বা আকাশী ড্রেস: কাউকে প্রপোজ করার পথে।

সবুজ ড্রেস: আপনার প্রোপোসাল গ্রহণ করেছে।

সাদা ড্রেস: বিরক্ত না করার নির্দেশ।

# ভ্যালেন্টাইন ডে তে বিক্রয় হওয়া ফুলের মধ্যে ৭৩% কিনে ছেলেরা আর বাকি ১৭% মেয়েরা।

# প্রতি ৫ জনের মধ্যে ২ জন প্রথম ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করতে পারে।

# প্রতিটি মানুষ তার সারাজীবনে গড়ে ২০,১৬০ মিনিট কিস করে।
# একটা প্রেমিক যুগলের প্রেম হওয়া থেকে শুরু করে শারিরীক সম্পর্ক গড়াতে মিনিমাম ৮ টা ডেটের প্রয়োজন।যেখানে আমেরিকান রা প্রথম দিনেই সেটা সেরে ফেলে।
# কাপলদের জন্য যেমন বিশ্ব ভালোবাসা দিবস আছে। তেমনি যাদের কেউ নেই তাদের জন্য আমেরিকাতে সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে “সিঙ্গেল ডে ” পালন করা হয়।
# মেয়েদের আকর্ষণ করার জন্য Eye contact খুব শক্তিশালী এবং প্রাথমিক হাতিয়ার

প্রেমভালোবাসা সম্পর্কে বিখ্যাত মনিষীদের কিছু উক্তি বা বানীঃ

# আনন্দকে ভাগ করলে দুটি জিনিস পাওয়া যায়; একটি হচ্ছে জ্ঞান এবং অপরটি হচ্ছে প্রেম। — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
# আমি থাকি তোমার প্রহরী তোমাকে যখন দেখি, তার চেয়ে বেশী দেখি যখন দেখিনা। – সুনীলগঙ্গোপাধ্যায়।
# ‘ছেলেরা ভালোবাসার অভিনয় করতে করতে যে কখন সত্যি সত্যি ভালোবেসে ফেলে তারা তা নিজেও জানে না। মেয়েরা সত্যিকার ভালোবাসতে বাসতে যে কখন অভিনয় শুরু করে তারা তা নিজেও জানে না।’ ……সমরেশ মজুমদার
# জীবন যেন একটা ফুল আর জীবনের ভালোবাসা হলো মধু স্বরূপ → সেকেনা।
# জীবনে দুটো জিনিস খুবই কষ্টদায়ক।একটি হচ্ছে, যখন তোমার ভালোবাসার মানুষ তোমাকে ভালোবাসে কিন্তু তা তোমাকে বলে না। আর অপরটি হচ্ছে, যখন তোমার ভালোবাসার মানুষ তোমাকে ভালোবাসে না এবং সেটা তোমাকে সরাসরি বলে দেয়।-সেক্সপিয়ার
# ‘যখন আপনি কাউকে ভালোবাসেন তখন আপনার জমিয়ে রাখা সব ইচ্ছেগুলো বেরিয়ে আসতে থাকে।’……এলিজাবেথ বাওয়েন
# যাকে ভালবাস তাকে চোখের আড়াল করোনা। → বঙ্কিম চন্দ্র 
# ‘যে ভালোবাসা পেল না, যে কাউকে ভালোবাসতে পারল না, সংসারে তার মতো হতভাগা কেউ নেই।’ ……কিটস্
# তুমি আমায় ভালবাস তাই তো আমি কবি আমার এ রূপ সে যে তোমার ভালবাসার ছবি  – কাজী নজরুল
# তুমি যদি কাউকে ভালোবাস,তবে তাকে ছেড়ে দাও।যদি সে তোমার কাছে ফিরে আসে,তবে সে তোমারই ছিল।আর যদি ফিরে না আসে,তবে সে কখনই তোমার ছিল না।-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
# দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম প্রেম বলে কিছু নেই। মানুষ যখন প্রেমে পড়ে, তখন প্রতিটি প্রেমই প্রথম প্রেম → হুমায়ূন আজাদ।
# দুটি জিনিস ছাড়া মানুষ সব লুকাতে পারে। এ দুটি হচ্ছে যদি সে মাতাল হয় আর যদি প্রেমে পড়ে। – এনাট ফেন্স।
# নারীর প্রেমে মিলনের সুর বাজে , আর পুরুষের প্রেমে বিচ্ছেদের বেদনা । – রবীন্দ্রনাথ
# প্রেম একটি চমৎকার অসুখ। কষ্ট পাওয়ার, তিলে তিলে, ধুকে ধুকে মরার জন্য এমন অসুখ খুব বেশী নেই। – তপংকর চক্রবর্তী।
# প্রেম একটি জলন্ত সিগারেট, যার শুরুতে আগুন এবং শেষ পরিণতি ছাই।- বার্নাডস।
# প্রেম মানুষকে শান্তি দেয়, কিন্তু স্বস্তি দেয় না → . বায়রন। 
# ‘প্রেমে পড়লে বোকা বুদ্ধিমান হয়ে ওঠে, বুদ্ধিমান বোকা হয়ে যায়।’……স্পুট হাসসুন
# প্রেমের ব্যাপারে যদি  কেউ জয়ী হতে চায়, তাহলে সে ক্ষেত্রে জয়ী হওয়ার একমাত্র অস্ত্র হলো পলায়ন করা। – নেপোলিয়ান।
# প্রেমের সাগরে নামার আগে জেনে নেওয়া ভাল, এ সমুদ্রের কোন তীরই হয় না। – সারসার সালানী।
# পাখিরা বাসা বাধে লতা পাতা দিয়ে, আর মানুষ বাধে ভালবাসা দিয়ে। → মুঃ ইসহাক কোরেশী
# বারবার একই ব্যাক্তির প্রেমে পড়া সার্থক প্রেমের নিদর্শন। → ব্রোটন
# বিশ্বাস করুন,আমি কবি হতে আসিনি,আমি নেতা হতে আসি নি-আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম,প্রেম পেতে এসেছিলাম-সে প্রেম পেলামনা বলে আমি এই প্রেমহীন নীরস পৃথিবী থেকে নীরব অভিমানে চির দিনের জন্য বিদায় নিলাম → কাজী নজরুল ইসলাম।
# বিয়ে হচ্ছে বুদ্ধির কাছে কল্পনার জয় আর দ্বিতীয় বিয়ে হচ্ছে অভিজ্ঞতার কাছে আশার জয়। – স্যামুয়েল জনসন, লেখক
# ‘বন্ধুত্ব অনেক সময় ভালোবাসায় পর্যবসিত হয়, কিন্তু বন্ধুত্বের মধ্যে কখনও ভালোবাসা থাকে না’ ……চার্লস কনটন
# বড় প্রেম শুধু কাছেই টানে না; ইহা দুরেও ছুড়ে ফেলে দেয়।- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
# ‘ভালোবাসা যখন অবদমিত হয়, তার জায়গা দখল করে ঘৃণা।’……হ্যাভনক এলিস
# ‘ভালোবাসা পাওয়ার চাইতে ভালোবাসা দেওয়াতেই বেশি আনন্দ।’……জর্জ চ্যাপম্যান
# ভালোবাসা হচ্ছে একটা আদর্শ ব্যাপার আর বিয়ে হচ্ছে বাস্তব। আদর্শ ও বাস্তবতার দ্বন্দ্ব তাই কখনো নিষ্পত্তি হবে না। -গ্যেটে, কবি
# ‘ভালোবাসতে শেখ, ভালোবাসা দিতে শেখ তাহলে তোমার জীবনে ভালোবাসার অভাব হবে না।’……টমাস ফুলার
# ভালোবাসা এবং যত্ন দিয়ে মরুভূমিতেও ফুল ফোটানো যায় → ..ডেভিড রস ।
# ভালবাসা এমন একটি প্লাটফরম যেখানে সব মানুষ দাড়াতে পারে। → টমাস মিল্টন
# ভালবাসা যা দেয় তার চেয়ে বেশী কেড়ে নেয় । – টেনিসন
# ভালবাসা তালাবদ্ধ হ্রদয়ের দরজা মুহূর্তে খুলে দেয় । – টমাস 
# মেয়েরা প্রথমবার যার প্রেমে পড়ে, তাকে ঘৃনা করলেও ভুলে যেতে পারে না। পরিষ্কার জল কাগজে পড়লে দেখবেন তা শুকিয়ে যাওয়ার পড়েও দাগ রেখে যায়….সমরেশ মজুমদার।
# সোনায় যেমন একটু পানি মিশিয়ে না নিলে গহনা মজবুত হয় না, সেইরকম ভালবাসার সঙ্গে একটু শ্রদ্ধা, ভক্তি না মিশালে সে ভালবাসাও দীর্ঘস্থায়ী হয় না।-নিমাই ভট্টাচার্

তথ্যসূত্র:www.bissoy.com,www.somewhereinblog.net,www.somewhereinblog.net

  • =================================================
  • (৫) বিয়ের আগের অত্যাবশ্যকীয় ভাবনা:
    বিবাহ  (Marriagematrimony বা wedlock) হল একটি সামাজিক বন্ধন বা বৈধ চুক্তি যার মাধ্যমে দু’জন মানুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়।বিভিন্ন দেশে সংস্কৃতি ভেদে বিবাহের সংজ্ঞার মধ্যে তারতম্য থাকলেও সাধারণ ভাবে বিবাহ এমন একটি বৈধ স্বীকৃতি যার মাধ্যমে দু’জন মানুষের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও যৌন সম্পর্ক সামাজিক স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়। অন্যভাবে বলতে গেলে, বিবাহ হল একটি বৈশ্বিক সার্বজনীন সংস্কৃতি। বিবাহ সাধারণত কোন রাষ্ট্র, কোন সংস্থা, কোন ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ, কোন আদিবাসী গোষ্ঠী, কোন  স্থানীয় সম্প্রদায় অথবা দলগত ব্যক্তিবর্গের দ্বারা স্বীকৃত হতে পারে। একে প্রায়শই একটি চুক্তি হিসেবে দেখা হয়। সাধারণত আনুষ্ঠানিক ভাবে ধর্মীয় অথবা ধর্মনিরপেক্ষ আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিবাহ সম্পন্ন করা হয়। বৈবাহিক কার্যক্রম সাধারণত দম্পতির মাঝে সমাজ-স্বীকৃত বা আইনগত দায়িত্ববোধ তৈরি করে, এবং এর মাধ্যমে তারা বৈধভাবে স্বেচ্ছায় সন্তান সন্তানাদির জন্ম দিতে পারে।আমাদের দেশে স্ব স্ব ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসারে বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে।দাম্পত্য সম্পর্ক সুরক্ষার জন্যে মুসলিম ধর্মে আইনগতভাবে বিয়ে রেজিস্ট্রিশন করা হয়। আনুষ্ঠানিকতার বাইরেও কেউ কেউ নিজেরা বিয়ে করে থাকে, কখনো কোর্টের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন করেন; হিন্দুরা ঠাকুর দেবতার মন্দিরে গিয়েও বিয়ে সম্পাদন করে থাকে।বিয়ে কিভাবে হলো না হলো সেটা এখানে বিবেচ্য নয়, বিবেচ্য হলো বিয়ের আগে কিছু বিষয় বিবেচনা করার দরকার আছে বৈ কি! আর যদি নিজেদের পছন্দে প্রেমের বিয়ে হয় সেখানে খুব বেশি ভাবনার চিন্তার থাকে না। আর প্রেম ভালবাসার বিষয়টি আগেই আলোচনা করেছি।  যারা বিয়ের করার জন্যে চিন্তা ভাবনা করছেন, তাদের চিন্তা ভাবনার সাথে আমার নিজের কিছু ভাবনার সংযোগ করতে চাইছি মাত্র, আশা করছি যেসব যুব কিশোর কিশোরীরা  বিয়ে করতে যাচ্ছে তাদের জন্যে এটা কাজে আসতে পারে
  • :# বিয়ের সময়: বেকার অবস্থায় কখনো বিয়ে করা ঠিক হবেনা।নিদেনপক্ষে একটা সম্মানজনক আয়ের ব্যবস্থা থাকার পরেই বিয়ে করতে হবে।চাকুরিজীবীরা চাকুরি পেলে আর দেরি করা উচিৎ হবে না।চাকুরি করার পরে কেউ যদি মনে করে যে, সংসার গুছিয়ে নিয়ে পরে বিয়ে করবে তাহলে সে নিশ্চিত করেই পিছিয়ে যাবে। বিয়ে মানে একটা বন্ধন , সন্তান সন্ততি জন্মদানের একটা বৈধ প্রক্রিয়া; সুতরাং দেরি করলে সেটার খেসারত পরে দিতে হয়; জীবনটা খুব ছোট এবং জীবনের মূল্যবান সময় আরো কম।দেরিতে বিয়ে করে সন্তান সন্ততির জন্মে দিলে সেটার খেশারত বৃদ্ধকালে দিতে হয়, যেটা আরো পীড়াদায়ক একটা ব্যাপার হয়ে যায়।
  • # বিয়ের বয়স: বাংলাদেশে সরকারি ভাবে বিয়ের জন্যে একটা নির্দিষ্ট বয়স আছে। ছেলেদের জন্যে ২১ বছর আর ,মেয়েদের জন্যে ১৮ বছর। এর আগে প্রেম করলেও বিয়ে করার সমীচীন নয়; কারণ এই বয়সের আগে শারীরিক ও মানসিক পূর্ণতা পুরোপুরি আসে না, ফলে এই বয়সে বিয়ের সিদ্ধান্ত একটা বড় ধরনের ভুল সিদ্ধান্ত হতে পারে।তবে আয় বাণিজ্যের ভাল ব্যবস্থা থাকলে বিয়েতে দেরি করা কোনভাবেই সঠিক নয়। বিয়ের পরে সন্তান নেয়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব করাটাও যথার্থ নয়।মনে রাখতে হবে আমাদের দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ব্যাপক হলেও বিয়ের পর পরই যে, আপনার সন্তান হবেই সেটা ভাববার কোন কারণ নেই। আজকের দিনে মেয়েরা পড়ালেখা শেষ করে চাকুরি নিয়ে তবেই বিয়ে করতে চায়; ফলে তাদের বিয়ের সঠিক বয়স পার হতে থাকে। আমি মনে করি ২৫ বছরের মধ্যে অবশ্যই মেয়েদের বিয়ে করা উচিৎ এবং ৩০ বছরের মধ্যে প্রথম সন্তান এবং অবশ্যই ৩৫ বছরের আগেই দ্বিতীয় সন্তান নিয়ে নিতে হবে, নইলে যে কোন সময় শাররিক জটিলতা তৈরি হয়ে সন্তান ধারণ কঠিন হয়ে যেতে পারে । মেয়েদের বয়স ৩৫ বছর পার হয়ে গেলে সন্তান ধারনের ক্ষমতা যেমন ধীরে ধীরে লোপ পেতে থাকে, তেমনি ৩৫ বছরের পরে প্রথম সন্তান ধারণ করলে সে সন্তান বিকলাঙ্গ হতে পারে। ফলে স্বামী স্ত্রী সবারই এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।সবচে বড় কথা বাচ্চা ধারনের উর্বরতা ক্ষমতার পরিধি খুব বেশি নয়। এই বাস্তব সত্যটি বিয়ের কনে ও কনের অভিভাবক সবাইকে মনে রাখতে হবে।
  • # বিয়ের পাত্র পাত্রীর বয়সের পার্থক্য: এক সময় আমাদের দেশে ছেলেরা খুব কম বয়সী মেয়ে বিয়ে করতে চাইতেন, কিন্তু সে ধারণা এখন ধীরে ধীরে অনেক বদলেছে। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা মেয়েদের বর খুঁজে পেতে রীতিমত ঝামেলায় পড়তে হতো। আগের দিনে গ্রাম দেশে একটা ধারনা প্রচলিত ছিল যে, বেশি বয়স্কা মেয়ের বিয়ে করলে ঘন ঘন সন্তান ধারণের পরে বউ দ্রুত বুড়িয়ে যাবে। কার্যত: এসব বিষয়গুলো এখন অনেকটাই থিতু হয়ে গেছে। বিশ্বের কিছু দেশ আছে যারা বেশী বয়সী মেয়েকে বিয়ে করতে পছন্দ করে, তাদের ধারণা বেশি বয়সী মেয়েরা খুব কেয়ারিং ও হেল্পফুল হয় এবং সংসার পরিচালনায় অভিজ্ঞ হয়ে থাকে। তবে ছেলে মেয়ের বয়স পার্থক্য খুব বেশি হলে মন মানসিকতা ও চিন্তা চেতনার ব্যবধানে কিছুটা সমস্যা দেখা দিতে পারে। অধিকন্তু স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বেশি বয়সের পার্থক্য থাকা সত্বেও অনেকে অনেক সুন্দরভাবে দাম্পত্য সম্পর্ক এ্যাডজাস্ট করে চলে। আবার বউ বর অপক্ষো বেশি বয়স্কা বউ হওয়ার পরেও ভালমত সংসার করতে দেখা যায়। তবে আমাদের সমাজে এখনো বর অপেক্ষা বউয়ের বয়স বেশি কে ভাল চোখে দেখা হয় না।স্বামী এবং স্ত্রী সমবয়সী হলে অনেকের ধারণা একটা মেয়ে যখন ৪৫-৫২ বছরের মধ্যে বয়ো:সন্ধিকালে উপনিত হয়, তখন কিছু শারীরিক জটিলতা হতে পারে। তবে এখন অত্যাধুনিক হরমোন থেরাপীর কারণে মেয়েরা খুব সহজেই সে অবস্থাকে কাটিয়ে উঠতে সমর্থ হয়।সার্বিক বিবেচনায় আমার মতে, স্বামী স্ত্রীর বয়স ব্যবধান বেশি না হওয়াটাই বাঞ্চণীয়।
  • # বাহ্যিক সৌন্দর্য্য: এ বড় জটিল সমস্যা। আমাদের দেশে ছেলেদেরকে বলা হয় সোনার আংটি। তাই পারিবারিক সমঝোতার বিয়েতে ছেলের চেহারার বাহ্যিক সৌন্দর্য্যকে তেমন একটা আমলে নেয়া হয়না। আমলে নেয়া হয় মেয়ের চেহারা কেমন সেটার উপরে। হালে এই ধারণা অনেকটাই বদলেছে। তবে ছেলে মেয়ের ক্ষেত্রে আমার পর্যবেক্ষণ হলো বাহ্যিক সৌন্দর্য্য রূপ বেশিদিন ভাল লাগে না, যদি সেখানে গুণের সমাহার না থাকে। তাই রূপের সাথে সাথে গুণকে প্রাধান্য দেয়া উচিৎ; এটা অবশ্য ছেলেদের ক্ষেত্রে। কোন মেয়ের যদি বাহ্যিক সৌন্দর্য্য তেমন গ্রহণযোগ্য না হয়, তাহলে এই সমাজে তাকে অনেক ছাড় দিয়ে নিজের ইচ্ছে অনিচ্ছাকে অবদমন করতে হয়!!  
  • # চাকুরিরত পাত্রী: বিয়ের কনে চাকুরি করে এটা অনেকেই পছন্দ করে না। তবে ইদানিং এটাকে অনেকখানি স্বাভাবিক মনে করা হচ্ছে।বউ চাকুরি করলে কিছু সমস্যা হয় এটা সঠিক, তবে সেটাকে সমন্বয় করে নিতে পারলে তেমন অসুবিধা হয়না; দেখতে দেখতে চাকুরি জীবন শেষ হয়ে যায়; তাছাড়া উচ্চ শিক্ষা নেয়ার পরে চাকুরি না করলে মেয়েরা মানসিকভাবে ছোট হয়ে যায়।চাকুরি করলে সংসারের স্বচ্ছলতা আনয়ন সহজতর হয়। সাথে সাথে এটাও ঠিক অনেক চাকুরিজীবী মেয়ে নিজের সংসারের বরের টাকাই খরচ করতে চায়, নিজেরটা নয়; সুতরাং কর্মজীবী মেয়ে বিয়ে করার আগে এসবে বিষয়গুলো বিয়ের ভাবি বর ও কনেকে আগে থেকে সেটেলড্ করে নিতে হবে।
  • # পাত্র পাত্রীর মানসিকতা: অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। তবে এটা অনেকটা ভাগ্যের উপরে নির্ভর করে। এ সমাজে বহু ধরনের ছেলে বা মেয়ে পাওয়া যায়, যাদের সামাজিক গ্রহযোগ্যতা অনেক ভাল; কিন্তু একান্ত নিজেদের পরিবেশে এদের মধ্যে ভয়ঙ্কর কুৎসিত রূপ দেখা যায়। যতটা সম্ভব এসব বিষয়গুলো গভীরভাবে তলিয়ে দেখতে হবে। বস্তুত: একবার দাম্পত্য কলহ তৈরি হলে সেটা চলতে পারে আমৃত্য। এ বিষযটি কতটা ভাগ্যের উপরে নির্ভরশীলও বটে!
  • # সর্বোপরি স্বামী স্ত্রী উভয়ের যদি ছাড়া দেয়ার মানসিকতা না থাকে তাহলে সে সংসারে শান্তি আনয়ন কখনো সম্ভব নয়।
  • # মনে রাখা জরুরী ১০০% শর্ত মেনে কখনো সমঝোতা ভিত্তিক বিয়ে করা সম্ভব নয়।সুতরাং বেশির ভাগ শর্তগুলো পূরণ হলে বিয়ে করে নেয়া উচিৎ।
  • # বিয়ের আগে বিয়ের পাত্র পাত্রীকে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে বিয়ের পরে সম্ভাব্য কি কি সমস্যা হতে পারে এবং সেসব উদ্ভূত সমস্যা কিভাবে মেটানো যেতে পারে।
  • # পারিবারিক বংশ মর্যাদার উপরে ছেলে বা মেয়ের চারিত্রিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্য নির্ভর করে, তাই এই বিষয়টিও  বিয়ের ক্ষেত্রে বিবেচনায় আনা জরুরী।
  • # কোন তথ্য বা পাত্র পাত্রীর কোন ধরনের দুর্বলতা একে অন্যের কাছে গোপন করা কোনভাবেই ঠিক হবে, এতে করে বিয়ের অব্যবহিত পর থেকে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
  • # বিয়ের ক্ষেত্রে কোনভাবেই কোন ধরনের আবেগকে পাত্তা দেয়া যাবেনা। তাহলে ভুল হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে
  • # বিয়ের আগে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পাত্র পাত্রীর অনাগত দাম্পত্য জীবনের জৈবিক সুখ কল্পনাকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে, ফলে অনেক জরুরী সত্যকে আমলে আনে না। বিয়ের অব্যববহিত পরে আমলে না নেয়া সত্যগুলো সামনে আসতে না আসতেই জটিলতা দেখা যায়।ফলে বিয়ের বাজারে অনেক কিছু হিসেব নিকেশ করতে হবে।
  • # বিয়ে করার আগে পাত্র পাত্রী নির্বাচনে ভুল হলে সেটার খেসারত আমৃত্য দিতে হয়। আশা করছি আমার প্রিয় বিয়ে ইচ্ছুক পাত্র পাত্রীরা বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে আমা কর্তৃক প্রণীত “বিয়ের আগে অত্যাবশ্যকীয় ভাবনা” কে একটু ভালমত ভাবতে চেষ্টা করবেন। (তথ্য সূত্র: স্ব-প্রণোদিত)
  • =================================================
  • (৬) বিয়ে পরবর্তী দাম্পত্য সম্প্রীতি রক্ষায় করণীয়:
  • “বিয়ের আগে অত্যাবশ্যকীয় ভাবনা” শীর্ষক এই লেখাটির আগের লেখাটির শেষাংশে উল্লেখ করেছি.“বিয়ে করার আগে পাত্র পাত্রী নির্বাচনে ভুল হলে সেটার খেসারত আমৃত্যু দিতে হয়”।অতীব সত্য কথা। হ্যাঁ একটা নিকৃষ্টতম জায়েজ কাজ হলো বিয়ে ছাড়াছাড়ি করে ফেলা। একটা বিয়ে ভেঙে দেয়ার কথা বলা যতটা সহজ,বিয়েটা সত্যি সত্যিই ভেঙে দেয়া অনেক জটিল একটা বিষয়! ফলে এ পথে পা বাড়ানো খুব সহজ নয়! আবার একটা বিয়ে ভেঙে দ্বিতীয় বিয়ে করলে সেটার পরিণাম যে এমনটি হবে না সেটার গ্যারান্টি আছে কী? মেয়েদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরো প্রকট হয়। যদি কোন কারণে মেয়েটির এক বা একাধিক বাচ্চা থাকে তাহলে তো সমস্যার অন্ত নেই।প্রতিবেশি দেশের চুইংগাম মার্কা সব টিভি সিরিয়ালে বেশ ঘটা করে দেখানো হয় যে, বিয়ের বাজারে স্বামী পরিত্যাক্তা, তালাকপ্রাপ্তা বা বিধবা বা কুমারী মাতা মেয়েদের দাম যেন একটুও কমে না; বরং বিয়ের বাজোরে এসব পাত্রীদের দাম আরো অনেক বেড়ে যায় ; যার সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই, না আমাদের দেশে না প্রতিবেশি দেশ ভারতে। আমি মনে করি বিয়ে ভাঙার ক্ষেত্রে প্রতিবেশি দেশের টিভি সিরিয়াল একটা বেশ ভাল ভূমিকা পালন করছে। বিগত ১৮ নভেম্বর, ২০১৭ তারিখের প্রকাশিত দৈনিক “বাংলাদেশ প্রতিদিন” এর এক লীড নিউজ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে দ্বিগুণ হারে ডিভোর্স বেড়ে যাচ্ছে। জাতীয় দৈনিকটি  বিবাহ বিচ্ছেদের এই খবরকে সামাজিক অবক্ষয়ের এক বড় ধরনের অশনি সংকেত হিসেবে দেখছে; পত্রিকাটি কারণ হিসেবে তথ্য গোপন করে বিয়ে করা, মনোগত দুরত্ব, স্বামী স্ত্রীর প্রবাসে বসবাস, পরকীয়া প্রেম ইত্যাদিকে দায়ী করা হয়েছে।মজার ব্যাপার হলো বিবাহ বিচ্ছেদের এই হার শিক্ষিত ও স্বাধীনচেতা মেয়েদের মধ্যে বেশি দেখা যাচ্ছে। সুতরাং দাম্পত্য সম্প্রীতি সংরক্ষনার্থে আমরা একটা পাথর সময় অতিক্রম করছি।তাহলে এই সমস্যার সমাধানের উপায় কী? আমার নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে এই সমস্যা সমাধানের জন্যে আমার ব্যক্তিগত কিছু অভিমত রয়েছে, সেটা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাইছি মাত্র:    
  • # প্রথম কথা হলো দাম্পত্য জীবনে স্বামী স্ত্রী উভয়কে তাদের দাম্পত্য সংসারের ব্যাপারে দায়িত্বশীল হতে হবে । দাম্পত্য জীবনে কি কি ধরনের সমস্যা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হতে পারে এবং সেসব সমস্যা কিভাবে সমাধান করা যায় এ ব্যাপারে দুজনের মধ্যে একটা পরিষ্কার ও স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে।    
  • # বস্তুত: দাম্পত্য সম্পর্ক সুসংহত রাখার জন্য স্বামী স্ত্রী উভয়কে একটা সিরিজ অব কম্প্রোমাইজ (Series of compromise ) করে চলতে হবে, নইলে সে সংসারে কখনো শান্তি থাকবে না;    
  • # উভয় উভয়ের প্রতি একটা ভক্তি ও শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে।নিজেদের মধ্যে কোন সমস্যা থাকলে ঠাণ্ডা মাথায় সেটাকে কিভাবে নিরাময় করা যায়, সে পথ নিজেদেরকেই বের করতে হবে;    
  • # একজন কোন কারণে উত্তেজিত হলে অপরজনকে ঠাণ্ডা থাকাটা বুদ্ধিমানের কাজ।দু’জনে উত্তেজিত হলে সেখানে সংঘাত অনিবার্য।    
  • # নৈতিক স্খলন জনিত অপরাধ থেকে স্বামী স্ত্রী উভয়কে বিরত থাকতে হবে;
  • # সংসারে কখনো একজনের আধিপত্যের  প্রয়োজন হতে পারে। ফলে স্বামী, স্ত্রীর কথামত চলতে পারে, আবার সংসারের শান্তি আনয়নের জন্যে যদি স্ত্রীর কথায় যদি স্বামী চালিত হয়ে থাকে তাহলে সেটাও দোষনীয় নয়।কাউকে স্ত্রৈণ লেলেও যদি ঐ সংসারে শান্তি থাকে তাহলে খারাপ কীি?
  • # বিয়ে করার পরে কখনোই এই চিন্তা করাটা বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক হবেনা যে, আমি অমুক কে বিয়ে করলে ভাল হতো । এ ধরনের মানসিকতা নিয়ে বড্ড জটিলতার সৃষ্টি হয় একবার বিয়ে হওয়ার পরে সেটাকে ভাগ্য বলে মেনে নেয়াই শ্রেয়। 
  • # যদি কখনো কোনভাবে মনে হয় যে, একে অন্যের সাথে কোনভাবেই সংসারে একত্রে থাকা সম্ভব হচ্ছে না, তাহলে সেটা শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান করা যেতে পারে।দাম্পত্য সম্পর্কে অবনতি হচ্ছে এমন বুঝতে পারলে সন্তান গ্রহণ থেকে বিরত থাকা বাঞ্চনীয়। এ সমাজে এক ধরনের আঁতেলের দেখা পাওয়া যায় যারা বলে থাকে সন্তান ধারণ করলে দাম্পত্য সম্পর্ক পুনরুদ্ধার হয়; এ রকমের ধারণা কোনভাবেই সঠিক নয়।বিয়ে ভাঙার আগে ভাবতে হবে পরের বিয়েটা আরো খারাপ হতে পারে। তবে এটা ঠিক একটা বিয়ে ভেঙে, বিয়ে বিহীন অবস্থান গোটা জীবন কাটানো ছেলে মেয়ে উভয়ের জন্যেই পীড়াদায়ক;
  • # আমার মনে হয় ধর্মীয় বিশ্বাস, আস্থা ও খোদাভীতি অনেকখানি দাম্পত্য সম্প্রীতি আনয়ন করতে পারে।
  • মোটাদাগে যেসব কারণের জন্যে দাম্পত্য জটিলতার সৃষ্টি হয় তাহলো:           (১) কোন প্রকার তথ্য গোপন রেখে বিয়ে করলে;    
  •      (২) পাত্র পাত্রীর বিশেষ কোন দুর্বলতা থাকলে যা আগে জানানো হয়নি;    
  •      (৩) বিভিন্ন বিষয়ে মনের বা মতের অমিল হলে;    
  •      (৪) পারস্পারিক ভক্তি, শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, আস্থা, আকর্ষণ ও ভালবাসার ঘাটতি হলে;    
  •      (৫) বিয়ে বহির্ভূত কেউ কোন অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে গেলে;    
  •      (৬) সংসারের প্রতি দায়িত্বজ্ঞানহীন ও উদাসীন থাকলে;    
  •      (৭) পারস্পারিক কর্তব্য কর্মে ঘাটতি থাকলে;    
  •      (৮) উভয়ের মধ্যে স্ব স্ব আত্মীয় পরিজনদের প্রতি কেউ বৈষম্যমূলক আচরণ করলে;    
  •      (৯) স্ত্রীর আয় হতে অর্জিত টাকা সংসারে ব্যয় না করলে;    
  •     (১০) বিনা কারণে বা সূক্ষ কারণে অহেতুক প্রতিনিয়ত ‘ক্যাচক্যাচানি’ করা;            (১১) এমন কিছু স্বামী বা স্ত্রীর দেখা মেলে যারা সব সময় লাভে থাকতে চায়; শুধু ভোগ করতে চায়, ত্যাগ করতে নয়। এ ধরনের মানসিকতা পরিহার না করলে দাম্পত্য সম্প্রীতি বজায় রাখা সম্ভব নয়;   
  •      (১২) নিজেকে চেনা, নিজেকে জানা এবং নিজেকে ঠিকমত কেউ বুঝতে না চাইলে সেই সংসারে অশান্তি অনিবার্য।
  • =================================================
  • (৭) ধুমপানের ও ভয়াবহতা ও সেটার প্রতিকার:
  • ১৯৮৭ সাল থেকে প্রতিবছর ৩১ মে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও এর সহযোগী সংস্থা সমূহের উদ্যোগে  বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস(World No Tobacco Day) পালন করা হয়।  তামাকের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তুলে ধরে তামাক ব্যবহার প্রতিরোধে কার্যকর নীতিমালা প্রণয়নই দিবসটি পালনের লক্ষ্য । প্রতি বছরই এ দিবসটির একটা প্রতিপাদ্য বিষয় থাকে। ধুমপান এবং তামাক যারা নিয়মিত সেবন করে তারা শুধু তার নিজের শরীরের উৎকর্ষ সাধনকেই ব্যহত করে না, প্রকারন্তরে এটা সমাজ দেশ এবং বৈশ্বিক উন্নয়নকেও বাঁধাগ্রস্থ করে। জাতিসংঘের কনভেনশনে (FCTC) তামাককে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পদার্থ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিড়ি, সিগারেট, জর্দা, গুল, চুরুট কিংবা হুক্কা সবই বিষধর পদার্থ যা মানুষের মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত সর্বাঙ্গ আক্রান্ত করে।
    তামাক এবং বিড়ি সিগারেটের ধোঁয়ায় ৭ হাজারের বেশি ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে। যার মধ্যে ৭০টি রাসায়নিক পদার্থ সরাসরি ক্যান্সার সৃষ্টিতে সক্ষম। এর মধ্যে নিকোটিন, কার্বন মনোক্সাইড, হাইড্রোজেন সায়ানাইড, বেনজোপাইরিন, ফরমালডিহাইড, এমোনিয়া, পোলোনিয়াম উল্লেখযোগ্য। মানব মৃত্যুর শতকরা ৬৩% অসংক্রামক রোগ এবং তার মধ্যে একমাত্র দায়ী হচ্ছে তামাক ও তামাতজাত দ্রব্য।
  • ★★বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০ জনে ০১ জনের মৃত্যুর কারণ হিসেবে সরাসরি তামাককে দায়ী করা হয়। শরীরের এমন কোন অঙ্গ খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে তামাক জাতীয় দ্রব্য সেবন ক্ষতি করে না। তবে এদের প্রধান আক্রমণস্থল হলো; হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস ও ব্রেইন; ফলশ্রুতিতে হৃদরোগ, ব্রংকাইটিস, স্ট্রোক ও ক্যান্সারের মত রোগ দেখা দেয়। দেশে বিদেশে যত রোগী ক্যান্সারে মারা যায় তাদের মধ্যে ২২% মারা যায় ফুসফুসের ক্যান্সারে, যার অন্যতম কারণ ধূমপান।
  • ★★ দিনে এক প্যাকেট সিগারেট সেবন করে এমন ব্যক্তির ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা, অধূমপায়ী অপেক্ষা ৮৩% বেশী!!
  • ★★ ধুমপায়ীরা শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে থাকে এবং এরা নানান ধরনের শ্বাসকষ্টেও ভোগেন প্রায়শই । বর্তমান বিশ্বে ১০০ কোটিরও অধিক প্রত্যক্ষ ধূমপায়ী রয়েছে।
  • ★★ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে বিশ্বে প্রতি ৮ সেকেণ্ডে একজন করে মারা যাচ্ছে তামাক ও ধূমপান সেবনজনিত কারণে।
  • ★★বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অপর তথ্যানুসারে ১০০০ টন তামাক উৎপাদনে ১০০০ মানুষ মারা যাচ্ছে।
  • ★★ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অপর উপাত্তানুসারে ধুমপানজনিত কারণে মারা যাবে:-
    ২০০০ থেকে ২০২৫ এর মধ্যে ১৫ কোটি মানুষ;
    ২০২৫ থেকে ২০৫০ এর মধ্যে ৩০ কোটি মানুষ;
    ২০৫০ থেকে ২১০০ এর মধ্যে ৫০ কোটি মানুষ;
    যা হবে বিগত শতাব্দী অপেক্ষা ১০ গুণ বেশী !!

বাংলাদেশে তামাকের ব্যবহার :

         ★★ পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি তামাক ব্যবহারকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এ দেশে ৪ কোটি ৬০ লাখ (৪৩%) প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ সিগারেট, বিড়ি এবং ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন করেন। ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবনের মধ্যে ২. ৫৮% পুরুষ এবং ২৯% নারী।

         ★★ বাংলাদেশে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে তামাক আসক্তি একটি উদ্বেগজনক বিষয়; ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সের প্রায় ৭% কিশোর-কিশোরী তামাকপণ্য ব্যবহার করে। (Global Youth Tobacco Survey (GYTS) ২০১৩ অনুযায়ী)।

         ★★ বাংলাদেশে মুখ এবং গলার ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৯০% রোগই হয় ধূমপানের কারণে।

         ★★ বাংলাদেশে শস্তা তামাক দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে তামাক ব্যবহারে প্রলুব্ধ করে। বাংলাদেশে ২৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, দারিদ্র্যসীমার আশপাশে বাস করে আরো বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী। তামাক ব্যবহারে স্বল্প আয়ের মানুষ স্বাস্থ্যক্ষতির পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দরিদ্র আরো দরিদ্র হয়ে পড়ছে।

        ★★ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপে (২০০৪-২০০৫) বাংলাদেশে অর্থনীতিতে তামাকের প্রভাব অনুযায়ী তামাক ব্যবহারের ফলে ১২ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহারজনিত প্রধান ৮টি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং এসব রোগীর ২৫% মাত্র হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন ধরে নিয়ে হিসাব কষলে দেখা যায়, এর ফলে দেশের অর্থনীতিতে ৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। অপর দিকে তামাক খাতে অর্থনীতি বছরে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা আয় হয়। সুতরাং তামাক ব্যবহারের ফলে দেশের অর্থনীতিতে বছরে নিট ক্ষতির পরিমাণ ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

        ★★ গবেষণায় দেখা গেছে, সরকার তামাক খাত থেকে যে পরিমাণ রাজস্ব পায় তামাকজনিত অসুস্থতা ও রোগের চিকিৎসায় তার প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়ে যাচ্ছে।

        ★★ দেশে নীরবে চলছে তামাক চাষের আগ্রাসন। গত ছয় বছরে তামাক চাষে ব্যবহৃত জমির পরিমাণ বেড়েছে দ্বিগুণ। জমিতে দীর্ঘদিন তামাক চাষের কারণে জমির উর্বরাশক্তি কমে যাচ্ছে। তামাক চাষে ব্যাপকভাবে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পরিবেশে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এক টন তামাকপাতা পোড়াতে ৫ টন জ্বালানি কাঠের প্রয়োজন হয়। তামাক প্রক্রিয়াজাত করতে প্রচুর গাছ কাটা হচ্ছে, যা পরিবেশকে ধ্বংস করছে।

  • ধুমপান ছাড়ার জন্যে আপনার করণীয়:এতকিছুর পরে একজন বিবেকবান মানুষ হিসেবে আপনি যদি ধুমপায়ী হয়ে থাকেন তাহলে আজই ধুমপান ছাড়ুন এবং ধুমপান ছড়ার জন্যে আপনার ইচ্ছে শক্তিই যথেষ্ট। আপনার ইচ্ছেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে আপনার জন্যে ধুমপান ছাড়া সহজতর হবে।বিশেষজ্ঞ মতানুসারে প্রথমে ধুমপান STOP করার জন্যে আপনাকে যা START করতে হবে সেটা নিচে দেয়া হলো:
  • S = Set a quit date (সুবিধামত একটা দিন ঠিক করুন। তবে দিনটি কমপক্ষে দু’ সপ্তাহ পরের হতে হবে যেন এ সময়ের মধ্যে বিশেষ ধরনের মানসিক প্রস্তুতি নেয়া যায়) |T = Tell family, friends, and co-workers that you plan to quit smoking (আপনার বন্ধু বান্ধব সহকর্মী ও পরিবারের লোকজনদের কে এই দিনটির কথা জানিয়ে দিন যাতে তারা এ ব্যাপারে আপনাকে সাহায্য করতে পারে ।)A = Anticipate and plan for the challenges you’ll face while quitting (ধূমপান ছাড়লে যা যা ঘটতে পারে তার জনে কি ব্যবস্থা নিতে হবে সে ব্যাপারে পরিকল্পনা থাকা) ।R= Remove cigarettes and other tobacco products from your home, car and workplace (বাড়ি থেকে সকল ধুমপান সামগ্রী বিদেয় করা)T= Talk to your doctor about getting help to quit (প্রত্যাহার লক্ষণের ব্যাপারে কি ব্যবস্থা নিতে হবে সে ব্যাপারে ডাক্তারের পারামর্শ নিতে হবে) ।
  • এছাড়া আপনি ধুমপান ছাড়ার জন্যে আপনাকে আরো যা যা করলে ভাল ফল পাবেন:★ আপনার ইচ্ছেশক্তি দৃঢ় করুন যে, স্বাস্থ্যগত এবং আর্থিক কারণে আপনাকে ধুমপান ছাড়তেই হবে। তরিকা ও ঈমানী শক্তিকে চাঙ্গা করুন। মানুষ অনেক কিছু পারে আর আপনি এই সামান্য বদভ্যাস ছাড়তে পারবেন না, এটা কখনো হতে পারে না।
    ★ ভাবুন আপনার একটা পরীক্ষা আছে, তাহলে আপনি সেই পরীক্ষার জন্য আগে থেকেই পড়াশোনা করবেন। ঠিক সেভাবে একটা দিন ঠিক করুন যার মাঝে ধূমপান ছাড়তে হবে আপনার। তাহলে আপনার মাঝে একটা তাগিদ থাকবে। তবে দিনটা বেশি প্রলম্বিত করবেন না। ঠিক করে রাখুন আপনি কখন কোন্ দিনে ধূমপানের অভ্যাস পুরোপুরিভাবে ছেড়ে দেবেন।

    ★ কোন ধরনের থেরাপি বা মেডিকেশন ছাড়া ধূমপান ছাড়া ঠিক হবেনা। কারণ সিগারেটের নিকোটিন মস্তিষ্কের উপরে অনেকখানি প্রভাব বিস্তার করে দীর্ঘদিনের সেবনের ফলে। হুট করে ধূমপান ছেড়ে দিলে নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে, তাই সিগারেটের বিকল্প কোন ওষুধ বা থেরাপির কথা চিন্তা করতে হবে। যেমন সিগারেটের বিকল্প চুইং গাম, লজেন্স ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। এসবে কাজ না হলে ওষুধ খেতে হবে।

    ★ এমন জায়গায় যাবেন না বা এমন মানুষদেরও এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন যারা আপনাকে ধূমপানের জন্য আগ্রহী করতে পারে।

    ★ ধূমপান ছেড়ে দিলে মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে, সেই মানসিক চাপ কমাতে চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে হালকা ম্যাসাজ করে নিন বা ব্যায়াম করুন।

    ★ বারবার ধূমপান করার ইচ্ছা হলে মনোযোগ অন্যদিকে নিতে চেষ্টা করুন।

    ★ কোথাও ঘুরতে চলে যেতে পারেন। কোথাও যেতে না পারলে বাসায় বসেই গান শুনুন বা সিনেমা দেখুন। এসব করতে না চাইলে ঘরের কোন কাজ করতে পারেন যেমন ঘর পরিষ্কার করতে পারেন বা কাপড় ধুয়ে ফেলতে পারেন। অথবা কোন এক বেলার রান্না করে ফেলতে পারেন।

    ★ একবার ছেড়ে দিলে দ্বিতীয় বার আর ধূমপান করবেন না।

    ★ নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিন। নিয়মিত ব্যায়াম করুন। সেই সাথে প্রচুর পরিমাণ সবুজ শাক-সবজি ও রঙিন ফলমুল খান।

    ★ ধূমপান বন্ধ করার ফলে যে টাকা আপনার সাশ্রয় হবে তা জমা করুন। এক সাথে অনেক টাকা জমা হয়ে গেলে ভাল কিছুতে সেই টাকা খরচ করুন। যেমন ভাল কাপড় কিনুন বা কোন পছন্দের গ্যাজেট কিনতে পারেন নিজের জন্য। দেখবেন মন ভালো লাগছে।

    ★ ধূমপান ছাড়ার সব থেকে জরুরি কথা মনে রাখবেন: ধূমপান আপনি বন্ধু-বান্ধব বা প্রেমিকাকে খুশী করার জন্য ছাড়ছেন তা নয়, বরং আপনার সু-স্বাস্থ্যের জন্যই ছাড়ছেন। নিজের জীবনকে সুন্দর করে গুছিয়ে নিতেই এই পদক্ষেপ তা মাথায় রাখবেন। তাহলেই ধূমপান ছাড়া সহজ হবে।

    এত কিছুর পরেও আপনার ঠোঁটের মাঝে যদি একটি ক্যান্সার স্টিকের অভাব অনুভব করেন, তাহলে একটি ই-সিগারেট নিতে পারে। অনেকে দাবি করেন যে তাদের ধূমপান ছাড়তে এটা সাহায্য করেছে।

  • পরিশেষে জার্মান লেখক কবি ও ঔপন্যাসিক Johann Wolfgang von Goethe এর একটা বিখ্যাত উক্তির কথা জানিয়ে শেষে করতে চাই,Knowing is not enough;We must apply.Willing is not enough;We must start. (শুধু জানলে হবেনা সেটার প্রয়োগ থাকতে হবে; ইচ্ছাটাই যথেষ্ট নয়, সেটা শুরু করতে হবে)                          
  • (তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট)
  • =================================================
  • মাদকাসক্তের ভয়াবহতা ও তার প্রতিকার:মাদকাসক্তের ভয়াবহতা এখন একটা বৈশ্বিক সমস্যা। বাংলাদেশে এই ভয়াবহতা একটা প্রকট সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। যুব সমাজ সহ বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ মাদকাসক্তের কবলে পড়ে তাদের মূল্যবান জীবনকে তিলে তিলে নিঃশেষ করে চলেছে। অনেক তরতাজা সম্ভাবনাময়ী তরুন তরুনীর জীবন অন্ধকারের অতল গহবরে হারিয়ে যাচ্ছে । কারুর জীবন  প্রদ্বীপ ইতোমধ্যে নিভে গেছে এই মরণ ছোবলে পড়ে আবার কারুর জীবন প্রদীপ নিভতে চলেছে। সুতরং এই অবস্থার আশু প্রতিকার আবশ্যক। তরুণ ও যুব সমাজকে এই অবস্থা থেকে উদ্ধারের জন্যে তাদেরকে কাউন্সিলিং করার দায় আমাদেরকেই নিতে হবে। অনেক অভিভাবক এটাকে খারাপ ভেবে  জনসমক্ষে তা প্রকাশ করতে চান না। এটা নিয়ে লুকানোর কিছু নেই। অনান্য রোগবালাইয়ের মত এটা একটা সমস্যাও বটে! সুতরাং চেষ্টা করতে হবে এই সমস্যা সমাধানের। তাই আসুন আমরা এ সম্পর্কে কিছু জরুরী তথ্যমালা জেনে নিই, যেন আমরা সর্বস্তরের সকলে মিলে এই সমস্যা মোকাবেলায় কাজ করতে পারি । আমার এই লেখনী দেখে বা পড়ে যেন স্ব প্রণোদিত হয়ে যুব সমাজ এই পথ থেকে নিজেদেরকে ফিরিয়ে আনতে পারে সে ধরনের কিঞ্চিৎ চেষ্টা করছি মাত্র।দেশ স্বাধীনের পরে আমরা কখনো নানাবিধ মাদকাসক্তের কথা শুনিনি। সে সময় গ্রামে গঞ্জের হাতে গোণা কিছু মানুষ একটু আধুট গঞ্জিকা সেবন করতেন বলে জানা যায় ; আর অভিজাত মানুষেরা মদ পান করতেন বলে শুনেছি, তবে সেটা সাধারণ মানুষের নাগাল থেকে অনেক দুরে ছিল। আজকের দিনে মাদকাসক্তের জন্যে মদ গাঁজা হেরোইন, ইয়াবা, ফেনসিডিল সহ নানান ধরনের সহজলভ্য ড্রাগের সংযোগ ঘটেছে; হাত বাড়ালেই যা ব্যবহারকারীদের হাতে চলে আসছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্যে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে, নইলে আমাদের যুব সমাজ ধ্বংসের শেষ সীমায় পৌঁছে যাবে। তাই মাদকদ্রব্যের ভয়াবহতা এবং এটার প্রতিকার সম্পর্কে আমাদের কিছু জানার দরকার রয়েছে  বৈ কি?
  • ওয়াইন এবং লিকার: আমরা সাধারণভাবে মদ বলতে ওয়াইন কে বুঝে থাকি। কিন্তু সব মদ ওয়াইন নয়। মদকে দুই ভাগ করা হয়ে থাকে একটা হলো ওয়াইন এবং অপরটি লিকার। ওয়াইন এবং লিকারের মধ্যে  মৌলিক ও গুণগত পার্থক্য আছে। ওয়াইন হচ্ছে এক ধরনের এ্যালকোহল জাতীয় পানীয় যা ফলের রস (বিশেষ করে আঙুর ফলের রস) থেকে গাঁজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি। ওয়াইনের মধ্যে কোন ধরনের চিনি, এসিড, এনজাইম বা পুষ্টিকর দ্রব্যাদি মেশানো হয়না।অন্যদিকে লিকার হচ্ছে এক ধরনের এ্যালকোহল জাতীয় পানীয় যা বিভিন্ন লতাগুল্ম বা মসলা জাতীয় দ্রব্যও ফুলের নি্র্যাস থেকে গাঁজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয়। লিকারের মধ্যে  চিনি চিনি মেশানো হয় বলে লিকার কিছুটা মিষ্টি।
  • ড্রাগ: সাধারণভাবে আমরা ড্রাগ বলতে রোগ নিরাময়ের জন্যে ব্যবহৃত ঔষুধ কে বুঝে থাকি। আর চিকিৎসা শাস্ত্র অনুসারে: ড্রাগ হলো সেই ধরনের পদার্থ যা শরীরে প্রয়োগ বা প্রবেশের পরে শারীরিক বিভিন্ন পরিবর্তন সাধিত হয়। ড্রাগের বিভিন্ন ধরনের প্রতিশব্দ হলো: মেডিসিন, মেডিকামেন্ট, নারকোটিক, ইত্যাদি । সত্যি বলতে একই ঔষুধ যদি কিছুদিন ধরে বেশি বেশি সেবন করা যায় তাহলে সেটার প্রভাবে ব্যক্তির মধ্যে মাদাকাসক্ত ভাব চলে আসতে পারে।
  • বাংলাদেশ মাদকাসক্তের জন্যে যা যা ব্যবহৃত হয়: Opium, Heroin, Phensidyl, Tidijesic,  Pethidine,  Cannabis, Ganga, Chorosh, Bhang, Yaba, Tranquilizer, Seduxen, Diazapam, Dexpotent
  •  আফিম মরফিন ও হেরোইনের মধ্যে পার্থক্য: এই তিনটি পদার্থই ব্যবথানাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • আফিম: আফিম হচ্ছে পপি ফলের আঠা হতে তৈরি পদার্থ;
  • মরফিন: খাঁটি আফিম থেকে উদ্ভূত আরেকিটি পদার্থ হচ্ছে মরফিন;
  • হেরোইন : মরফিনের কৃত্রিম সংস্করণ হচ্ছে হেরোইন।
  • মাদকসক্তের কারণ(দৈহিক, মানসিক ও সামাজিক): নানান কারণে মানুষ এই মরণ ছোবলের কবলে    পড়ে। এসবের মধ্যে অন্যতম হলো:
  • # বন্ধু বান্ধবের প্ররোচনায় পড়ে কৌতূহলের বশে
  • # হতাশা এবং নৈরাশ্য
  • # বিদেশী সংস্কৃতির প্রতি দুর্বলতা
  • # দুর্বল মাদক বিরোধী আইন ও সেটার দুর্বল ব্যবহার
  • # কৌতুহল এবং একবার গ্রহনের ফলে অনুভূত উত্তেজনা
  • # দারিদ্রতা
  • # বারবার কোন কাজে অসফলতা
  • # মাদক দ্রব্যের সহজপ্রাপ্তি
  • # বেকারত্ত্ব
  • # পারিপার্শ্বিক পরিবেশ# প্রেমে ব্যর্থ

    # পারিবারিক সমস্যা

    মাদকাসক্তের আগ্রাসন বাংলাদেশ:ঢাকা আহসানিয়া মিশন সূত্রে জানা যায় বর্তমানে শিশুরা ইয়াবা বিক্রির পাশাপাশি ইয়াবা গ্রহণ শুরু করেছে। মাদক নিরাময় কেন্দ্র “আপন” আরেক তথ্য মাদকাসক্ত শিশুরা জানায়(বয়স ১১-১২) যে, ইয়াবা খেলে শরীরে অন্য রকমের অনুভূতি হয়,ফলে চুরি করে ধরা পড়লে শরীরে ব্যাথা  হয় না এবং শরীরে অন্য রকমের অনুভূতি তৈরী হয়। এ কারণে ইয়ারা শিশুদের মধ্যেও জনপ্রিয় হচ্ছে। শিশুরা প্রথমে ইয়াবা ব্যবসা করে পয়সা পায় পরে তাড়া জড়িয়ে পড়ে এই মরণ নেশায়। সম্প্রতি রাজধানীর বনশ্রী, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, মীরপুর, ধানমণ্ডি ও গুলশান এলাকার বিভিন্ন ফ্লাটে এমন কিছু যৌনকর্মীর সন্ধান পাওয়া গেছে, যারা ইয়াবা সেবন করে এবং খরিদ্দারদের ইয়াবা খেতে উদ্বুদ্ধ করে। আরো অভিযোগ আছে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের দুজন সেলিব্রটি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত। এরা চলচিত্রে নবাগত নায়িকা এবং অনান্য এক্সট্রা শিল্পীদের এই ব্যবসায় নিয়ে আসছেন। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে বাংলাদেশে:

    # পুরুষ মাদকাসক্ত : ৯৪ %# মহিলা মাদকাসক্ত : ২১%

  • # অবিবাহিত মাদকাসক্ত : ৬৫%
  • # মাদকাসক্তের মধ্যে ধুমপায়ী: ৯৫%
  • # বন্ধু বান্ধব কর্তৃক উৎসাহী হয়ে নেশাগ্রস্থ: ৮৬%
  • # ফেনসিডিল গ্রহনের হার: ৬৬%
  • # দলীয়ভাবে নেশাগ্রহণে হার: ৬৬%
  • মাদকাসক্তের কবলে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন:
  • # যশোরের জনপ্রিয় দৈনিক গ্রামের কাগজের শার্শা প্রতিনিধি জামাল উদ্দিন (৩৫) কে নৃশংসভাবে খুন  করেছে ১৫.০৬.২০১২ দিবাগত রাত ১১ টায়। মাদক ব্যবসা ও চোরাচালান নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে তাকে খুন করা হয় বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
  • # অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামানের বড় ছেলে ছোট ছেলের হাতে খুন: জনপ্রিয় অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের বড় ছেলে এটিএম কামরুজ্জামান কবির(৩৭) ছোট ভায়ের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হয়। রাজধানীর সূত্রাপুরের দেবেন্দ্রনাথ দাস লেনে নিজ বাসায় গত ১৪.০৩.২০১২ খৃ: তারিখে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ খুনী ছোট ভাই এটিএম খায়রুজ্জামান কুশল কে আটক করলে জানা যায় কুশল একজন মাদকাসক্ত যুবক এবং অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে(দৈনিক প্রথম আলো ১৫.০৩.১২)
  • # বহুল আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা গৌতম রায় হত্যা (২০১০ সালের ১৯ এপ্রিল), প্রতিভাময়ী শিশুপুত্র শুভকে পানির ড্রামে চুবিয়ে হত্যা এবং তার পিতাকে জবাইয়ের চেষ্টা (০৮ জানুয়ারী ২০১১); চালক সহ আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ হত্যা (২৩.০২.২০১১); রাজধানীর শহীদ ফারুক রোডের নিজ বাড়িতে বৃদ্ধ সুফিয়া খাতুন(৭৫), তাঁর ছেলে মিজানুর রহমান(৫৫) ও তাঁর স্ত্রী বীথি রহমানের লোমহর্ষক খুন (৩০.০৯.২০১১); নরসিংদী কলেজ ছাত্র সংসদের জি.এস ছাত্রদল নেতা বিল্লাহ হোসের রনি হত্যাকাণ্ড (১৬.০৩.২০১১) সহ আলোচিত অসংখ্য হত্যাকাণ্ডের সাথে মাদকের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
  • # আশির দশকে ঢা. বি’র প্রিয় মুখ ছিল হ্যাপী আখন্দ, যাকে বলা হতো সংগীতের বরপুত্র। সম্ভবনাময়ী এ শিল্পী গাঁজা, চরস ও ফেন্সিডিলে আক্রান্ত হয়ে ১৯৮৭ সালে মাত্র ২৪ বছর বয়সে চলে যান না ফেরার দেশে
  • # এ দেশের দুইজন শক্তিমান কবি আবুল হাসান ও রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ তাঁদের উজ্জল প্রতিভার দীপ্তি ছড়িয়ে চলে যান মাত্র ৩৫ বছর বয়সে। এখানে কারণ মাদকাসক্তি।
  • # বাংলাদেশের অনন্য সাধারণ গিটারিষ্ট সংগীতজ্ঞ সুধীন দাশের ছেলে নিলয় দাশ। বুক ভবে শ্বাস নিয়ে যে নিলয় গিটার বাঁজিয়ে শ্রোতাদের মন জয় করতেন, তিনি মাদক কে জয় করতে পারেননি। মাত্র ৪৫ বছরে অকাল প্রয়াণ।# আশির দশকে ব্যাণ্ড সংগীতে মিষ্টি পাখি বলা হতো জুয়েল কে । মাত্র ২২ বছরে মাদকের ছোবলে তিনিও পরপারে চলে যান।# পপ সম্রাট আজম খানও এক সময় জড়িয়ে পড়েছিলেন এ মরণ নেশায়।

    # স্বনামখ্যাত এক ফুটবলারও তাঁর ক্যারিয়ার শেষ করেছেন মাদকের ছোবলে।

    # এক সময়ের হার্টথ্রুব তরুণী শিল্পী মাঝে মাদকাসক্ত হয়ে সংগীত জগত হতে সাময়িক বিরতি দিয়ে চিকিৎসা শেষে আবার ফিরে এসেছেন স্বাভাবিক জীবনে।

    # মাদকের ছোবলে শুধু সাধারণ মানুষের সন্তানেরাই শেষ হচ্ছে না, এই আগ্রাসনের শিকার হচ্ছে রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী, এমপি, সামরিক, বেসামরিক, আমলা পরিবারের সন্তানেরাও। শিল্প সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, পেশাজীবীদেরে সন্তানেরা কেউই রেহাই পাচ্ছে না। গোটা দেশের মানুষ আজ মাদক আগ্রাসনের মুখোমুখি।

  • মাদকাসক্তের চিকিৎসা: চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় মাদকাসক্তি একটা নিরাময় যোগ্য শারীরিক অবস্থা। তবে এটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া এর মধ্যে আছে:  =Detoxification, = Withdrawal symptoms removal treatment, = Motivation, = Counseling, = Social &  Professional Rehabilitation
  • মাদকাসক্তের চিকিৎসায় বাংলাদেশ:মাদকাসক্তের চিকিৎসায়  বাংলাদেশে নেই কোন অভিন্ন নীতিমালা বা গাইডলাইন। ফলে সুযোগ নিচ্ছে এর পুনর্বাসনকারীরা ফলে কেউ নিচ্ছে আধ্যাত্মিক চিকিৎসা; আবার কে্উ বলছে ব্যয়ামের মাধ্যমে এটা নিরাময় সম্ভব। কিন্তু ডাক্তারী পরিভাষায় এটা কে বলা হচ্ছে “ Chronic relaunching brain diseases” অর্থাৎ দীর্ঘ মেয়াদী এবং বারবার হতে পারে এমন একটা মস্তিষ্কের রোগ। ফলে এরা বলছে এটা কোন রোগ না, ফলে“এসো নিজেরা করি” পদ্ধতি প্রয়োগ করে এটা নির্মূল করা সম্ভব নয়।এসব রোগ নিরাময় কেন্দ্র যারা পরিচালনা তারা আগে বেশীর ভাগই নেশাগ্রস্থ ছিলেন। রোগীকে টর্চার করার, মাদক সরবরাহ করার ও নিষিদ্ধ ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করার বিস্তর অভিযোগ আছে অনেক পুনর্বাসন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে । তাই চিকিৎসার ব্যবপারে অবশ্যই একটা জাতীয় নীতিমালা হওয়া উচিৎ। বেসরকারীভাবে মাদকাসক্তি নিরাময়ে ব্যয়বহুল চিকিৎসার ভার সাধারণ মানুষের সামর্থ্যরে বাইরে।মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ তত্বাবধানে Central Drug Addict Treatment & Rehabilitation Center নামে ঢাকার তেজগাঁয়ে ২৫০ বেডের চিকিৎসা সেবা থাকলেও সেখানে প্রায়ই জায়গা পাওয়া যায় না। তাছাড়া ঢাকার বাইরে এদের আরো ৬ টি চিকিৎসা কেনদ্র আছে : এগুলো হলো:  (CDATC, Chittagong(5 Bed Only); CDATC, Rajshahi (5 Bed Only); CDATC, Khulna (5 Bed Only); ,CJDATC, Rajshahi; CJDATC, Jessore; CJDATC, Comilla) এখানকার চিকিৎসা বেশ নাজুক।মাদকাসক্তের সংখ্যা এ দেশে এতটাই বেড়েছে যে, এখনই সরকারী সকল হাসপাতালে মাদকাসক্তদের রোগ নিরাময়ের জন্যে বিশেষ একটা সেল বা ওয়ার্ড খোলার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে সদাশয় সরকার কে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
  • নেশা ছাড়তে ইচ্ছে শক্তিই যথেষ্ট: রিহ্যাব কেন্দ্রের তথ্য মতে যারা নিজেরা নিজেদের মাদকাসক্তের কূফল নিয়ে আসে তাদের নিরাময় সহজ হয় আর যাদের রেসকিউ করে আনা হয় তাদের সুফল কশ। গড়ে রিহ্যাব কেন্দ্র হতে গড়ে ৫০% রোগী ভাল হয়। 
  • মাদকাসক্ত পরিহারের সাময়িক অসুবিধা:মাদকাসক্ত ব্যক্তিটি যখন তার এই মরণ নেশাকে ছাড়তে যাবেন তখন প্রাথমিকভাবে তার সাময়িক কিছু শারীরিক ও মানসিক অসুবিধা হলেও এ ব্যাপারে তাকে সঠিকভাবে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে খুব সহজেই  একজন মাদকাসক্ত কে বিপথ থেকে সুপথে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তবে সাময়িক এই অসুবিধার বিষয়টি গড়ে ৭ দিনের মধ্যেই স্বাভাবিক হয়ে আসে বলে ঈজঊঅ কর্তৃপক্ষ হতে জানা গেছে।
  • আপনার সন্তান ও প্রিয়জনের প্রতি লক্ষ্য রাখুন:আপনার সন্তান বা আপনার পরিবারের প্রিয় মানুষটি কখন কোথায় যাচ্ছে, কাদের সাথে মেলামেশা করছে এটার গতিবিধির উপরে লক্ষ্য রাখুন এবং সে ব্যাপারে ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
  • মাদকবিরোধী আন্দোলনে যুব সমাজের ভূমিকা:
  • মাদকাসক্তের সাথে যুব সমাজের একটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ জড়িত আছে বিধায় এ ব্যাপারে সচেতন ও মাদকবিরোধী যুব সমাজকে এগিয়ে এসে এটা প্রতিরোধ ও প্রতিকারের ব্যাপারে বলীয়ান  হতে হবে।
  • মাদকাসক্ত নিরাময়ে ছাত্র ও শিক্ষক সমাজ সচেতকদের ভূমিকা: মাদকাসক্ত এখন আমাদের দেশে একটা সামাজিক ও জাতীয় সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে তাই এই সামাজিক ও জাতীয় সমস্যাকে প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্যে ছাত্র ও শিক্ষক সমাজকে এগিয়ে যেতে হবে এবং আধ মরাদের ঘা মেরে বাঁচাতেই হবে। শিক্ষকদের সহায়তায় এ ব্যাপারে ছাত্ররা অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে।
  • আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কে শক্তিশালীকরণ: 
  • সীমান্ত এলাকা ও আকাশপথে মাদক আসছে। মাদক সরবরাহ বন্ধের পাশাপাশি এর সংগে জড়িত মুনাফালোভী মাফিয়া চক্রের উপরে আঘাত হানতে সরকারকেই উদ্যোগী হতে হবে। এক্ষেত্রে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী কে তাদের সন্তানদের কথা চিন্তা করে গভীর দেশ প্রেম নিয়ে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামতে হবে। একই সংগে মাদক ব্যবসার মাফিয়া চক্রকে যেকোন মূল্যে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবী। র‌্যাব পুলিশ আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ইবাদতের মতো কঠোর এ্যাকশনে না গেলে সরবরাহ বন্থ করা যাবে না। তেমনি মাদক ব্যবসায়ী ও তাদের ছড়িয়ে দেয়া হাজার হাজার ডিলার কে গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। সরকারের হাত অনেক লম্বা, আইনের হাত অনেক শক্ত। আমরা চাই সরকার আইন দিয়ে মাদক সম্রাটদের হাত ভেঙে দেবেন।  মাদকে থাকলে মেধাবী প্রজন্ম থাকবে না। মেধাবী প্রজন্ম থাকলে মাদকে কে নির্মূল করতে হবে। আমরা মেধাবী প্রজন্ম চাই, মাদক নয়। মাদকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ। (তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট হতে সংকলিত)
  • ==========================================
  • (৯) আদর্শবান ছাত্র ছাত্রীই পারে পরিশীলিত দেশ জাতি ও সমাজ সমাজ গঠন করতে:
  • প্রিয় ছাত্র ছাত্রী ভাই ও বোনেরা,তোমাদের প্রতি আমরা অনেক অনেক শুভাশীষ ও শুভকামনা রইলো। তোমরা কোমলমতি ছাত্র /ছাত্রী  দেশ ও জাতির সম্পদ; আজ ও আগামীর ভবিষ্যৎ। তোমাদের সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের উপরই নির্ভর করে দেশ জাতি সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়ন এবং সাফল্য। ছাত্রজীবন মানুষের জীবন গঠনের প্রস্তুতিকাল। এই সময়েই তোমাদের জীবনের আদর্শ কাঠামো তৈরি করতে হবে, যাতে তোমরা ভবিষ্যতে দেশ ও জাতির প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারো। তোমরা আগামী দিনের কর্ণধার। তোমাদের চেতনায় থাকবে মনুষ্যত্ববোধের দীক্ষা, মন মানসিকতা হবে সুন্দর; আচার আচরণ হবে নম্র, ভদ্র আর বিনয়ী । ছাত্র-ছাত্রীদের আসল পরিচয় ঘটে তাদের শারীরিক ও অবয়ব গঠনে। তোমাদের মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত থাকা চাই আদর্শিক ছাপ কিন্তু আজ দুর্ভাগ্য চেপে বসেছে আমাদের ললাটে। বর্তমানে অনেক স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গামী ছাত্রদের পোশাক-পরিচ্ছদ, চাল-চলন দেখে বোঝাই যায় না এরা আদর্শ শিক্ষার্থী। ছাত্রছাত্রীরা আজ তাদের নিজেদের সংস্কৃতি ভুলে নিমজ্জিত হতে চলেছে বিদেশী অপসংস্কৃতির দিকে। তোমরা হবে উদ্যমী ,জ্ঞানোম্মুখ, সদা সচেতন, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন, অনুসন্ধিৎসু এবং জ্ঞান অর্জনের নেশায় উন্মুক্ত ও  উদ্বিগ্ন। অজেয়কে জয় করে, অন্ধকারকে দূর করার প্রবল স্পৃহায় উন্মুক্ত এমন শিক্ষার্থীরাই হবে দেশ ও জাতির কান্ডারী।পৃথিবীর বুকে উঁচু শিখরে আসন লাভ করার একমাত্র সম্মোহনী শক্তি হলো শিক্ষা। তাই তোমরা শিক্ষার প্রতি হবে শ্রদ্ধাশীল। আদর্শ-অনাদর্শ, ভাল-মন্দ নির্ণায়ককে সদা নিয়োজিত থাকবে। তোমরা হবে হাস্যোজ্জ্বল ও মিশুক স্বভাবের অধিকারী; একে অপরের পরিপূরক এবং ছাত্রদের বন্ধনে পরস্পর পরস্পরের খুব কাছাকাছি থাকবে। দেশ-বিদেশের যে কোন প্রান্তে সংঘটিত হওয়া যে কোন মানবো বিরোধী বা জাতি, ধর্ম, বর্ণ বিদ্বেষী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার ভূমিকা পালন করবে।
  • # তোমাদের প্রধান দায়িত্ব পড়ালেখায় মনোনিবেশ করা। কেন না Knowledge is power (জ্ঞানই শক্তি) কিন্তু তোমাদের এই জ্ঞানার্জন শুধু পাঠ্য বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। বিভিন্নভাবে জ্ঞান অর্জন করে প্রকৃত সত্য অন্বেষণ করতে হবে।
  • # পড়ালেখার সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ উদ্দেশ্য হলো পূর্ণাঙ্গরূপে আদর্শ মানুষ হওয়া। কেউ পড়ালেখা করলো কিন্তু তার মাঝে মনুষ্যত্ব খুঁজে পাওয়া গেলনা, তাদের মানবিক আচার আচরণ হলো প্রশ্নবিদ্ধ, তাহলে প্রমাণিত হবে যে, তোমরা  পড়ালেখা করছে ঠিকই কিন্তু সেটা পূঁথিগত বিদ্যা ছাড়া আর কিছুই না। এমন শিক্ষা থেকে দুরে থাকবে।
  • # জীবনের অপর নাম সময়। তাইতো ছাত্রজীবন থেকেই তোমরা সময়ের প্রতি সচেতন থাকবে এবং প্রতি সেকেণ্ড সময়ের সদ্ব্যবহার করবে।
  • # সুস্থ মন ছাত্র জীবনের সফলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধূলা ও ব্যায়াম করা প্রয়োজন।
  • # শিক্ষকের মর্যাদা ও সম্মান প্রতিষ্ঠায় তোমরা সবসময় তৎপর ও সচেতন থাকবে। শিক্ষক মাত্রই সম্মানী ব্যক্তি। তাই শিক্ষকদের সম্মান করা আবশ্যক।# মাতা-পিতা, গুরুজন সবাইকে শ্রদ্ধা করবে।

    # আগামী দিনের সমৃদ্ধ জাতির কারিগর আর নেতৃত্বদানকারীর ভূমিকায় থাকবে তোমরা। তাই তোমাদের মাঝে দেশাত্মবোধ জাগরণ সৃষ্টি করতে হবে। বাস্তব জ্ঞানের আলোকে দেশের প্রতি কর্তব্যের আহবানে সাড়া দিয়ে তোমরাই পারবে দেশাত্মবোধ তথা দেশপ্রেমের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে সর্বপ্রকার ত্যাগ স্বীকার করতে। তোমরা চিরকালই প্রভাতের সূর্যের মতো উদীয়মান চির নবীন, বর্ষার নব কিশলয়ের মতো চির সবুজ। তোমরা সব সময় আত্মমানবতার কাজে নিয়োজিত থাকবে। তোমরা সকল দুর্যোগের সময় দুঃখী মানুষদের পাশে দাঁড়াবে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করতে হবে। তোমরা চারটি গুরু দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করবে,  

    (১) স্রষ্টার প্রতি দায়িত্ব,

    (২) মাতাপিতার প্রতি দায়িত্ব,

    (৩) নিজের প্রতি ও

    (৪) দেশের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য।

    # সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ  বিষয়  হলো বন্ধু নির্বাচন। সাথী বা সহপাঠী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। বন্ধু বা বান্ধবী হিসেবে তাদেরকেই নির্বাচন করা উচিত যারা নিজের সত্ত্বা বিকাশে নিজেকে ব্যক্ত করার প্রয়াসে জীবনে চলার পথে সত্যের ও ন্যায়ের অনুসন্ধানী। কেননা সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। আমরা যখন দেখি সহপাঠি ছাত্রের হাতে ছাত্র খুন হচ্ছে, একজন ছাত্র সহপাঠী আরেক ছাত্রের শ্লীলতাহানি করছে।

    # মাদকাশক্তির ভয়াল থাবা ছাত্রদেরকে নিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারের অতল গহবরে।

    # ডিজিটালাইজের সাথে সম্পৃক্ততার অজুহাতে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা ইন্টারনেটের অন্ধকার পথে পা বাড়িয়ে নিজেরদের ভবিষ্যত কে কন্টকাকীর্ণ করে তুলছে। আমরা এই অবস্থার অবসান চাই এবং সেসব অবসানের সোপান রচিত হবে তোমাদের হাত দিয়েই।

    # সবকিছু মিলিয়ে তোমাদেরকে আদর্শ ছাত্রজীবন গড়তে হবে। সকল পদক্ষেপ ছাত্রজীবনেই নিতে হবে। যাতে তোমরা এই সমাজ, দেশ ও জাতিকে একটি সুন্দর নেতৃত্ব দিতে পারো। সদা মনে রাখবে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের “ছাত্রদলের গান”’র  সেই অমীয় বাণী:

    “মোদের  চক্ষে জ্বলে জ্ঞানের মশাল

    বক্ষে ভরা বাক

    কণ্ঠে মোদের কুণ্ঠাবিহীন

    নিত্যকালের ডাক”

    পরিশেষে তোমাদের তরে প্রখ্যাত কবি কামিনী রায়ের রচিত দু’টি পংক্তির উদ্বৃত্তির আহবান জানিয়ে শেষ করছি,“এমন জীবন হবে করিতে গঠন, মরণে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভূবন”।

    (তথ্যসূত্র: স্ব- প্রণোদিত ও ইন্টারনেট হতে সংগৃহীত)

    ==========================================

  • (১০) প্রকৃত শিক্ষালাভে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ছাত্র ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে কতিপয় গঠনমূলক পরামর্শ:
  • প্রকৃত শিক্ষা মানুষকে উন্নত করে, মানুষের হৃদয়ের সুকুমার বৃত্তিকে প্রস্ফুটিত করে, আত্মিক উৎকর্ষতা সাধন করে। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষা মানুষকে বৈষয়িক জ্ঞানের পাশাপাশি মানসিক বিকাশ সাধন করে থাকে। তাই শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। তবে শিক্ষা হতে হবে সুশিক্ষা। সুশিক্ষা ব্যতিরেকে শিক্ষার প্রকৃত সুফল লাভ সম্ভব নয়।উচ্চ মাধ্যমিকে যারা ভাল ফল লাভ করে তাদের চোখে মুখে একরাশ স্বপ্নিল সুখ বহমান থাকে। পছন্দমত উচ্চশিক্ষার পাদপৃষ্ঠে ভর্তির অপেক্ষায় দিন গুজরান করে । সবারই ইচ্ছে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তি হয়ে ভবিষ্যতে একজন পেশাজীবী চিকিৎসক বা প্রকৌশলী হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠা করা। এমন প্রত্যাশা আজ থেকে ৫০/৬০ বছর আগে পাশ করা শিক্ষার্থীদের মধ্যেও লক্ষ্য করা যেত। মনে করা হয় এসব পেশাজীবীরা কর্মজীবনে অনেক ভাল কিছু করতে পারবেন, তাই উচ্চাশিক্ষার বিষয়ে তাদের এই উচ্চাশা। যদিও দিন বদলের সাথে সাথে সে অবস্থারও অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এখন পাশ করা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়াররা আর আগের মত সব সময় ভাল চাকুরি পান না। আবার চাকুরি ক্ষেত্রে দেশের মধ্যে অর্থ খ্যতি যশ ও সম্মানের দিক থেকে অনেক বেশি ভাল অবস্থানে রয়েছেন সরকারের প্রশাসন, পুলিশ ক্যাডার সহ আরো কিছু ক্যাডার সার্ভিসের সদস্যরা। প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডার সহ সাধারণ ক্যাডারে বেশিরভাগ চাকুরি পেয়ে থাকেন সাধারণ বিশ্ববিদ্যালেয় সাধারণ বিষয়ে অনার্স পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীবৃন্দ। এতসব জানার পরেও কেন যেন সেই জন্ম জন্মান্তর থেকে সব ভাল ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে স্বপ্রণোদিত একটা ক্রেজ তৈরি হয়ে আছে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়া।বাস্তবতার নিরিখে অবস্থাদৃষ্টে সকল উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের তরে আমার সবিশেষ আহবান তাঁরা যেন বিসিএস এর জেনারেল ক্যাডারের চাকুরির জন্য সর্বত্রভাবে চেষ্টা করেন কারণ বিসিএস জেনারেল ক্যাডারের(প্রশাসন ক্যাডার, পুলিশ ক্যাডার, ফরেন এফেয়ার্স ক্যাডার, কাস্টমস্ ক্যাডার, ট্যাক্স ক্যাডার ইত্যাদি) চাকুরির সুযোগ সুবিধা ও ক্ষমতা এখনো অনেক বেশি আকর্ষণীয় অন্ততঃ পেশাজীবীদের চাকুরির তুলনায়।অন্যদিকে এখন আমরা বিদ্যুতিন সময়ের মধ্যে দিয়ে পৃথিবী নামক গ্লোবাল ভিলেজে বসবাসরত, তাই চাকুরি ব্যবসা এবং ব্যক্তিগত যোগাযোগের জন্য গ্লোবাল ভিলেজের অন্যতম অনুসঙ্গ তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান রাখা এখন শিক্ষার্থীদের জরুরী। গ্লোবাল ভিলেজে বসবসরাত সকল আমজনতা একটা ভাষায় কথা বলে সেটা হলো ইংরেজী ভাষা, তাই বাংলা বা ইতিহাসে পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীদেরকেও ইংরেজী না জানলে তাকে অনেক ক্ষেত্রে ভীষণভাবে পিছিয়ে পড়তে হবে।চাকুরি ক্ষেত্রে এখন একটা বড় যোগ্যতা হলো সদ্য পাশ করা চাকুরি প্রার্থী কতটা স্মার্ট এবং কতটা নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারে!
    নৈতিকতা এবং বিভিন্ন স্পর্শকাতর পরিবেশে নিজেকে কতটা অভিযোজন করতে সক্ষম সেটা একজন চাকুরি প্রার্থীর বিশেষ যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত এবং ভর্তিচ্ছুক সকল শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আমার বিশেষ আহবান:(১) যে বিষয়েই পড়াশুনা করো না কেন জেনারেল বিসিএস পরিক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার মানসিকতা এখনি তৈরি করতে চেষ্টা করো;(২) ভাল করে ইংরেজী জানতে চেষ্টা করবে;(৩) কম্পিউটার এবং তথ্য প্রযুক্তি প্রযুক্তি বিষয় একটা ভাল দখল রাখতে চেষ্টা করবে;

    (৪) পোশাক আশাকে চলনে বলনে নিজেকে স্মার্ট হিসেবে গড়ে তুলবে;

    (৫) বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে মঞ্চে দাঁড়িয়ে সুন্দর কথা বলতে পারাটাও একটা যোগ্যতা। নিজেকে সেভাবে গড়তে চেষ্টা করবে;

    (৬) নীতি নৈতিকতা ও আদর্শ মানুষের কদর সর্ব ক্ষেত্রে অনেক বেশি। তাই নিজেকে সেভাবে গড়ে তুলবে। ধর্ম মানলে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলবে, তবে নিজেকে কখনো ধর্মান্ধ করো না, তাহলো বিপদ আসতে পারে প্রতি পদে পদে;

    (৭) যেকোন অবস্থায় যেকোন প্রতিকূল পরিবেশে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর মত অভিযোজিতা নিজের মধ্যে তৈরি করবে।

    প্রিয় শিক্ষার্থী, তোমাদের তরে এ আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে অর্জিত বিশেষ অনুরোধ। আর অভিভাবকদেরকে বলবো আপনি আপনার সন্তানকে এভাবেই একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার সুপরামর্শ প্রদান করুন, নিশ্চিত সুফল পাবেন।

    ==================================================