সুখী জীবনের রূপরেখা

মানুষের সব আশা আকাঙ্খা তো এক জনমে পূরণ হয়না,তাই আমাদের যার যা যা কিছু আছে সেটা নিয়ে নিজেকে সুখী থাকার চেষ্টা করার কোন বিকল্প নেই।এই বিশ্ব ব্রাহ্মাণ্ড তথা মহাজগতের বিশালত্বের তুলনায় মানুষের জীবনটা একেবারে তুচ্ছ! বস্তুত: জীবন শুরু করতে না করতেই যেন বিদায়ের ঘন্টা বাজতে শুরু করে।, প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে শরীর ও মনে বয়সের ছাপ প্রলম্বিত হয়; এরপর সব শেষ আর ভাগ্য খারাপ হলে ভবলীলা সাঙ্গ হতে পারে আরো আগে। তাই অতি ছোট্ট এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে সবারই তার নিজের মতে করে সুখী থাকতে হবে। সবচে বড় কথা এ পৃথিবীতে আমরা যতদিন বেঁচে আছি, এই পৃথিবীর রূপ রস গন্ধে আপ্লুত হচ্ছি ততদিন সেটা দৃশ্যমান অবস্থায় ভোগ করতে পারছি; কিন্তু মারা গেলে যা হবে সেটা অদৃশ্য, কতকটা কল্পনা এবং ধর্মীয় বিশ্বাস নির্ভর, তাই আমি মনে করি যতদিন শ্বাস ততদিন আশ। আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ প্রতি সেকেণ্ড সময়কে শ্রদ্ধা করে সেটার সদ্ব্যবহারের মাধ্যে নিজেদের স্ব স্ব জীবনকে সুখী করে তোলা।

 মানব জীবন বড়ই বিচিত্র। প্রত্যাশা প্রাপ্তির বিষয়গুলো বেশ জটিল। কার জীবনে কখন কিভাবে কি ঘটবে সেটা একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউ বলতে পারে না। সব সময় যোগ্যতা দক্ষতা আর অভিজ্ঞতা দিয়ে জীবনের সব প্রাপ্তি অর্জন সম্ভব নয়্ ; চেষ্টা করলে মানুষ সব কিছু অর্জন করতে পারে না। আর নাস্তিকদের ভাষায় ভবিষ্যতে কী হবে সেটা প্রাকৃতিক নিয়ম। তবুও মানুষ ভালভাবে বাঁচতে চায়, সুন্দরভাবে তার অনাগত দিন কাটাতে চায়। আমি এখানে আপনাদের জন্যে একটা কল্পিত জীবনের রূপরেখা তুলে ধরছি, এটাকে আপনি আপনার মত করে কাস্টমাইজ করে নিন, ভাল ফল পাবেন।

কল্পিত সুখী জীবনের রূপরেখা:

# হতাশা নিরাশা দুঃখ বেদনা ছিল আছে এবং থাকবে,যতদিন পর্যন্ত মানব মস্তিষ্কের নিউরনের গঠন আপাত পরিবর্তন না হয়। এটাকে দুর করা যাবেনা , শুধু নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। তাই দুঃখবোধ ও হতাশা নৈরাশ্য থেকে ভাল থাকার জন্যে নিজে উপায় বের করুন এবং সৃষ্টিকর্তার সাহায্য প্রার্থনা করুন।

# টাকা পয়সা নিয়ে হ্যাঁ পিত্তেশ করে লাভ নেই, কারণ অর্থ সম্পদও ভাগ্যে না থাকলে হয়না। আবার ভাগ্যের জোরে বা বিশেষ ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়ে অযোগ্য কেউ রাতারাতি অঢেল বিত্ত বৈভবের মালিক বনে যান, সেটার ব্যাখ্যা কি আমার জানা নেই।মানুষের জীবনে টাকা দরকার আছে, তবে অঢেল টাকা মানুষকে অমানুষ করে তোলে, কোন সন্দেহ নেই।সুতরাং সহজে বৈধ উপায়ে যতটুকু অর্থযোগ হলো সেটা নিয়েই ভাল থাকুন, মানসিক শান্তি পাবেন।আবার বেশি টাকা পয়সা হলে ভাল মানুষকে অমানুষ হতে দেখা যায়;

 # সকল কাজে সৃষ্টিকর্তার সাহায্য কামনা করুন, যেন সকল বালা মুসিবত থেকে দুরে থাকা যায়।

# পরসমালোচনা নয়, আত্ম সমালোচনায় বিভোর থাকুন।

# অলসতা পরিহার করে সর্বদা সৎ চিন্তা, সৎ কাজ ও সদাচারের মধ্যে বিভোর থাকা যায়।

# পরিমিত আহার নিদ্রা ও স্বাস্থ্যচার মেনে চলুন, মন ভাল থাকবে;

# জীবনটা খুব ছোট তাই দৃশ্যমান পৃথিবীর প্রতি সেকেণ্ড সময়কে শ্রদ্ধা জানান;

# অহেতুক ক্রোধ মানুষকে ক্ষতি করে, ব্যক্তির ব্যক্তিত্ববোধ ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে তাই সর্বদাই উচিৎ ক্রোধকে সম্বরণ করা;

# যে কাজ করতে হবে বা যে কাজ করতে বাধ্য সেখানে হা হুতাশ না করে ঠাণ্ডা মাথায় সেটা করলে মানসিক শান্তি পাওয়া যাবে;

# নিজের মর্মকথা নিজের মধ্যেই লালন করুন!

# পরনির্ভরতা কমিয়ে যতটা সম্ভব আত্ম নির্ভর হতে চেষ্টা করুন;

#  জ্ঞান আহরণ করে নিজের দুর্বলতাকে সবলতায় রূপান্তর করুন! জ্ঞানের কদর সব সময় ছিল আছে এবং থাকবে;

# নিজেকে জানার ও বোঝার চেষ্টা করুন। প্রতিরাতে ঘুমের আগে আপনার সারাদিনের কর্মকথা আচরণ বিচরণ সঠিক না বেঠিক ছিল সেটা নিয়ে নিজের মূল্যায়ন করতে বসুন। নিজের সমালোচনা আগে করুন, তারপরে অন্যের সমালোচনা।

কর্ম কথা আচরণ বিচরণে সর্বদা মনে রাখুন: উচিৎ-অনুচিৎ; ভাল-মন্দ,পাপ-পূণ্য, ধর্ম-অধর্ম ইত্যাদি। দেখবেন আপনি আর খারাপ কাজ করতে পারছেন না;

# কৃপণতা নয়, মিতব্যয়ী হোন এবং এ ব্যাপারে মহান দার্শনিক সক্রেটিসের সেই অমোঘ বাণী মনে রাখুন,“How many things I can do without(এমন কিছু আছে যা ছাড়াই আমি চলতে পারি)”।

# কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে নিজের আবেগকে প্রশমিত করুন; অবত আবেগী হয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিলে সেটা ভুল হতে পারে;

# নিজের অপরাধবোধ বা ক্রটি স্বীকার করে সংশ্লিষ্টদের কাছে স্যরি বলুন। প্রিয়জনদের কাছে ছোট হওয়াতে কোন দোষ নেই।

# কোন বিষয়ে আপনার কোন বিশেষ বদ্ধমূল ধারণা থাকলেও বেশিরভাগ মানুষ সে ব্যাপারে ভিন্ন মতামত দিলে নিজের একগুয়েমী পরিহার করুন! একগুয়েমী কোন ভাল বিষয় নয়;

# অন্যের কথা মনোযোগ সহকারে শুনুন এবং তার ব্যাপারে সুচিন্তিত মতামত প্রদান করুন, ঐ ব্যক্তিটির কাছে আপনি প্রিয় হয়ে যাবেন। আমারা নিজেদের নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকি যে, অন্যের কথা শোনার সময় কোথায়? এটা কোন ভাল আচরণ নয়;

# নিজেকে জাহির করতে যেয়ে অহেতুক মিথ্যা বলার অভ্যাস ত্যাগ করুন। কিছু মানুষ আছে লম্বা লম্বা গল্প করে নিজেকে জাহির করতে চেষ্টা করে। তবে আশপাশের মানুষজন সেটা ঠিকই বুঝে যায়, কেবল বোঝে না ঐ মানুষগুলো।

# সংসারের এক ঘেয়েমী কাটিয়ে উঠার জন্যে নিজের প্রিয়জনদের নিয়ে কোথাও বেড়িয়ে আসুন, এতে করে মন ভাল থাকবে পরিবারের সবার।

# প্রিয়জনদেরকে বিশেষ দিনে (জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকি, ভালবাসা দিবন, নববর্ষ, ঈদ ,পূজা ইত্যাদি) কিছু না কিছু উপহার সামগ্রী প্রদান করুন।তাতে করে পারস্পারিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হবে।

# দাম্পত্য সমস্যা হলে নিজেরা মিটিয়ে ফেলতে চেষ্টা করুন। ঘরের সমস্যায় অন্যদেরকে না আহবান করাই ভাল। সমস্যা সমাধানের অযোগ্য হলে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সম্পর্কের ইতি টানুন। যতক্ষণ পর্যন্ত পারা যায় কোন দাম্পত্য সম্পর্কের ইতি না টানাটাই শ্রেয়।

# আপনার জীবনের উদ্ভূত যেকোন সমস্যা নিরসনের জন্যে ঠাণ্ডা মাথায় উপায় অন্বেষণ করুন; প্রয়োজনে নির্ভরশীল মানুষের পরামর্শ গ্রহণ করুন। ঠিক একটা না একটা উপায় পেয়ে যাবেন।

# যারা বিয়ে শাদী করেননি পা্রতপক্ষে পাত্রপাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্ক হবেন। প্রেমের ব্যাপারে অতিশয় সাবধান! কারণ ভবের হাটে বেচাকেনাতে প্রকৃত সত্য সামনে আসেনা, স্ব স্ব চরিত্র উন্মোচিত হয়না, ফলে প্রেমের বিয়েতে দ্রুত সমস্যার সৃষ্টি হয়।

# পর সমালোচনা করার আগে নিজের সমালোচনা করুন;

# নিজের ভাল ও মার্জিত পোশাক, টিপটপ আবাসস্থল-কর্মস্থল আপনার মর্যাদা বাড়ানোর সাথে সাথে আপনার মনকে প্রফুল্ল রাখবেই।এদিকটা লক্ষ্য রাখবেন।

# মন খারাপ হলে ভাল পোশাক পরে প্রকৃতির মাঝে কতক্ষণ একাকী হাঁটাহাঁটি করুন.মনটা ভাল হয়ে যাবে।

# কোথায় কেমন আচরণ করবেন, কি কথা কিভাবে বলবেন সে ব্যাপারে চোখ কান খোলা রেখে বিবেককে চাঙ্গা রাখুন;

# বাইরের খাবার ও পানি গ্রহণের আগে নিজের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করুন; খাবারের জন্যে শরীর খারাপ হলে সেটার দায় আপনাকেই বহন করতে হবে;

# নিজের কোন বদভ্যাস(ধুমপান, মদ্যপান, নেশা গ্রহণ) থাকলে সেটা পরিহার করুন।মনে রাখবেন যেকোন নেশা ছাড়ার জন্যে আপনার ইচ্ছে শক্তিই যথেষ্ট। নেশা ছাড়া কষ্টকর কিন্তু অসম্ভব নয়;

# নিজের জ্ঞান বৃদ্ধির জন্যে বই ও পত্র পত্রিকা পড়ুন; নিজেকে সব সময় আপডেট রাখুন। মনে রাখবেন জ্ঞানী মানুষের আলাদা একটা কদর আছে।

# কোন প্রতিজ্ঞা করে সে ব্যাপারে রিজিড থাকবেন না, কারণ যে কোন সময় সেটা ভঙ্গ করার বিশেষ প্রয়োজন হতে পারে;

# কারুর কান কথায় পাত্তা দিবেন না, আগে যাচাই বাছাই করুন। কান কথা অনেক সময় নানান ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে;

# কেউ কোন ব্যাপারে মনোগত সমর্থন চাইলে, আপনার কোন ক্ষতি না হলে সাথে সাথে সেটাতে সমর্থন দিয়ে ফেলুন; তাতে ঐ ব্যক্তিটির কাছে আপনার গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে;

# কেউ কোন কথা আগ্রহ সহকারে শোনাতে চাইলে সেটা আগ্রহ সহকারে শুনুন নইলে প্রিয়জন কষ্ট পাবেন;

# মনে রাখবেন মানুষ যত ক্ষমতাশালীই হোক না কেন এক জনমে ব্যক্তির সবকিছু পূরণ হবার নয়; তাই নিজের ইচ্ছেকে অবদমন করুন;

প্রত্যাশাকে শূণ্যের কোটায় নামিয়ে আনুন, নইলে কষ্ট পাবেন;

# মনে রাখবেন ছোটখাট কর্ম কথা ও আচরণ দিয়ে অনেক মানুষকে খুশি করা যায়;

# টাকা পয়সা ধার দেয়া ভাল তবে সে ব্যাপারে যাকে ধার দিচ্ছেন ,তার ব্যাপারে ভালমত জেনে নিয়ে টাকা পয়সা ধার দিন;ধার শোধ দিতে না পারার সম্ভাবনা থাকলে এমন পরিমাণ টাকা দিন, যাতে সেটা শোধ না দিলেও আপনার বড় ধরনের কোন আর্থিক ক্ষতি না হয়;

# কিছু আছে স্বত:সিদ্ধ পাপাচার ও ডাহা অন্যায় বা অপরাধ যেমন খুন খারাপী, ব্যভিচার, ঠাণ্ডা মাথায় কাউকে ঠকানো বা প্রতারণা করা ইত্যাদি। আর কিছু আছে আপেক্ষিক অপরাধবোধ বা পাপাচার, যেটা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়। পাপ পূণ্যের আপেক্ষিকতা নিয়ে নিজের বিবেককে কাজে লাগান।চলচিত্র দেখা পাপ কিনা, টিভি দেখা যাবে কিনা, ফটো তোলা ধর্মীয় আইনসিদ্ধ কিনা এ ধরনের বিতর্কিত বিষয়গুলো থেকে আলাদা থাকার জন্যে নিজের বিবেককে কাজে লাগান।

# আপনার সকল পরিকল্পনার মধ্যে একটা জায়গা ফাঁকা রাখুন; সেটা রেখে দিন  মৃত্যুর জন্যে কারণ মৃত্যু অবশ্যাম্ভাবী।আস্তিক নাস্তি কযা কিছই হোন না কেন মৃত্যুর জন্যে প্রুস্তুত থাকুন।

# যেকোন কঠিন পরিস্থিতির জন্যে মানসিক প্রস্তুতি রাখুন কারণ মানুষের জীবনে যেকোন সময় যেকোন ধরনের খারাপ খবর আসতে পারে।

# মনে রাখবেন মানব অশান্তির মূল কারণ হলো: “রাগ ক্ষোভ দুঃখ বেদনা মান অভিমান অভিযোগ অনুযোগ, হতাশা নিরাশা ইত্যাকার বিষয়গুলো”। যতটা সম্ভব এসব থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে চেষ্টা করুন।

# পরিশেষে আমার আমার নিজের প্রস্তৃতকৃত একটা বিশাল আকারের একটিমাত্র বাক্যের শান্তির সনদ মেনে চলতে চেষ্টা করুন, কামিযাব হবেন:

“জীবনের সকল চাওয়া পাওয়া, আশা আকাঙ্খা কে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ওপর তথা ভাগ্যের উপরে ছেড়ে দিয়ে, তাঁর গুণ কীর্তন ও সাহায্য কামনার দ্বারা, দৈনন্দিন জীবনে উদ্ভূত দুঃখ বেদনা, হতাশা নিরাশা ও কঠিন বাস্তবতাকে সহজভাবে মেনে নিয়ে, ঠাণ্ডা মাথায়, সুচিন্তা, সুকর্ম ও সুদৃষ্টিকে পুঁজি করে, নিজ প্রাপ্তি কে অধিক মনে করে, পর সমালোচনা ব্যতিরেকে আত্ম সমালোচনায় বিভোর থেকে, পর নির্ভরতা ও অলসতা পরিহার করত:, পরিমিত আহার নিদ্রা ও ব্যয়ের মাধ্যমে, স্বাস্থ্য সচেতন থেকে, সর্বদা সুশৃঙ্খল ও পরিচছন্নতার সাথে পরিকল্পিত কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখার মাঝেই পার্থিব জীবনের প্রকৃত শান্তি নিহিত”।

(তথ্য সূত্র: ১০০% স্বপ্রণোদিত)